ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে দেখা ফাইনাল মহারণ

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৯ মার্চ ২০১৬

ফিরে দেখা ফাইনাল মহারণ

প্রথম বিশ্বকাপ ২০০৭ : চ্যাম্পিয়ন-ভারত ॥ ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গের নিউ ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে প্রথম টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। টসজয়ী ভারত প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে করেছিল ১৫৭ রান। ১৫৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১০৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শোয়েব মালিকের দল। কিন্তু মিসবাহ-উল-হক দুর্দান্ত ব্যাটিং করে নাটকীয়ভাবে পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তীরে এসে তরী ডোবান মিসবাহই। ইনিংসের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে জগিন্দর শর্মার বলে পাকিস্তানের বর্তমান অধিনায়ক স্কুপ শট খেললে শর্ট ফাইন লেগে শ্রীশান্তের হাতে তালুবন্দী হন। এ সময় পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল চার বলে মাত্র ৬ রান। ১৫২ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ৫ রানে জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। এই আসরেই আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে এক ওভারে ছয়টি ছক্কা হাঁকানো প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড গড়েন ভারতের যুবরাজ সিং। সুপার এইটে ইংল্যান্ডের পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডের ওপর এই তা-বলীলাও চালান যুবরাজ। দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ২০০৯ : চ্যাম্পিয়ন-পাকিস্তান ॥ ২০০৯ সালের ২১ জুন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দ্বিতীয় আসরের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। টানা দ্বিতীয়বার সংক্ষিপ্ত ভার্সনের এই বিশ্বকাপের ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় পাকিস্তান। তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা হওয়ায় ফাইনাল পরিণত হয় অল-এশিয়ান। দ্বীপদেশ লঙ্কাকে সহজেই ৮ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। এর ফলে প্রথম আসরের ফাইনালে ভারতের কাছে হারের বেদনা ভুলতে পারে ইউনুস খানের দল। শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেটে ১৩৮ রানের জবাবে ৮ বল হাতে রেখে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসদের দেশ। ব্যাট হাতে হার না ৫৪ ও বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে ফাইনাল সেরা হন শহিদ আফ্রিদি। টুর্নামেন্ট সেরা হন রানার্সআপ শ্রীলঙ্কার তিলকারতেœ দিলশান। এই আসরেই দিলশানের ‘দিল স্কুপ’ শট বিখ্যাত হয়। গোটা আসরে দুর্দান্ত খেলা লঙ্কান ওপেনার ফাইনালে ‘ডাক’ মারেন। তৃতীয় বিশ্বকাপ ২০১০ : চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ॥ ২০১০ সালের ১৬ মে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রিজটাউনে তৃতীয় আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। অসিদের ৭ উইকেটে হারিয়ে আইসিসির কোন আসরে প্রথমবার শিরোপা জয়ের গৌরবে ভাসে ইংলিশরা। অস্ট্রেলিয়ার ৬ উইকেটে ১৪৭ রানের জবাবে তিন ওভার হাতে রেখে ৩ উইকেটে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১৪৮ রান সংগ্রহ করে ক্রিকেটের জনকরা। দ্বিতীয় উইকেটে ক্রেইগ কিয়েসওয়েটার ও কেভিন পিটারসেনের ১১১ রানের পার্টনারশিপেই জয় নিশ্চিত হয় ইংলিশদের। কিয়েসওয়েটার ৬৩ করে ফাইনাল সেরা হন। পিটারসেন ফাইনালে ৪৭ রানসহ গোটা আসরে ধারাবাহিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করে টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হন। চতুর্থ বিশ্বকাপ ২০১২ : চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ॥ ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে চতুর্থ টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের ১৩৭ রানে গুটিয়ে দেয়ার পরও লঙ্কানরা অলআউট হয় মাত্র ১০১ রানে। ৩৬ রানে জিতে প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসে ব্রায়ান লারার দেশ। অন্যদিকে দ্বিতীয়বার ফাইনালে হেরে বেদনায় ন্যুইয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা। এই হারে ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র দেশ হিসেবে ওয়ানডে ও টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে দুইবার করে মোট চারবার হারের তিক্ত স্বাদ পায় অর্জুনা রানাতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি সিলভার দেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারলন স্যামুয়েলস ফাইনাল সেরা ও অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসন টুর্নামেন্ট সেরার মুকুট জয় করেন। পঞ্চম বিশ্বকাপ ২০১৪ : চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা ॥ ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে শ্রীলঙ্কা। সেই সঙ্গে ওয়ানডে ও টি২০ মিলিয়ে চারবার বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের বেদনা ঘোচায় দ্বীপদেশটি। শুধু তাই নয়, ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে পরাজয়ের মধুর প্রতিশোধও নেয় লঙ্কানরা। টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান লঙ্কা অধিনায়ক। নুয়ান কুলাসেকারা, এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গা, রঙ্গনা হেরাথদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা জড়ো করে ৪ উইকেটে ১৩০ রান। জবাবে দুই বিদায়ী তারকা কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৩ বল হাতে রেখে চার উইকেট হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা। ফাইনাল সেরা হন শ্রীলঙ্কার সাঙ্গা কারা ও টুর্নামেন্ট সেরা হন ভারতের বিরাট কোহলি।
×