ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রদ্ধা ভালবাসায় মিঠুকে বিদায়, বনানী কবরস্থানে দাফন

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১০ মার্চ ২০১৬

শ্রদ্ধা ভালবাসায় মিঠুকে বিদায়, বনানী কবরস্থানে দাফন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় শেষ বিদায় জানানো হলো বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার খালিদ মাহমুদ মিঠুকে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বুধবার সকাল থেকেই ছিল সংস্কৃতিসেবী, শিল্পী ও বরেণ্য ব্যক্তিদের উপস্থিতি। সবাই খালিদ মাহমুদ মিঠুকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আগে থেকেই হাজির ছিলেন। সকাল সাড়ে দশটার দিকে খালিদ মাহমুদ মিঠুর মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। সকাল দশটা ৪০ মিনিটে শুরু হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে নাগরিক শ্রদ্ধানুষ্ঠান। শুরুতেই মিঠুর মরদেহের প্রতি পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন নাট্যজন ড. ইনামুল হক। ব্যক্তিপর্যায়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান শিল্পী হাশেম খান, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, শিল্পী আবুল বারক্্ আলভী, চ্যানেল আই ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, শংকর সাঁওজাল, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ, আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং, ইন্ধিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক জয়শ্রী কু-ু প্রমুখ। সাংগঠনিকভাবে শ্রদ্ধা জানায় নারী প্রগতি সংঘ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, আধিবাসী ফোরাম, ভারতীয় হাইকমিশন, গ্যালারি চিত্রক, কচিকণ্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজেলা পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী কালচারাল ফোরাম, রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, গানের দল মাদল, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি সোসাইটি, ঢাকা ফটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট, নিজেরা করিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, আমাদের সে ভাষা নেই, কীভাবে একজন অনুজ বন্ধুকে বিদায় জানাতে হয়। মিঠুর পরিবারের সামনের দিনগুলো বেদনার ও শোকের এটা জেনেও, কর্মঠ শিল্পী ও পিতার কাজকে সামনে রাখলে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে। হাশেম খান বলেন, এমন একজন ব্যক্তিকে আমরা হারালাম যিনি সবেমাত্র নিজের কাজ দিয়ে শিল্পজগৎকে আলোকিত করা শুরু করেছিলেন। এ ধরনের মৃত্যু কষ্টকর। সরকারের নীতিনির্ধারকদের বলব এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে। রামেন্দু মজুমদার বলেন, মূলত চিত্রশিল্পী হলেও, মিঠুর আগ্রহ ছিল চলচ্চিত্র এবং নাটক নির্মাণে। তার কাছে আমাদের প্রত্যাশাও ছিল অনেক। অনেক কিছু দেয়ার ছিল, কিন্তু তার আগেই মিঠু এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। আবুল বারক আলভী বলেন, শুধু চিত্রশিল্পী নয়, চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও নিজে নাম করেছেন মিঠু। চিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি যেমন অসাধারণ ছিলেন তেমনি চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও দারুণ। চিত্রশিল্পী হওয়ায় তার নির্মাণে সৃজনশীলতা ছিল। তিনি ভাল সংগঠকও ছিলেন। চারুশিল্পী সংস্থা নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, মিঠু চিত্রকর্ম বাদে যত কাজ করেছেন তার ৯৮ শতাংশ কাজই চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে। তার কাজকে আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখি বলেই তার সঙ্গে এই সম্পর্ক। তিনি একমাত্র শিল্পী যিনি তুলি এবং ক্যামেরা একসঙ্গে চালিয়েছেন। ছেলে আর্য শ্রেষ্ঠ বলেন, বাবা আমার কাজের অনুপ্রেরণা। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাকে শুটিংয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি গর্বিত তার সঙ্গে কাজ করেছি কাজ শিখেছি। তিনি আমার বন্ধু ছিলেন, আমার কাজের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আমার ইচ্ছা আছে বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার। তবে আমি এখনও এর জন্য প্রস্তুত নই। মেয়ে শিরোপা পূর্ণা বলেন, বাবার মৃত্যুটা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। তিনি সমাজের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তার চিত্রকর্ম, চলচ্চিত্রসহ সব শিল্পকর্ম মনে রাখতে হবে। সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফের নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর্ব শেষ হয়। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। সেখানে অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিএফডিসি ও চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে আরও দুই দফা শ্রদ্ধা ও জানাজা শেষে বাদ আসর বনানী কবরস্থানে বাবার কবরে তাকে সমাহিত করা হয়।
×