ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মনোনয়ন জমায় বাধা দিলে নির্বাচন স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১০ মার্চ ২০১৬

মনোনয়ন জমায় বাধা দিলে নির্বাচন স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিপক্ষ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দিয়ে বিনাপ্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হওয়া রোধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ইসি। ইসি জানিয়েছে তদন্তে কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেয়ার ঘটনা প্রমাণ পেলে সেক্ষেত্রে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণার পরিবর্তে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া হবে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা, প্রতিদ্বন্দ্বী কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে হামলা, ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার পরিপেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধা দেয়ার অভিযোগে বুধবার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার তিন ইউপিতে নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিশনের উপসচিব মোঃ সামসুল আলম নির্বাচন স্থগিতে নির্দেশনাটি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন। নির্বাচন স্থগিত করা ইউপিগুলো হলো- চিথিলা, বক্সমাহমুদ ও মির্জানগর। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে সিনিয়র সহকারী সচিব শাহেদুন্নবী ও জাতীয় পরিচয়পত্র শাখার পরিচালক আল মামুনের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে ইসি। কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এসব ইউপিতে দ্বিতীয় দফায় ৩১ মার্চ ভোট গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু ২ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে সরকার দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে। ফলে এই তিন ইউপিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় একদিন বাড়িয়ে ৩ মার্চ করা হয়। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসারের কার্যালয়ে বিকল্প মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ দেয়া হয়। সময় বাড়িয়ে ও বিকল্প স্থানে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ সৃষ্টির পরও প্রতিপক্ষ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে এই তিন ইউপিতে অন্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমার সুযোগ না পাওয়ায় সরকার দলীয় তিন প্রার্থীর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ইসি জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এসব ইউপিতে নির্বাচন স্থগিতে আদেশ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেয়ার অভিযোগে এর আগে পরশুরাম উপজেলার সরকারদলীয় চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে গত রবিবার স্থানীয় সরকার বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চেয়ারম্যান আবদুল আলিমের বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমায় বাধা দান, ভয়ভীতি প্রদর্শন, বেআইনী কার্যক্রম, ইসি ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান একরামুল হক নিহত হওয়ার পর শূন্য হওয়া ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় ২০১৪ সালের উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আলিম। আওয়ামী লীগ নেতা একরামকে ২০১৩ সালের ২০ মে ফেনী শহরে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে গাড়িতে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে একই কারণে ফুলগাজী উপজেলায় ৬ ইউপিতে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া হয়। গত পৌরসভা নির্বাচনে ফেনীতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে একাধিক প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী প্রথম দফায় ৭৩২ ইউপিতে নির্বাচন হবে আগামী ২২ মার্চ। অথচ ভোটের আগেই এসব ইউপির মধ্যে ৬২ চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম দফায় মনোনয়নপত্র দাখিলে সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বাধাদানের অভিযোগ ওঠে। এছাড়া প্রথম দফায় ৬২ জন বিনাপ্রতিদ্বদ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়েও সমালোচনায় পড়ে ইসি। তবে প্রথম থেকেই এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হলেও অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় বিষয়টি আমলে নেয়নি তারা। এছাড়া দ্বিতীয় দফায় মনোনয়নপত্র জমাদানের ১৩ ইউপিতে একক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এসব ইউপিতেও প্রতিপক্ষ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধার অভিযোগ উঠেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরই ফেনীর পরশুরামে তিন ইউপিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে কমিশনার মোঃ শাহওনেয়াজ বলেন, নির্বাচনে কোথাও অনিয়ম হলো কিনা সেটা দেখা হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলো, এটা কমিশনের দেখার বিষয় নয়। আইনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিধান রয়েছে। তিনি বলেন, সব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমলে নেয়া হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীনদলের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, কমিশন আইনগতভাবে কাজ করছে। যে জায়গায় প্রভাব খাটানো ও বাধা দেয়ার ঘটনা হয়েছে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে সেক্ষেত্রে শুধু ৬২ নয় আর অনেক বেশি প্রার্থীও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারে। এদিকে নির্বাচনী প্রচারকালে গত কদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলা, ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে গত সোমবার ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সমর্থকের মধ্যে সংষর্ঘে একজন নিহত হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী, কক্সবাজার, শেরপুর, ভোলা, বরগুনা, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবে কয়েকদিনের নির্বাচনী সংঘর্ষে প্রায় শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ইসি জানিয়েছে, হামলা, সংঘর্ষ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রার্থী ও তার সমর্থকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জড়িত থাকায় জরিমানা করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় এখন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগের দ্বিগুণ রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে কঠোর হুঁশিয়ারির পরও অনেক প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে রয়ে গেছেন। এ সংখ্যায় দ্বিতীয় দফায় আরও বেশি বলে জানা গেছে। গত ৩ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠকে বিভিন্ন বাহিনীর পক্ষ থেকে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছিল। গত কয়েকদিনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে ঘটেছে বলে জানা গেছে। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হতে না হতেই দেশের কয়েক স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের এসব ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ সোমবার পটুয়াখালীর বাউফলে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ইউপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। ইউপিতেও আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ দুই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ॥ এদিকে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান (রিমন) ও পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের এ দুই সংসদ সদস্যকে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। গত পৌরসভা নির্বাচনে শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পায় ইসি। ওই সময় তাকে শোকজ করা হলে দুঃখ প্রকাশ করে রেহাই পান সরকার দলীয় এ সংসদ সদস্য। ইউপি নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়া নিষিদ্ধ।
×