ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ নুরুজ্জামান

উড়বে কেতন যে নবীনে...

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৯ মার্চ ২০১৬

উড়বে কেতন যে নবীনে...

অভিষেকের শুরু থেকেই ক্রিকেট বিশ্বে বিস্ময়ের পর পর বিশ^য় উপহার দিয়ে চলেছেন মুস্তাফিজ। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের হোম সিরিজে একমাত্র টি-টুয়েন্টিতে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। সে ম্যাচে শহীদ আফ্রিদী এবং মোহাম্মদ হাফিজের উইকেট তুলে নিয়ে জানান দিয়েছিলেন নিজের আগমনী বার্তা। তবে ক্রিকেট বিশে^ তাকে নিয়ে আলোড়ন হয় তার ওয়ানডে অভিষেকে। নিজের বোলিংয়ের বড় অস্ত্র কাটারের ফাঁদে ফেলে দিশাহারা করে ফেলেন ভারতীয় ব্যাটম্যানদের। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই এগারো (৫+৬), তৃতীয়টিতে দুটিসহ মোট ১৩ উইকেট নিয়ে অনন্য রেকর্ড গড়েন এই বা-হাতি। এরপর বাংলাদেশের সাফল্য আর মুস্তাফিজুর রহমান এগিয়েছে হাত ধরাধরি করে। ওয়ানডে এবং টেস্ট দুই ফরমেটের অভিষেকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া একমাত্র ক্রিকেটারও মুস্তাফিজ। পেসার হিসেবে তো বটেই বাংলাদেশী কোন ক্রিকেটারের এমন দাপুটে আবির্ভাব আগে দেখা যায়নি। নিজের বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বড় আকর্ষণ তিনি। ২০১৫ সালের সর্বসেরা ওয়ানডে দলেও জায়গা করে নিয়েছিলেন সাতক্ষীরার তরুণ। এতসব সাফল্যের ধারাবাহিকতায় জায়গা করে নিয়েছের আগামী আইপিএল এবং ইংল্যান্ডের ন্যাটওয়েস্ট টি-টুয়েন্টিতেও। আইপিএলে খেলবেন সানরাইজার্স হায়দারাবাদ এবং ন্যাটওয়েস্ট টি-২০ কে কাউন্টি দল সাসেক্সের হয়ে। বিশ^ কাপের আলো তাই তার উপর পড়ছে আলাদা করে। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বাংলাদেশ সফরে রাবাদার ওয়ানডে অভিষেক। প্রথম ওয়ানডেতেই পাঁচ উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন এই ডান হাতি বোলার। বাংলাদেশ যখন ওয়ানডে ক্রিকেটে দুর্দান্ত প্রতাপ দেখাচ্ছে, পাকিস্তানকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ এবং ভারতেকে সিরিজ হারিয়ে অন্তত ঘরের মাঠে অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে ওঠেছে, ঠিক সেই সময় নিজের ওয়ানডেতে অভিষেকে বাংলাদেশের জয় রথেও আগাথ হেনেছিলেন তিনি। যদিও পরের দুই ওয়ানডে জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। তবে রাবাদা ঠিকই ভুগিয়েছেন তামিম ইকবালদের। নবেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হতাশার হলেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন দ্রুতই। ৬ টেস্টে ২৪ উইকেট নেয়া এই বোলার তিনবার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। ১৪ ওয়ানডেতে তাঁর উইকেট সংখ্যা ৩০ আর ১১ টি-টুয়েন্টিতে ১৪ টি। এই পরিসংখ্যানগুলোই সাক্ষ্য দেয় কেন সম্ভাবনাময়দের তালিকায় থাকছে এই পেসারের নাম। ক’দিন আগে এশিয়া কাপে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বিরাট কোহলি মুস্তাফিজ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রাবাদার কথাও উল্লেখ করেন। এই ভারতীয় বলেন, টি-টুয়েন্টি যেখানে ব্যটসম্যানদের খেলা সেখানে মুস্তাফিজ-রাবাদার মতো বোলারের বিপক্ষে খেলা চ্যালেঞ্জের এবং একইসঙ্গে রোমাঞ্চকর। জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে এ্যাডিলেডে তাঁর টি-টুয়েন্টি অভিষেক। এখনও পর্যন্ত ছোট ঘরনার ক্রিকেটের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জগতটা তার দেখা না হলেও, আইপিএলের কল্যাণে তার পরিচিতি অনেক আগে থেকেই। পেসার অল-রাউন্ডার হিসেবে ইতোমধ্যে নিজের অবস্থানও তৈরি করে নিয়েছেন ভারতীয় টি-টুয়েন্টি দলে। পেস বোলিংয়ের পাশাপশি লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হলেও দলের প্রয়োজনে তাকে ব্যবহার করা হয় ওপরের দিকেও। পাওয়ার হিটার হিসেবেই পরিচিত তিনি। প্রথমবারের মতো ওয়ার্ল্ড টি-টুয়েন্টি খেলতে যাওয়া সম্ভাবনাময়দের তালিকায় এই পেসার অলরাউন্ডর থাকছেন প্রথম সারিতেই। আর লঙ্কান পেসার দশমুন্তর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক গত বছর শ্রীলঙ্কা দলের নিউজিল্যান্ড সফরে। সিরিজের সপ্তম ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তার। ওই বছরের জুনে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের পর টি-টুয়েন্টিতে অভিষেক নবেম্বরে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ৪ টেস্টে ১৮ উইকেট নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচিত এই বোলার। ৯ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ১০ উইকেট, ১০টি-টুয়েন্টি খেলে উইকেট ১০টি। ব্যাটসম্যানদের খেলা টি-টুয়েন্টিতে এই বোলার আলোচনায় থাকছেন ভালভাবেই। এ্যাডাম জাম্পাÑ নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই ধারাবাহিক পারফর্মেন্স করে যাচ্ছিলেন এই লেগ ব্রেক বোলার। তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল এই বোলারের জন্য জাতীয় ঢোকা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ হওয়ায় উপমহাদেশের স্পিনিং উইকেটের কথা মাথায় রেখে তাকে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রাখতে ভুল করেনি অস্ট্রেলিয়ান নির্বাচকরা। ফেব্রুয়ারিতে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষিক্ত এই বোলার ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র দুটি। বিশ্বকাপের আগে টি-টুয়েন্টিতে অভিষেক সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। নবীন এই ক্রিকেটারের ওপর তার পরও আলো এসে পড়েছে মূলত লেগ ব্রেক বোলিংয়ের জন্য। অস্ট্রেলিয়া দলে অনেক তারকা রাজ্যির ভিড়ে নবীন এই ক্রিকেটারের দিকেও আলাদা নজর থাকবে সবার। এছাড়া ছোট্ট ফরমেটে ক্রমশ বোলারদের যমদূত হয়ে উঠেছেন টাইগার ব্যাটসম্যান। সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে প্রতিপক্ষ বোলারদের রীতিমতো নাজেহাল করে ছেড়েছেন। এক হাফ সেঞ্চুরিতে মূল লড়াইয়ে থাকা দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭৬ রান করে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার বগলদাবা করেছেন ২৪ বছর বয়সী উইলোবাজ। ফলে ৪৪ ধাপ এগিয়ে আইসিসি টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ক্যারিয়ারসেরা ২০ত স্থানে উঠে এসেছেন ডানহাতি সাব্বির! নতুনদের মধ্যে এছাড়াও ঔজ্জ্বল্য ছড়াতে পারেন ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাও।
×