ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধর্মশালায় ক্রিকেট ধার্মিকের অভাব!

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১০ মার্চ ২০১৬

ধর্মশালায় ক্রিকেট ধার্মিকের অভাব!

স্পোর্টস রিপোর্টার, ধর্মশালা থেকে ॥ ছত্রিশ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে কলকাতা-দিল্লী হয়ে হিমাচল প্রদেশের কাংরা জেলার ধর্মশালায় পৌঁছানো গেছে। এর মধ্যে ৩৫ ঘণ্টাই বিরক্তিই মিলেছে। বাকি ৩ ঘণ্টায় যে অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখার মিলেছে। তাতে সেই ভ্রমণক্লান্তি, বিরক্তি সবই যেন নিমিষে শেষ হয়ে গেছে! সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ফুট উচ্চতার ধর্মশালায় আসপাশে যে শুধু সুউচ্চ পাহাড় দাঁড়িয়ে। আর সেই পাহাড়জুড়ে বরফ। গাছের মাঝে মাঝে বের হয়ে আসা মেঘ কণাগুলো যেন শরীর স্পর্শ করতে চাইছে। আর হিমশীতল বাতাসের সঙ্গে আছে ঠা-াও। যা শরীরে কাঁপন ধরাচ্ছে। সকালে একটু শীত থাকে। দুপুরে তা কমে যায়। গরমও লাগে। আবার রাতে শীতে হাড় কাঁপে। এমন যখন অবস্থা, এখানেই আবার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল খেলছে টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। যে বাছাইপর্ব উতরাতে পারলে সুপার টেনে খেলবে মাশরাফিবাহিনী। শুধু বাংলাদেশ নয়, এখানে আছে হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ওমান দলও। কিন্তু কী আশ্চর্য্য! ধর্মশালায় যেন ক্রিকেট ধর্মেরই অভাব শুধু! এখানে ক্রিকেট নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য নেই। ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ আছে বলেও মনে হয়নি। বাংলাদেশ-হল্যান্ডের ম্যাচেই তার প্রমাণ। আইসিসির লোকজন, সাংবাদিক, বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা ছাড়া ২০০৩ সালে তৈরি হওয়া মোট ২৩ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে দর্শক মোটে ৩ হাজারও হয়নি। এর মধ্যে বাংলাদেশের দর্শকই অর্ধেকের বেশি। দেশ থেকে আসা এবং মুম্বাই, চেন্নাই, দিল্লীর কিছু ক্রিকেটপ্রেমীকও খেলা দেখতে এসেছেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য অবশ্য ধর্মশালায় যে সুন্দর জায়গাগুলো আছে, তা ঘোরা। এর সঙ্গে ক্রিকেট খেলা দেখাটা অপশনাল হিসেবেই রাখা হয়েছে। স্টেডিয়ামের গ্যালারি যেন খাঁ খাঁ করেছে। ধর্মশালায় যাকেই জিজ্ঞেস করা হয়েছে, এখানে বিশ্বকাপ হচ্ছে, কেন উন্মাদনা নেই? উত্তর একটাই মিলেছে, ‘ক্রিকেট নিয়ে মেতে থেকে কী হবে? তারচেয়ে নিজের কাজকর্মই করা ভাল।’ ধর্মশালায় দালাইলামার বাসস্থান। তারা ধর্ম-কর্ম নিয়েই ব্যস্ত। ভারত যত ক্রিকেট পাগল দেশ হোক, ধর্মশালায় সেই ক্রিকেট নিয়ে কোনভাবেই পাগলামি নেই। ধর্মশালায় পাগলামি তো আইসিসিরও নেই। এখানে দু একটি মাত্র বিলবোর্ড দেখা গেছে। যেটাতে বোঝা যাচ্ছে, বিশ্বকাপ হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো আসর হবে, অথচ যে পরিমাণ বিলবোর্ড দেখা যাচ্ছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে আইসিসির কোন মাথা ব্যথাই নেই। কলকাতা, দিল্লীতেও যতদূর ঘোরা গেছে সেখানেও খুব বেশি আলোড়ন দেখা যায়নি। কারণ, একটি থাকতে পারে। এখন যে খেলাগুলো হচ্ছে সেটি প্রথম রাউন্ড বা বাছাইপর্ব হচ্ছে। সুপার টেন শুরু হবে ১৫ মার্চ থেকে। তার আগে হয়ত উত্তেজনার আঁচ ঠিকমতো গায়ে লাগবে। ধর্মশালাকে ভারত সরকার ‘স্মার্ট সিটি’ হিসেবেই বেছে নিয়েছে। মাত্র প্রায় ৩০ কিলোমিটারের এরিয়ায় প্রায় ৫৪ হাজার মানুষের বসবাস। ধর্মশালার ম্যাকলয়েজগঞ্জই বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত। এর কারণ, দালাইলামার বাড়ি সেখানে। এছাড়া বাকি এলাকাগুলো সেভাবে পরিচিত হয়ে উঠেনি। এখানে বরফে ঘেরা পাহাড়, গাছপালার ডাল-পালা বেধ করে সূর্য্যরে রশ্মি, সেই ডাল-পালা বেধ করে মেঘের আনাগোনা সবার মনকে ছুঁয়ে যায়। সেই সঙ্গে বাগসুনাথ, ধর্মকোট, নাদ্দি, কোতওয়ালী বাজার এখানকার মানুষের আনাগোনার স্থান। পর্যটকরাও এসব স্থানেই বেশি আসে। কিন্তু একটি স্থানেই যেন অপরূপ রূপে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বের সেরা সুন্দর স্টেডিয়ামগুলোর একটি থাকার পরও এখানে ক্রিকেটটা সেভাবে সবার মনের গহীনে ঢুকে যেতে পারেনি। বিসিসিআইয়ের সচিব অনুরাগ ঠাকুর যদি এখানটাতে বিশ্বকাপের খেলা না দিতেন, তাহলে হয় তো ক্রিকেট নিয়ে সেই রকমভাবে খানিক উত্তেজনাও তৈরি হতো না। এখানে যে খেলাও ঠিকমতো হয় না। এর আগে সর্বসাকল্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুটি ওয়ানডে ও একটি টি২০ ম্যাচ হয়েছে। এবার বাছাইপর্ব, সুপার টেন ও মহিলা ক্রিকেটারদের ম্যাচসহ ১০ ম্যাচ হবে। যখন এসিসির কার্যালয় মালয়শিয়া থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তখন ধর্মশালাতেই এর স্থান করা হয়। এ স্টেডিয়ামে প্রতি বছরই আইপিএলে পাঞ্চাবের দুটি করে ম্যাচ হয়। ধর্মশালা স্টেডিয়ামে প্রাপ্তি বলতে আইপিএলই। তা না হলে শেষ যে ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক খেলা হয়েছে, এরপর টি২০ বিশ্বকাপের খেলা হচ্ছে। আইপিএলও ২০১৩ সালের পর আর হয়নি। তাই ক্রিকেট নিয়েও কারও মধ্যে বিশেষ আগ্রহ নেই। অথচ বাংলাদেশে একেবারেই ভিন্ন আবহ। ক্রিকেট খেলা যে স্টেডিয়ামেই হোক, উপচে পড়া দর্শক মিলে। মাঠে ঢোকার লম্বা লাইন দেখা যায়। খেলা শুরুর চার ঘণ্টা আগেও থাকে বিশাল লাইন! খেলা শুরু হওয়ার পরও অনেকে স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেন না। সেøাগান, চেঁচামেচি, গান-বাজনাতো নিত্যনৈমত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ধর্মশালায় এর ছিটেফোঁটাও নেই। মানুষের মধ্যে খেলা নিয়ে কোন আকর্ষণই যে নেই। খেলা নিয়ে কেউ কোন কথাই বলেন না।
×