ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ ও এ্যামনেস্টির উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১০ মার্চ ২০১৬

জাতিসংঘ ও এ্যামনেস্টির উদ্বেগ

শরণার্থী সমস্যা সমাধানে তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অধিকার গ্রুপগুলো। তারা বলেছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর অর্থ তাদের মৃত্যুঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া। এছাড়া এটি আন্তর্জাতিক আইনেরও লঙ্ঘন। এদিকে শরণার্থীদের চাপ বাড়তে থাকায় সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সেøাভেনিয়া ও সার্বিয়া। খবর গার্ডিয়ান ও বিবিসির। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপো গ্রান্ডি শরণার্থী বিনিময় নিয়ে ইইউ-তুরস্ক সমঝোতার আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে বিপন্ন হতে পারে সিরীয় শরণার্থীদের জীবন। তাদের ফের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে। এর আগে সোমবার ব্রাসেলসে ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তুরস্কের বৈঠকে ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ বা একজন শরণার্থী চলে গেলে শূন্য জায়গায় আরেকজনকে নেয়ার নীতির বিষয়ে দুপক্ষ একমত হয়। তুরস্কের দেয়া প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানায় জার্মানি ও ব্রিটেন। চলতি মাসের ১৭-১৮ তারিখে ব্রাসেলসে ইইউর পরবর্তী বৈঠকে সমঝোতাটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি শরণার্থী তুরস্ক থেকে গ্রিসে প্রবেশ করছে। এদের গন্তব্য ইউরোপের যে কোন দেশ। তুরস্ক থেকে ইজিয়ান সাগর অতিক্রম করে তারা গ্রিসে পৌঁছে থাকে। বিপদসঙ্কুল এই পথে বহু শরণার্থী মারা গেছে। মানব পাচারকারীরাও এই পথে ইউরোপে মানুষ পাঠিয়ে থাকে। তাই এটি বন্ধ করতে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ এখন বদ্ধপরিকর। বেশিরভাগ শরণার্থী আসছে সিরিয়া, ইরাক ও আফগনিস্তানসহ যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলো থেকে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো বলেছে, অভিবাসন প্রার্থীদের গ্রিস থেকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো অবৈধ। মঙ্গলবার ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে বক্তৃতা করার সময় গ্রান্ডি বলেন, অভিবাসন প্রার্থীদের কেবল তখনই অন্যদেশে পাঠানো যায় যখন সেই দেশটি এই নিশ্চয়তা দেবে যে, আশ্রয়প্রার্থীরা যে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে তাদের জোর করে সেখানে ফেরত পাঠানো হবে না। গ্রান্ডি বলেন, অভিবাসন প্রার্থীদের যে দেশে ফেরত পাঠানো হবে সে দেশকে অবশ্যই অভিবাসীদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সামাজিক সহায়তা পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। পৃথক বক্তৃতায় ইউএনএইচসিআরের ইউরোপ বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক ভিনসেন্ট কোচেটেল বলেন, ‘ইইউ স্বেচ্ছামূলকভাবে ২০ হাজার শরণার্থীকে পুনর্বাসনের যে পরিকল্পনা নিয়েছিল সেটি খুব ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এছাড়া শরণার্থীদের সম্মিলিতভাবে বহিষ্কার করা ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনের পরিপন্থী।’ ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার বলেছেন, শরণার্থীদের তুরস্কে ফেরত পাঠানো আইনত বৈধ এবং জেনেভা কনভেনশনের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। ইইউর অভিবাসন নীতি সম্পর্কিত ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন দেশ শরণার্থীদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাতে পারে যদি তাদের ফেরত পাঠানোর মতো নিরাপদ কোন দেশ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, গ্রিস তুরস্ককে নিরাপদ দেশ বিবেচনা করে বলে শরণার্থীদের সে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেদিক থেকে ফেরত পাঠানোর নীতি বৈধ। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইউরোপ বিষয়ক পরিচালক জন ডালহুইসেন বলেন, ‘এটি সত্যিই খারাপ একটি দিন, খারাপ একটি সমঝোতা এদিন হল।’ তিনি বলেন, ‘সমঝোতাটি যদি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় তবে তার অর্থ হবে ইউরোপে ঠিক তত সংখ্যক শরণার্থীই আশ্রয় পাবে যত সংখ্যক শরণার্থী নিজেদের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে রাজি হবে। স্লোভেনিয়া বলেছে, শরণার্থীদের ঢল আটকাতে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। গ্রিস থেকে পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার বলকান রুটটি বন্ধের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। শুধু যে সব শরণার্থী দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে অথবা যাদের সত্যিই মানবিক সহায়তার প্রয়োজন কেবল তাদের দেশটিতে ঢুকতে দেয়া হবে। স্লোভোনিয়ার এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় সার্বিয়া বলেছে, তারাও মেসিডোনিয়া ও বুলগেরিয়ার সঙ্গে তাদের সীমান্ত পথ বন্ধ করে দেবে। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া এই পথগুলো দিয়ে কাউকে দেশটিতে ঢুকতে দেয়া হবে না। অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী ও স্লোভাকিয়াসহ সেনজেনভুক্ত ৮টি দেশ সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করায় কয়েক হাজার শরণার্থী গ্রিসে আটকা পড়ে আছে।
×