ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৌদ্ধ বিহারে হামলা মামলার সাক্ষীদের হুমকি-ধমকি

কারাগারে বসেই জামায়াত নেতা তোফায়েলের নাশকতার ছক

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১১ মার্চ ২০১৬

কারাগারে বসেই জামায়াত নেতা তোফায়েলের নাশকতার ছক

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা মামলার আসামি পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অপসারিত চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা তোফায়েল আহমদ কারাগারে বসেই নাশকতার ছক কষছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে বিএনপি-জামায়াত এবং রোহিঙ্গা আরএসও জঙ্গীদের লাইন পড়েছে কক্সবাজার কারাগারে। যারা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত, যারা অগ্নিসন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত, এদের অনেকে তোফায়েলের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশে তিনদিন ধরে কারাগারে যাওয়া-আসা করছে বলে সূত্রে জানা গেছে। রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা ছাড়াও বিভিন্ন মামলার আসামি ভয়ঙ্কর এ জামায়াত নেতার সঙ্গে সাক্ষাত ও পরামর্শ নিয়ে জামায়াতী ও আরএসও জঙ্গীরা কক্সবাজার ও পার্বত্য বান্দরবান জেলায় বড় ধরনের নাশকতার ছক তৈরি করছে বলে জানা গেছে। নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে একাধিক সিএনজি ট্যাক্সি রিজার্ভ করে সোম, মঙ্গল ও বুধবার তাকে দেখার বাহানায় কক্সবাজার জেলা কারাগারে এসেছিল অন্তত ১০ জামায়াত-বিএনপির নেতা ও আরএসও ক্যাডার। কারাগারে তোফায়েলের সঙ্গে জামায়াতী ও রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সাক্ষাতের বিষয়টি ঘিরে নাইক্ষ্যংছড়িতে বিভিন্ন কানাঘুষা শুরু হয়। এ ব্যাপারে বিহিত ব্যবস্থা নিতে প্রধান কারারক্ষক বরাবর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় অনেকে অভিযোগ প্রেরণ করেছেন। অভিযোগে জানা গেছে, জানুয়ারিতে পুলিশ ওই জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠালেও তার আজ্ঞাবহ ব্যক্তিদের সেখানে ডেকে নিয়ে কারাগারে বসে নাশকতা সৃষ্টির কলকাঠি নাড়ছে তোফায়েল। জামায়াত-শিবিরকে সংগঠিত করছে সাবেক শিবির ক্যাডার চাকরিচ্যুত জনৈক মনোয়ার। রামু বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ ও হামলা ঘটনার মামলায় আদালতে সাক্ষী গ্রহণ শুরু হলে কক্সবাজার জেলা জজকে কৌশলে নিমন্ত্রণ দিয়ে নাইক্ষ্যংছড়িতে নিয়ে যান আসামি তোফায়েল আহমদ। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রেরিত রিপোর্ট ও তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেলা জজ মোঃ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারকে ওএসডি করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করেছে। নাশকতা ও সরকার বিরোধী কর্মকা-ের হোতা তোফায়েলের অনুসারিরা রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা মামলার তালিকাভুক্ত সাক্ষীদের সঠিক সাক্ষ্য না দেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। রামু উপজেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সাক্ষী আমির হোছাইন হেলালী বলেন, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডাররা সুসংগঠিত হয়ে সাক্ষীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। বিএনপি সদস্য নুরুচ্ছফা ও পাকিস্তান-আফগানিস্তান ফেরত বহু মামলার পলাতক আসামি শওকত আলমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়ায় বৌদ্ধ বিহারে হামলা মামলার সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়ার আগে গত দুর্গাপূঁজার সময় প্রথম সারির দুই রোহিঙ্গা জঙ্গী মৌলভী আবু ছালেহ ও ইব্রাহিম আতিকের সঙ্গে জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের নিয়ে জামায়াত নেতা তোফায়েল বান্দরবান ও কক্সবাজারে দুটি ম-পে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে চেয়েছিল। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় বড় ধরনের নাশকতা থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশ ও জাতি। ধৃত জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ আরএসও সহ দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের জঙ্গীদের মদদ দেয়ার প্রমাণও পেয়েছে সরকারের বিশেষ সংস্থা। এছাড়াও সরকারী চেয়ারে বসে কিছুদিন আগে উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারী টাকা আত্মসাত করতে চাইলে বাধা দেন ইউএনও। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ প্রেরণ করেও ফায়দা লুটতে পারেনি এ জামায়াত নেতা। সরকারী টাকা অপচয়ে বাধাদানকারী ইউএনওকে সরাতেও ব্যাপক তদ্বির চালিয়ে ব্যর্থ হন তিনি। স্থানীয় ৫৩ জনের স্বাক্ষর জাল করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উচ্চপর্যায়ে অভিযোগ প্রেরণ করেন তোফায়েল। সম্প্রতি সরেজমিন তদন্ত করে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ৫৩ জনের মধ্যে কেউই অভিযোগ সম্পর্কে জানে না এবং ওসব স্বাক্ষর তাদের নয় বলে জানিয়েছেন।
×