ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক মাস আগে ঘটনা জানলেও তদন্তের স্বার্থেই কাউকে জানানো হয়নি ;###;ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কায় পাচার হওয়া ২০ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা হয়েছে ;###;ফিলিপিন্সে স্থানান্তরিত ৮১ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে

তদন্ত চলছে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১০ মার্চ ২০১৬

তদন্ত চলছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এ্যাকাউন্ট থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কায় এবং ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় সেখানে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হয়েছে। আর ফিলিপিন্সে স্থানান্তরিত অর্থ উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে কিছু অর্থ ব্যাংকিং মাধ্যমে মজুদ আছে, কিছু অর্থ নগদ করা হয়েছে। তবে দেশটির এ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পুরো অর্থটাই ফেরত পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফিলিপিন্সের ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এ্যাকাউন্ট থেকে আরও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার (৮৭ কোটি ডলার) মূল্যের তহবিল চুরি করার চেষ্টা করেছিল হ্যাকাররা। এদিকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে ডলার তুলে নেয়ার খবর বাংলাদেশ ব্যাংক এক মাস আগে জানলেও তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনেককে জানানো হয়নি। বুধবার সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে তফসিলী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে জরুরী বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকড হওয়া ১০১ মিলিয়ন ডলার পুরোটাই ফেরত আনা হবে। এরমধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কায় এবং ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় সেখানে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হয়েছে। আর ফিলিপিন্সে স্থানান্তরিত অর্থ উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে কিছু অর্থ ব্যাংকিং মাধ্যমে মজুদ আছে, কিছু অর্থ নগদ করা হয়েছে। তবে দেশটির এ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পুরো অর্থটাই ফেরত পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেই এই অর্থ চুরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আর কিছু বলা যাচ্ছে না। এ সময় বিশ্বব্যাংকের সাবেক আইটি বিশেষজ্ঞ রাকেশ আস্তানা জানান, দেশের বাইরে থেকেই এ হ্যাকিং করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কারও যোগসাজশ আছে কিনা তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। শুভঙ্কর সাহা বলেন, আমরা আজকে সব ব্যাংককে নিয়ে বসেছি। কারণ সব ব্যাংকেরই বৈদেশিক লেনদেন আছে। অনেক ব্যাংকেরই বিভিন্ন বিদেশী ব্যাংকে অনেক এ্যাকাউন্টের সঙ্গে লেনদেন আছে। এজন্য সাইবার সিকিউরিটি অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে যা যা করণীয় সে বিষয়ে মতবিনিময় ও নির্দেশনা দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাঃ রাজী হাসান বলেন, রিজার্ভের বিষয়ে তদন্ত চলছে। যেসব এ্যাকাউন্টে রিজার্ভের অর্থ স্থানান্তরিত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে ফিলিপিন্সের এ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষ সেসব এ্যাকাউন্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে জব্দ করেছে। এছাড়া কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ডেপুটি গবর্নর জানান, প্রত্যেক লেনদেনের কিছু নিয়ম আছে। যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের হয়ে অর্থ স্থানান্তরের আবেদন পাঠানো হয় তখন তাদের এ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা যাচাই করার বিধান রয়েছে। সেটা তারা করেছে কিনা সেটা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এর আইনগত দিকগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। ফেডারেল ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে এক মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ডলার হ্যাক করা হলেও সম্প্রতি গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছেন বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে রাজী হাসান বলেন, আমরা যাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেছি তাদের জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনেককে জানানো হয়নি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গবর্নর নাজনীন সুলতানাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। রিজার্ভ থেকে আরও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার হ্যাকড করার চেষ্টা ॥ ফিলিপিন্সের ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে ৮৭০ মিলিয়ন ডলার (৮৭ কোটি ডলার) মূল্যের তহবিল চুরি করতে হ্যাকারদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। অবশ্য এ ঘটনার মাত্র ক’দিন আগে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সমমূল্যের টাকা একই উৎস থেকে ফিলিপিন্সের স্থানীয় ব্যাংকিং সিস্টেমে ঢুকেছিল এবং তা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রিজাল কমার্সিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) নামের স্থানীয় এক ক্লায়েন্টের হাতে চলে গিয়েছিল। সে ঘটনায় তদন্ত চলছে। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ফিলিপিন্সভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনকোয়ারার জানায়, গ্রাহকের হাতে চলে যাওয়া ৩৭০ কোটি ফিলিপিন্স মুদ্রা সমমানের সেই অর্থ একটি ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারের কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং পরে তা সিটি অব ড্রিমস ও মিদাসের সোলেয়ার রিসোর্ট ও ক্যাসিনোতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সে অর্থগুলোকে জুয়ার চিপস (বাজির কয়েন) হিসেবে রূপান্তরিত করে বাজি ধরার উপযোগী করা হয়। আর শেষ পর্যন্ত আবার সেগুলোকে নগদ অর্থে রূপান্তরিত করে হংকংয়ের এ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে ৮৭০ কোটি ডলারের তহবিল জব্দের পর দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ফিলিপিন্সের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় মানিলন্ডারিংয়ের ঘটনা।
×