ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এ দায় আমাদের

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ১০ মার্চ ২০১৬

এ দায় আমাদের

খান মুহাম্মদ শিহাব আমার প্রশ্ন, কেন? কেন জানবো না গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের কথা? কেন জানবো না ত্রিশ লাখ শহীদের স্বপ্ন আমাদের এই স্বাধীনতার ইতিহাস? এদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। গরিব দেশ হতে পারে কিন্তু অন্যায়, অবিচারের কাছে মাথা নত করার মতো কোন জাতি আমরা নই। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা আমাদের তাই বলে। পৃথিবীর বুকে বীরের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে আমাদের জানতে হবে নিজ দেশের স্বাধীনতার সম্ভ্রান্ত ইতিহাস, অনুভব করতে হবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রতিটি লাইনের উত্তাপ। কিন্তু যতবার আমি জানতে চেয়েছি বলা হয়েছে পড়াশোনায় মন দাও এসব জানার বহু সময় পড়ে আছে। আজকের প্রজন্ম জন্মের পরই অংশ নেয়া শুরু করে সফল হবার ইঁদুর দৌড়ে। ভাল মার্কস পাবার জন্য, ভাল চাকরি পাবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রয়োজন হয় না। আবার সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস বদলের চেষ্টাও আমরা দেখেছি। আজকের এই নতুন প্রজন্ম ইতিহাস জানে না। স্কুল কলেজ আর অভিভাবকদের অমানবিক প্রত্যাশার চাপ আমাদের যন্ত্রে পরিণত করেছে। আমাদের তাই আর জানতে ইচ্ছা হয় না ২৫ মার্চ রাতের কথা, পুরো জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার প্রয়াসে ঠা-া মাথায় পরিচালিত হয়েছিল একটি গণহত্যা। আমাদের মাঝে কাজ করে হীনম্মন্যতা। আমরা গরিব, বড়লোক হতে হবে ইতিহাস জানার সময় কোথায়! আজকের প্রজন্মের মনোভাব এমন যেন, যুদ্ধ হওয়ার ছিল, হয়েছে, জেতার ছিল জিতেছে। কিন্তু যুদ্ধ হয়েছিল এটা জানা আর বুকের পাঁজরে সযতেœ মুক্তিযুদ্ধের সমুন্নত চেতনা লালন করার মাঝে বিস্তর ফারাক। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস জানলে আর তার চেতনাকে বুকে লালন করলে তার মাঝে হীনম্মন্যতা কখনই কাজ করবে না। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে সে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাববে। গর্বে বুক ভরে উঠবে তার। তার মাঝে জেগে উঠবে দেশপ্রেম। এ প্রজন্মের মাঝে দেশত্যাগের প্রবণতা লক্ষণীয়। বখাটে ছেলেটি যখন পহেলা বৈশাখে কোন বোনের সম্ভ্রমে হাত দেয় আর আমরা পাশ কাটিয়ে চলে যাই তখন প্রশ্ন জাগে আমরাই কি সেই জাতি যারা নিজেদের মা বোনের নিরাপত্তার জন্য, নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য বুকের তাজা রক্তে এই বাংলার মাটিকে সিক্ত করেছি! আমরা পারি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে, আমরা পারি ‘জয় বাংলা’ বলে শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে। কারণ আমরা জানি না আমাদের পূর্বপুরুষদের বীরত্বের কথা, আত্মত্যাগের কথা, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এর দায় হয়ত কিছুটা আমাদের অগ্রজদের। তারা হয়ত দেশ গঠনে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে দেশের ইতিহাস এই প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে পারেননি। কিন্তু কথা এখানেই শেষ নয়। শিক্ষা অর্জন করতে হয়, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কোন জিনিস নয়। এ মাটির বুকে আমার জন্ম। কার রক্তের দাগ এখানে মিশে আছে তা আমাকেই জানতে হবে। প্রজন্ম আর প্রজন্মের যে দূরত্ব তা ঘোচানোর দায়িত্ব আমাদের নিজেদের যেখানে অগ্রজদের থাকবে সর্বাত্মক সহযোগিতা। খুব আফসোস হয় যখন ভার্সিটি পড়ুয়া কোন প্রচ- স্টাইলিশ ইংরেজী বলা আপু এটুকু বলতে পারেন না ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস নাকি ১৬ ডিসেম্বর। এর দায়ভার আমাদের নিজেদের। আমরা তরুণ প্রজন্ম, ত্রিশ লাখ শহীদের বুকের আগুনকে পুঁজি করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলাই হওয়া উচিত আমাদের অঙ্গীকার। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ, রংপুর থেকে
×