ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপূর্ব কুমার কুণ্ডু

দ্য গবর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১০ মার্চ ২০১৬

দ্য গবর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর

অর্থই অনর্থের মূল- কথাটা বানী চিরন্তনী। বাস্তবতা হলো, ব্যর্থ জীবনে ঘুরে দাঁড়াবার জন্য অর্থ প্রয়োজনীয়। আরও অধিক প্রয়োজন দুর্নীতিগ্রস্থদের নীতিগত চরিত্রের মুখোশ মুখে লেপ্টে রাখার রসদ যোগায়। অনেকটা সেভাবেই বেকার ও ঋণগ্রস্ত রাশিয়ান যুবক ইভান দুর্নীতিগ্রস্থদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটালেন এবং শহরের নামীদামী ব্যক্তিরা কীভাবে অর্থ ছড়িয়ে দুর্নীতির মুখ ঢাকলেন তা নিয়েই নিকোলাই গোগেলের নাটক ‘দ্য গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর’। এস এম সোলায়মানের অনুবাদে, আহমেদুল কবিরের নির্দেশনায়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনে অ্যান্ড ড্রামা ক্লাবের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে নাটক ‘দ্য গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর’ মঞ্চস্থ হল ৬ মার্চ। জর্জ তার বিচারালয়ের পাশের কামরা পল্ট্রি চাষে বায়না দেয়। সেপাই মাতালের মদ কেড়ে খায়। ব্যবসায়ী যে কোন ব্যবসাতেই ভেজাল মেলান। পোস্টম্যান গ্রাহকের চিঠি পাওয়ামাত্র খুলে পড়েন। ডাক্তার রোগীর ঔষধ কালো বাজারে বিক্রি করেন। রমণীরা স্বামীর সমস্ত অর্থ খরচ করেন গ্লামারের পেছনে। মেয়র সবকিছু জেনেও না জানার ভান করেন। পক্ষান্তরে বেকার যুবক প্রস্তুতি নেন আত্মহত্যার। এমনই একসময় রাজধানী থেকে মেয়রের কাছে টেলিগ্রাম আসে, যে কোন মুহূর্তে যে কোন বেশে ইন্সপেক্টর আসছেন পরিদর্শনে। রাতারাতি অবস্থা বদলে যায়। বেকার, ঋণগ্রস্থ এবং আত্মহত্যা করতে চাওয়া ইভানকে মেয়র ও তার পার্র্ষদ ছদ্মবেশী ইন্সপেক্টর ভেবে বসেন। নিজেদের দুর্নীতির কথা লুকাতে ইভানের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। মাঝ থেকে পাকা অভিনয়ের মাধ্যমে ইভান ইন্সপেক্টর সেজে সবার কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে মেয়রের কন্যাকে বিয়ের ঘোষণা দিয়ে শহরমুখী যাত্রা করে। কিন্তু গ্রাহকের চিঠি খুলে পড়ায় অভ্যস্ত পোষ্টম্যানের কল্যাণে ভবঘুরে ইভানের আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে। ঘোষনা দিয়ে কৃতিত্ব এবং আমিত্ব জাহিরের এই দোদুল্যমান সময় বরাবরের মতো নেপথ্য থেকে সফলভাবে সামনে তুলে এনেছেন আহমেদুল কবির। একঝাঁক অধিক ইংলিশ-আধো বাংলার ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে বলিষ্ঠ বাংলা উচ্চারণে, দেহভঙ্গিমায় নাটকীয়তা এনে, অভিনয় মাত্রাবোধের সীমানা টানটান রেখে, বর্হিরাঙ্গ-অন্তরাঙ্গ মেলবন্ধনের মঞ্চসজ্জ্বা করে পুরো নাটকটা দ্রুতলয়ের গতিতে উপস্থাপনা করালেন তিনি। কে বলবে মাত্র সতের দিনের প্রস্তুতি! ইভানরূপী জুনায়েদ কিংবা মেয়ররূপী মাহিকে কি চাইলেও ভোলা যায়! অথবা মারিয়ারূপী কান্তি কিংবা অ্যানারূপী মিমের কথা। ইভানের যে চরিত্রের ভিন্নতা অথবা মেয়রের রসবোধ, সে তো দর্শক সারির উল্লাসেই প্রমাণিত। এ নাটকের অনুবাদক এস এম সোলায়মান আজ প্রয়াত, জীবনসঙ্গী-শিল্পসঙ্গী অভিনেত্রী নির্দেশক রোকেয়া রফিক বেবী পারিবারিক কারণে এখন আমেরিকায়। তাদের দেখা হল না। দেখলে মানতেন, অতীতের ঐতিহ্য পুনরুত্থিত হয়ে যেভাবে নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদের কৃত কর্মের বির্নিমাণ হল আহমেদুল কবিরের দু’ডানায়, ঢাকা পদাতিকের ছায়া ফিরে এল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরম আঙ্গিনায়।
×