ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্লোগানওয়ালা

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১০ মার্চ ২০১৬

স্লোগানওয়ালা

তিনি যা গান, তাই-ই আবার অন্যদের স্লোগান। অনেকে বলেন, তিনি নিজেই একটা গান। ১৬ মার্চ গানওয়ালা কবির সুমনের জন্মদিন। সাক্ষাতকারে নতুন কাজের প্রসঙ্গ, নতুন চিন্তা, ব্যস্ততা কেন মনে হলো ‘শঙ্কর মুদি’ ছবির সংগীত পরিচালনা করা যায়? আমাকে প্রথম ছবির কথা বলেছিলেন কৌস্তুভ রায়। তারপর পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় আসেন। আমার সঙ্গে কথা বলেন এবং চিত্রনাট্য দেখান। অসামান্য চিত্রনাট্য! তারা মূলত তিনটি গান চেয়েছিলেন। একটা ‘জন হেনরি’। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের রচনা। বলেছিলেন, গ্লোবালাইজেশনের ওপরে কোনও গান হতে পারে কি না। অবশ্যই হতে পারে। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কথা আমি তাদের বলেছিলাম। যে ওটা তো ক্লাসিক! আমরা নতুনভাবে কিছু করতে পারি কি না। অন্য গানটা একজন মেয়েকে নিয়ে, যিনি নিজেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন বাধ্য হয়ে। তাছাড়া ছবিতে একজন বহুরূপীর চরিত্র রয়েছে। রুদ্রনীল করছে চরিত্রটা। ব্রিলিয়ান্ট! নতুন কোনও গায়ককে দিয়ে গাওয়ালেন? ছবিতে একটা দৃশ্য আছে, যে শাসক দলের নেতার বাড়িতে মদের পার্টি হচ্ছে। দোলের দিন। সেখানে একটা মেয়ের হস্তান্তর হয়। তার আত্মবিক্রয় কিন্তু বাধ্য হয়ে। সেখানে একটা গান ব্যবহার করেছি, যেটা মেয়েটির লিপে নয়। অ্যাম্বিয়েন্সে বাজবে। মুশকিলে পড়েছিলাম, কে গাইবে, সেটা নিয়ে। গানটা কোনও প্রেমের গান নয়, ইন্টিমিন্টির গান নয়, কায়দাবাজির গান নয়! কাঁচা গান। ‘কোমর দুলিয়ে নাচো, শরীর দোলাও’। এবং ভারতবর্ষে এমন কোনও গায়ক নেই, যিনি এই গান গাইতে পারতেন বিদীপ্তা চক্রবর্তী ছাড়া! অনেকে হয়তো অবাক হবেন। গানটা একটু স্লার করে গাইতে হতো। ভয়ঙ্কর তেতো গান। অশ্লীল। শুনে তো সব বলছে, ‘কবীরদা এমন একটা গান লিখল কী করে’! আসলে সকলেই ভাবে, আমি খালি সাম্যবাদের গান আর প্রতিবাদের গানই লিখি! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সভায় এই ক’দিন আগেই ‘জন হেনরি’ গাইলেন...। নবীন প্রজন্ম হয়তো জানবে না, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ‘জন হেনরি’র কথা। কিন্তু আমরা যারা বুড়ো কিংবা আধবুড়ো, তারা সকলেই জানি। অনিকেতকে বলেছিলাম, যে নতুন ‘জন হেনরি’ যদি করা যায়। কেন হঠাৎ জন হেনরির হাতুড়ির প্রশ্নটা আসছে? পুরো ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরিটা ইন্টারনেট থেকে জেনে নিয়ে তারপর গানটা বানালাম। দেখলাম, সত্যিই দাঁড়িয়ে গিয়েছে! আমার খুব গর্বের জায়গা জন হেনরি। দেশে ছাত্র-আন্দোলনের গরম হাওয়া...সমর্থন জানাচ্ছেন তরুণ প্রজন্মকে? ভীষণ আনন্দ হচ্ছে! মনে হচ্ছে, অনেকদিন পর সব ঠিক আছে। একটা জ্যান্ত জীবনের লক্ষণ দেখলাম মনে হচ্ছে। যাদবপুরের সভায় দেখলাম, ওরা কিন্তু আনন্দ করছে। গম্ভীর মুখে প্রতিরোধ জানাচ্ছে, এমন নয়। আমি তো ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খুব খোলামেলা কথা বলি। ওদের সেদিন বললাম, তোমরা নাকি ইদানিং আর ‘আমি তোমায় ভালবাসি’ বলো না, ‘তোর জন্য চাপের মধ্যে আছি’ বলো! শুনে হাসাহাসি করছে ওরা। তখন বললাম, তুইতোকারি প্রেম বন্ধ হোক, তার চেয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়া ভাল! রসিক কিন্তু ওরা। খুব হাসছিল! সামনে তো বিধানসভা ভোট...! ভোট তো কী! ভারতে যেভাবে ভোট হয়, সেভাবেই হবে! তৃণমূল ক’টা আসন পাবে বলে মনে হয়? এসব নিয়ে ভাবা ছেড়ে দিয়েছি। ইন্টারেস্টেড নই। সিপিএম তো কোণঠাসা...কংগ্রেসের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ জোট করতে হচ্ছে...। সিপিএম কোন কোণে যে ঠাসা, আমি ঠিক জানি না! ব্যক্তিগতভাবে সিপিএম-এর চেয়ে নোংরা কাউকে দেখিনি। শুনুন, বিজেপি হল শত্রু। স্পষ্ট শত্রু। বিজেপি জানে, হয় এই ‘কোবরে সুমন’ থাকবে, নয় আমি থাকব। সে কিন্তু আমার বাড়িতে ঢুকে আমার বড় মেয়েকে হাত করার চেষ্টা করবে না। সিপিএম করবে। তার মহিলা সমিতি, অমুক সমিতি দিয়ে ঢুকবে! ভয়ঙ্কর। রাজনীতি নিয়ে কি এই মুহূর্তে একেবারেই ‘ডিজইলিউশন্ড’? রাজনীতি এখন এমন একটা জায়গায় চলে গেছে, যেখানে আত্মমর্যাদা একেবারেই নেই। ভদ্রতা বজায় রাখা মুশকিল! আমার কাছ থেকে আদায় করে নিতে পারত দেশ। নিল না। বামপন্থীরাও নিতে পারতেন। মমতারাও নিতে পারতেন। আমাকে ওরা বলতেই পারতেন, সপ্তাহে এক-দু’দিন দেড় ঘণ্টা ওয়ার্কশপ করাও। বা ক্লাস নাও। দেশ তো ব্যবহারই করতে জানে না! এসব কোথায় হবে, না রাজনীতি করো! ধুৎ! তাহলে কি সংগীত পরিচালনাতেই মন দেবেন? কোথায় আর এত সংগীত পরিচালনা করছি! একটা জাতীয় পুরস্কার তো ঘরে উঠল! ধ্যাত্তেরিকি! ওটাকে এত বড় করে দেখছেন কেন! জাতীয় পুরস্কার অনেকেই পায়। ওর শর্ত-টর্ত কিছু জানেন! বঙ্গবিভূষণ? ওটা মমতা আমাকে খুব ভালবাসেন বলে দিয়েছেন। বেশ করেছেন। বাকিরা পাত্তা দিত না। উনি দিয়েছেন। যে টাকাটা পেয়েছি, ওটা দিয়ে এই যে পিয়ানোটা দেখছেন (ঘরের মধ্যে, কি-বোর্ড), সেটা কিনেছি। গত ডিভোর্সে আমার সব চলে গেছে। ‘এইচএমভি’র রয়্যালটি আমার প্রাক্তন স্ত্রী পান। একটা বাড়ি দিয়ে দিয়েছি। মাথাটা কেটে দেওয়া বাকি ছিল! পয়সা তো নেই মশাই! ফলে এই আমার ‘বঙ্গবিভূষণ’ শোভা পাচ্ছে (হাসতে হাসতে কি-বোর্ড দেখিয়ে...)। সূত্র : এবেলা
×