ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর ক্ষমতায়ন

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১১ মার্চ ২০১৬

নারীর ক্ষমতায়ন

রাষ্ট্রক্ষমতায় নারী নেতৃত্বের বিচারে বিশ্বের এক নম্বরে আছে বাংলাদেশ। হার্ভার্ড ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চমকপ্রদ এই তথ্যটি দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। নারী নেতৃত্বে জার্মানির অবস্থান ১২তম, যুক্তরাষ্ট্রের ৬৪। সূচকে সার্বিক নারী উন্নয়নে ১৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪ নম্বরে। ভারতের অবস্থান ১০৮। পাকিস্তানের ১৪৪। অথচ ২০০৬ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১ নম্বরে। গত ১০ বছরে বিশ্বের আর কোন দেশ নারী উন্নয়নে এতটা এগোতে পারেনি যতটা পেরেছে বাংলাদেশ। এ দেশের পোশাকশিল্প, কৃষিকাজ, শিক্ষা, ক্রীড়াঙ্গন, ব্যবসাবাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি সর্বোপরি রাজনীতি প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীর অবদান অসামান্য। সুতরাং নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে গর্ব করতেই পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ৮ মার্চ বাংলাদেশেও সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে বিশ্ব নারী দিবস। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, সভা-সেমিনার, আলোচনাসভা, পতাকা মিছিল, সম্মাননা প্রদান সর্বোপরি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে দিনটি। এবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ : স্টেপ ইট আপ ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি।’ অর্থাৎ নারী পুরুষ সমান সমান। নারী দিবস উপলক্ষে ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ পাইলট-ক্রুসমেত ১৪ নারী পরিচালিত একটি ফ্লাইট চালনা করে নয়াদিল্লী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো পর্যন্ত। আরও একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয় ২০ নারীর মাধ্যমে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের রিজেন্ট এয়ার ওয়েজও। ৫ তরুণী বৈমানিক নিয়ে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের আকাশসীমা। এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গ জয়েও বাংলাদেশের নারী অসামান্য অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছে। এরপরও বলতেই হয় যে, আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। বিশ্বের ১৭৮টি দেশের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) দেখিয়েছে যে, ২০১৫ সালে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ কম। এই হার ২০ বছর আগের চেয়ে মাত্র দশমিক ৬ শতাংশ কম। অর্থাৎ, ১৯৯৫ সালে নারীর অগ্রগতি যা হয়েছে, তা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে দেখা যায়, ২০১০ সালে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ যেখানে ছিল ৩৬ শতাংশ সেখানে ২০১৩ সালে তা নেমে এসেছে ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশে। শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কেন কমছে, তা নিয়ে কোন গবেষণা হয়নি। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সব কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ সদস্য পদে নারীকে রাখা বাধ্যতামূলক করলেও অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়। নারীর অধিকার রক্ষায় অনেক আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। সুতরাং ‘...বন্ধ করো না পাখা’।
×