ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

আপীল নিষ্পত্তিতে এবার রাজাকার কমান্ডার মোবারকের পালা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১০ মার্চ ২০১৬

আপীল নিষ্পত্তিতে এবার রাজাকার কমান্ডার মোবারকের পালা

বিকাশ দত্ত ॥ এবার আপীল চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে রাজাকার কমান্ডার মোঃ মোবারকের পালা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত রাজাকার কমান্ডার মোঃ মোবারক হোসেনকে ২০১৪ সালের ২৪ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, জোরপূর্বক আটক রাখা, নির্যাতন, লুটপাটের অভিযোগে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। মোবারক এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করেছেন। খুব শীঘ্রই চূড়ান্ত আপীল শুনানিতে এই মামলাটি কার্যতালিকায় আসবে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ২২টি মামলায় ২৬ জনকে দ- প্রদান করেছে। অন্যদিকে আপীলে এ পর্যন্ত ৭টি মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মীর কাশেম আলী, জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর দুই পক্ষের করা রিভিউ আবেদন এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আর সর্বশেষ রায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর সর্বোচ্চ সাজা বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হলে দ- কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ। শুনানি চলার মধ্যেই জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এর মধ্যে কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। মোবাকরকে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, জোরপূর্বক আটক রাখা, নির্যাতন, লুটপাটের ৫টি অভিযোগের মধ্যে অভিযোগ-১ এ তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- এবং অভিযোগ-৩ এ যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। অন্য তিনটি অভিযোগ-২, ৪, ৫ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিকে খালাস প্রদান করা হয়। ২০১৪ সালের ২৪ নবেম্বর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’ সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। অপরদিকে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হবার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২২টি মামলায় ২৬ জনকে দ- দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১৯ জনকে মৃত্যুদ-, ১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-, এক জনকে ৯০ বছরের কারাদ- ও ৫ জনকে আমৃত্যুকারাদ- প্রদান করা হয়। যাদের দ- দেয়া হয়েছে তারা হলেন, জামায়াতের সাবেক রুকন বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ (মৃত্যুদ-), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা (যাবজ্জীবন কারাদ-) (আপীলে মৃত্যুদ-, পরবর্তীতে রায় কার্যকর), জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (মৃত্যুদ-) আপীলে আমৃত্যু কারাদ-, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (মৃত্যুদন্ড-) আপীল বিভাগেও মৃত্যুদ- বহাল, পরবর্তীতে রায় কার্যকর। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম (৯০ বছরের কারাদ-) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (মৃত্যুদ-), পরে রায় কার্যকর। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (মৃত্যুদ-), পরে তার দ- কার্যকর। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম (আমৃত্যু করাদ-) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, বদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং মোঃ আশরাফুজ্জামান খান (মৃত্যুদ-), জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদ-), আপীলেও মৃত্যুদ- বহাল, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলী (মৃত্যুদ-) আপীলেও মৃত্যুদ- বহাল, বিএনপি নেতা নগরকান্দা পৌর মেয়র জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকার (মৃত্যদ-), আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোঃ মোবারক হোসেন (মৃত্যুদ-), জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার (মৃত্যুদ-), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম (মৃত্যুদ-) জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান (মৃত্যুদ-) ও জাতীয় পাটির আব্দুল জব্বার (আমৃত্যু কারাদ-)। মাহিদুর রহমান এবং আফসার হোসেন চুটু (আমৃত্যু কারাদ-), হাসান আলী (মৃত্যুদ-), ফোরকান মল্লিক (মৃত্যুদ-), কসাই সিরাজকে মৃত্যুদ- ও খান আকরামকে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। সর্বশেষ আতাউর রহমান ননি ও ওবায়দুল হক তাহের মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে যারা পলাতক আছেন তাদের মৃত্যুদ- রায়ই বহাল থাকবে। তারা আর আপীলের সুযোগ পাবেন না।
×