ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিধিমালা হচ্ছে

ফরমালিন বাণিজ্য রোধে বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১০ মার্চ ২০১৬

ফরমালিন বাণিজ্য রোধে বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার

এম শাহজাহান ॥ মধুমাস সামনে রেখে ফলমূলে ফরমালিনের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বে নিয়ে বিষমুক্ত ফল উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে মৌসুমি ফল পাকার আগেই এবার ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা অনুমোদন করা হতে পারে। যদিও বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ার কারণে দেশে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন পুরোপুরি কার্যকর হতে পারছে না। আইনটি কার্যকর না হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু আমদানিকারকরা। সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও চলছে ফরমালিন বাণিজ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, দেশে ১১ ধরনের জেনেরিক বা রাসায়নিকে ফরমালিনের অস্তিত্ব রয়েছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এগুলো চিহ্নিত করে তা আমদানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। তবে কায়দা কৌশলে বিভিন্ন নামে এগুলো দেশে আনা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-ফরমালডিহাইড, ফরমালডিহাইড সলিউশন, মিথানল সলিউশন, মিথালাইল এ্যালডিহাইড, মিথালাইল এ্যালডিহাইড সলিউশন, প্যারাফরমালডিহাইড, প্যারাফরমালডিহাইড সলিউশন, প্যারাফরম, ফরমাজিন, ফরমল ও মরবিসিড। প্রতিবছর ফলের মৌসুম সামনে রেখে ফরমালিনের ব্যবহার বেড়ে যায়। বিশেষ করে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তরমুজসহ বিভিন্ন ফল টাটকা রাখতে ফরমালিন মেশানো হয়ে থাকে। ফরমালিন মিশ্রিত এসব ফল জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের দেহে ১ দশমিক ৫ পিপিএম মাত্রার ফরমালিন সহনীয় কিন্তু ফরমালিনবিরোধী অভিযানে ইতোপূর্বে দেখা গেছে, ঢাকায় প্রবেশ করা মৌসুমি ফলে রয়েছে ১২৫ পিপিএম মাত্রার ফরমালিন। ১২৫ পিপিএম মাত্রার ফরমালিন মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শিশুদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। প্যারালাইসিসসহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। এই ফল খেলে গর্ববতী মায়েরা মৃত বা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারেন। একজন মানুষ এই ফরমালিনের প্রভাবে যে কোন সময় স্ট্রোক করতে পারেন। জানা গেছে, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন সংসদে পাস হওয়ার পর থেকে এ দ্রব্যটি কেনাবেচা এবং ব্যবহারে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। কিন্তু আইন অমান্যে যেসব দ- বা শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তা কার্যকর হতে পারছে না। কারণ আইনটি কার্যকর করতে হলে বিধিমালাটি আগে অনুমোদনের প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আইনটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এখন ভেটিং শেষে আইনটি অনুমোদন পাবে। ফলের মৌসুম সামনে রেখে শীঘ্রই বিধিমালাটি অনুমোদন হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনটি কার্যকর হচ্ছে না বিষয়টি সেরকম না। ফরমালিন অপব্যবহারকারীদের ধরা হচ্ছে। এ কারণে চলতি বছর ফলমূলসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যে এ দ্রব্যটির ব্যবহার ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। তবে আইনটি কার্যকর করতে হলে রুলস (বিধিমালা) প্রয়োজন। সেই বিধিমালা চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই বিধিমালাটির অনুমোদন দেবে আইন মন্ত্রণালয়। এখন ফরমালিন বাণিজ্য করতে হলে নতুন আইন মেনে করতে হবে। তাই বিধিমালা অনুমোদন হওয়ার আগে আর কেউ ফরমালিন আমদানি করতে পারবে না। বিধিমালা অনুমোদন পেলে ফরমালিন আইনেই শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে। জানা গেছে, মৌসুমে ফলমূলে ফরমালিনের অপব্যবহার বন্ধে করণীয় নির্ধারণে আগামী সপ্তাহে একটি বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। মৌসুমি ফল উৎপাদন থেকে শুরু করে, তা সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণেও সরকারী মনিটরিং করা হবে। একই সঙ্গে আইনভঙ্গ করে ফরমালিন ব্যবহার করা হলে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারা আনছে ফরমালিন ॥ দেশে প্রতিবছর ১৭৬-১৮০টি প্রতিষ্ঠান ফরমালিন আমদানি করছে। ইতোপূর্বে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জাতীয় সংসদে ফরমালিন আমদানির বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাতে দেখা যায়, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫৫ হাজার ১৭৩ কেজি ফরমালিন আমদানি হয়েছে। আর আগের অর্থবছরে আমদানি করা হয় ২ লাখ ৫ হাজার ৯৭ কেজি। এছাড়া ২০০৯-১০ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৮৪৬ কেজি ফরমালিন আমদানি করা হয়েছিল। তবে বর্তমান ফরমালিন আমদানি আবার বাড়তে শুরু করেছে।
×