ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্জুরি কমিশনের লেখক সংবর্ধনা

বিদেশী ভাষার মৌলিক ও গবেষণা গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদের হার বাড়াতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১০ মার্চ ২০১৬

বিদেশী ভাষার মৌলিক ও গবেষণা গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদের হার বাড়াতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বাংলা মাধ্যম থেকে পড়ে এসে এক রকম বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ইংরেজী মাধ্যমে পড়তে হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা আশানুযায়ী ফল করতে পারেন না। উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। এ সমস্যা দূর করতে বিদেশী ভাষায় লেখা মৌলিক গ্রন্থ এবং গবেষণা গ্রন্থের বাংলা ভাষায় অনূদিত করার হার বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের করতে মাতৃভাষা প্রধান শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলনের পাশাপাশি অনুবাদ গ্রন্থ এবং মৌলিক গ্রন্থের প্রকাশনা বৃদ্ধি করতে হবে। একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের জন্য মৌলিক গ্রন্থের লেখন ও পঠনের বিকল্প নেই। বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এই প্রথমবারের মতো দেশের খ্যাতিমান ৭১ জন লেখককে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সম্মানিত লেখক, শিক্ষক ও গবেষকদের সম্মাননা ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন। লেখকদের মধ্যে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম এবং অধ্যাপক আয়েশা বেগম। ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কমিশনের রিসার্চ সাপোর্ট এ্যান্ড পাবলিকেশন ডিভিশনের পরিচালক মোঃ সামছুল আলম। অনুষ্ঠান শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, জ্ঞানের বিকাশে বই পড়ার বিকল্প নেই। আমরা তুলনামূলকভাবে কম পড়ি কিন্তু বেশি কথা বলি। আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়ার অভ্যাস খুবই কম। জ্ঞান চর্চা, গবেষণা এবং নতুন জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি। এটি করতে আমাদের পড়াশোনার পরিধি বাড়াতে হবে। গ্রন্থ রচনাও বৃদ্ধি করতে হবে। লেখক ও গবেষকদের আরও নতুন নতুন বিষয়ে বই লেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় মানের দিকে লক্ষ্য করেন না। মুনাফা লাভ এবং ব্যবসায়িক প্রসারই তাদের মূল লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুনাফা চলবে না, সার্টিফিকেট বিক্রি চলবে না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানের দিকে নজর দেবেন না। তাদের বৈধতা বাতিল করা হবে। সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। সবাইকে বিচার করতে হবে তাদের মেধা ও শিক্ষার মান নিয়ে। দেশ যেভাবে এগিয়ে চলছে, সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন কোন শিক্ষকই লাখ টাকার কম বেতন পাবেন না। আমাদের শিক্ষা পরিবার একটি বৃহৎ পরিবার। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। স্বাগত বক্তব্যে কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, বুয়েটের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীরা আশানুরূপ ফল করতে পারছেন না। এর জন্য শিক্ষার মাধ্যম অনেকটা প্রভাব রাখে। উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। এ জন্য বিদেশী ভাষায় লেখা মৌলিক গ্রন্থ এবং গবেষণা গ্রন্থের বাংলা ভাষায় অনূদিত করার হার বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের করতে মাতৃভাষা প্রধান শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলনের পাশাপাশি অনুবাদ গ্রন্থ এবং মৌলিক গ্রন্থের প্রকাশনা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইউজিসির প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের উচ্চশিক্ষা উন্নয়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাবিধ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা স্তরে পাঠ্যবই ও মৌলিক অনুবাদ গ্রন্থ ইউজিসি নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে আসছে। কমিশনের অর্থায়নে এই পর্যন্ত ৬৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় মৌলিক গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে কমিশনের কলেবর বৃদ্ধি করে প্রকাশের ধারা অব্যাহত রাখতে সঙ্কল্পবদ্ধ। সভাপতির বক্তব্যে কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গবেষণার ধারক-বাহক হচ্ছে গ্রন্থ। এই গ্রন্থই দেশের শিক্ষা ও গবেষণাকে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছানোর সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে থাকে। ইউজিসি থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের লেখকদের এই প্রথমারের মতো সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাবিদ, লেখকরা গ্রন্থ রচনায় আরও উৎসাহিত হবেন বলে আমি মনে করি।
×