ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হল্যান্ডকে হারিয়ে শুভ সূচনা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১০ মার্চ ২০১৬

হল্যান্ডকে হারিয়ে শুভ সূচনা বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ, ধর্মশালা থেকে ॥ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই সে কী ঠা-া! হাড় কাঁপানো শীত! হল্যান্ড শিবিরেও কাঁপন ধরিয়ে দিল বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। শীতে সব কিছুই ওলট-পালট হয়ে গেল। শীতে হল্যান্ড ক্রিকেটারদের তেজ দেখানোর সুযোগ ছিল। এ কন্ডিশনে অভ্যস্ত হল্যান্ড ক্রিকেটারদের সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উল্টো বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা যেন শীতে আরও তরতাজা হয়ে উঠলেন। তামিমের ৮৩ রানের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পর হল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের এমন ভোগালেন বাংলাদেশ বোলাররা, ৮ রানের জয়ই তুলে নিল বাংলাদেশ। টি২০ বিশ্বকাপের শুরুটাও শুভ হয়ে গেল। হল্যান্ডকে নিয়ে ভয় ছিল। দলটি ২০১২ সালে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল। আবার টি২০ বিশ্বকাপে দুইবার ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল। তাই দলটি আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল। এর সঙ্গে বাংলাদেশের উদ্দেশে হল্যান্ড ক্রিকেটারদের হুঙ্কার তো আছেই। কিন্তু কোন কিছুই হল্যান্ডকে রক্ষা করতে পারল না। ব্যাটিং নির্ভর উইকেটে টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিল হল্যান্ড। টার্গেট ছিল, যত কম রানে বাংলাদেশকে বেঁধে রাখা যায়, এরপর টার্গেট অতিক্রম করে জয় তুলে নেয়া। কিন্তু না কম রানে বেঁধে রাখা গেল। না টার্গেট অতিক্রম করতে পারল হল্যান্ড। বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে তামিম ইকবালের অপরাজিত ৮৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৩ রান করল। জবাব দিতে গিয়ে ২০ ওভার ঠিকই খেলল হল্যান্ড। তবে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রানের বেশি করতে পারল না। দেড় শ’ রানের ওপরে যে দলই করুক, প্রতিপক্ষের জন্য তা অতিক্রম করে জয় তুলে নেয়া কঠিন। তা যদি হয় আবার তাসকিন, আল আমিন, সাকিব, মাশরাফিদের মতো শক্তিশালী বোলিং লাইনআপ। তাহলে তো তা আরও কঠিন। কিন্তু সেই কঠিন কাজটি যেন শেষ মুহূর্তে করে ফেলছিল হল্যান্ড। বুখারি যখন ব্যাট হাতে নামেন, তখন সবকিছু হারা দলে পরিণত হয় হল্যান্ড। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে খেলতে নামেন বুখারি। তখনও হল্যান্ডের জিততে ১১ বলে ৩৩ রান লাগে। এমন মুহূর্তে বুখারি জ্বলে ওঠেন। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আল আমিনের করা ১৯তম ওভারে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে দেন! পঞ্চম বলে যখন সিলারও বাউন্ডারি হাঁকান, তখন খানিক ভয়ও সবার ভেতর ঢুকে যায়। ৬ বলে জিততে ১৭ রানের প্রয়োজন পড়ে। খুবই সম্ভব। যদি রানের ফোয়ারা ব্যাট থেকে বের হয়। কিন্তু তাসকিন কাজের কাজটি করে দেন। ২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ৭ বলে ১৪ রান করা বুখারিকে আউট করে দেন। তখনই আসলে চূড়ান্ত জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। এরপর ৮ রান আগে থাকতেই হল্যান্ডের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। বুখারির আগে যে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ভয় ছিল, তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্য দেখান। মাইবার্গ ও বোরেন ২৯ রান করে করেন। কুপারের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। টম করেন ১৫ রান। উপরের সাড়ির এ ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়েই আসলে এত দূর আসতে পারে হল্যান্ড। তবে বাংলাদেশ ইনিংসেই যে বড় স্কোর দাঁড় হয়ে যায়। সেখানেই মাত খায় হল্যান্ড। সাকিব দুর্দান্ত বল করে ২ উইকেট নেন। আল আমিন শেষ বেলায় এক ওভারে ১৬ রান দিলেও ২ উইকেট শিকার করেন। নাসির যথারীতি ব্রেকথ্রু এনে দেন। আর মাশরাফি গুরুত্বপূর্ণ ১ উইকেট নেন। ঐক্যবদ্ধ বোলিং নৈপুণ্যে হল্যান্ডকেও গুঁড়িয়ে দেয়া যায়। অথচ ব্যাটিংটা হয়েছে একেবারেই বাজে। যদি কোনভাবেই তামিম ব্যাট হাতে প্রাচীর হয়ে না দাঁড়িয়ে থাকতেন, তাহলে বিপদ আসতে পারত। ধরে নেয়া যাক, তামিম ৮৩ রান করেননি, তাহলে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে রান জমা হতো ৭০। ক্রিকেট এমনই, সবাই খেলে না। একজন খেলে। আর একজনের চিত্তকর্ষক নৈপুণ্যেই জয়ও মিলে। তামিম বুধবার তেমনই একজন ছিলেন। সৌম্য সরকার ১৫ রান করে দ্রুতই আউট হয়ে গেলেন। এরপর সাব্বির রহমানও (১৫) দেখাতে পারলেন না হার্টহিটিং তকমা। মাহমুদুল্লাহ এসে কোন রকমে ১০ রান করতে পারলেন। বাকিদের রানের অবস্থা খুবই করুণ- সাকিব (৫), মুশফিক (০), নাসির (৩), মাশরাফি (৭), আরাফাত (৮*)। এমন একটি দিনের দেখা মিলল, মনে হলো ব্যাটসম্যানরা খুব তাড়াহুড়ো করছেন। স্কোরবোর্ডে এত বেশি রান আগেই জমা হয়ে আছে, যে ধুমধারাক্কা ব্যাটিং না করলে জেতা সম্ভব নয়। অথচ শুরুতে বাংলাদেশই ব্যাটিং করেছে। এবং রানও হচ্ছিল। কিন্তু একের পর এক উইকেট যেতে থাকাটা যদিও হল্যান্ডের বিপক্ষে বিপদ ডেকে আনেনি। তবে সুপার টেনে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে হবে। যেখানে এমন ব্যাটিং দলকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেবে। টি২০ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তামিম দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দিয়েছেন। আগে হতো কী? তামিম এসেই ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করতে থাকতেন। এখন অনেক বদলে গেছেন তামিম। আগে উইকেটে সেট হন। এরপর খারাপ বল পেলেই বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে থাকেন। সেই কাজটিতে বুধবার সাফল্য পেয়েছেন তামিম। তাতে করে দলও বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছে। বড় স্কোর করে জয়ও তুলে নিতে পেরেছে। তবে হল্যান্ড দলটির বিপক্ষে যে খেলা হয়েছে, তা সামনের ম্যাচগুলোর জন্য অশনিসঙ্কেতই। সেই অশনিসঙ্কেত নিয়ে অবশ্য এ মুহূর্তে ভাবার অবকাস নেই। এখন যে জিতে গেছে বাংলাদেশ। যে দলকে আতঙ্ক মনে করা হয়েছিল, সেই হল্যান্ড দলটিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
×