ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফিদের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৯ মার্চ ২০১৬

মাশরাফিদের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী

দারুণ এক অনুপ্রেরণা নিয়েই এবার টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে ভারত গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অবিশ্বাস্যভাবে চমক দেখিয়ে টাইগাররা এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে। অথচ এবার টি২০ ফরমেটে হওয়ার কারণে এ আসরে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলকে নিয়ে তেমন কোন প্রত্যাশাই ছিল না। অথচ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দুটি দলকেও হারিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। প্রথমবারের মতো কোন টি২০ টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হলো বাংলাদেশ। এ কারণে এবার দলটিকে নিয়ে প্রত্যাশা বেড়েছে অনেকখানি। তবে চ্যালেঞ্জটা কমেনি বিন্দুমাত্র। আবারও সহযোগী সদস্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে খেলতে হবে প্রাথমিক রাউন্ড। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর সঙ্গে মর্যাদার সুপার টেন পর্ব খেলার জন্য এই গ-ি পেরোতে হবে বাংলাদেশ দলকে। সেই লড়াইটা শুরু বুধবার থেকেই। ভারতের ধর্মশালায় প্রাথমিক রাউন্ডে হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ওমানের বিরুদ্ধে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু টানা ১২ দিন দেশের মাটিতে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকার পর এবার ভিন্ন কন্ডিশনে বিশ্বকাপ চ্যালেঞ্জে অবতীর্ণ হওয়াটা অনেক কঠিন হবে দলের জন্য। এমনকি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও মনে করছেন শুরু করতে হবে ‘জিরো’ থেকে। প্রথম রাউন্ডে (যেটিকে ধরা হচ্ছে বাছাইপর্ব) হল্যান্ডের সঙ্গে বুধবারের ম্যাচের পর শুক্রবার আয়ারল্যান্ড ও রবিবার ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে মাশরাফিবাহিনী। বাংলাদেশ আছে ‘এ’ গ্রুপে। গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট তালিকায় সবার উপরে থাকলেই ‘সুপার টেন’ খেলবে বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ থাকবে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ড। বাছাইপর্বে খেলতে নামার আগে মাশরাফিদের প্রথম প্রতিপক্ষ থাকছে আসলে কন্ডিশন! কখনোই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০০ ফুট ওপরের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের কাংরা জেলার একটি শহর ধর্মশালায় খেলেনি বাংলাদেশ। যেখানে প্রচুর ঠা-া থাকে পুরো বছরজুড়েই। সেই কন্ডিশনকে আগে জয় করতে হবে। অথচ দুদিন আগেই এশিয়া কাপ খেলেছে দল প্রায় গ্রীষ্মকালের প্রারম্ভে। ব্যতিক্রমী কন্ডিশনে দুদিন পরই খেলতে নামাটা অনেক বড় অগ্নিপরীক্ষা হবে মাশরাফিদের জন্য। এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠায় একটু দেরিতেই ধর্মশালায় পৌঁছাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। রবিবার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। সোমবার প্রথমে ঢাকা থেকে দিল্লীতে যেতে হয়েছে। ঢাকা থেকে সরাসরি হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় কোন ফ্লাইট নেই। দিল্লী থেকে নিজেদের ভাড়া করা চার্টার্ড বিমানে করে ধর্মশালায় পৌঁছাতে হয়েছে। মঙ্গলবার ধর্মশালায় একদিনের অনুশীলন শেষেই বুধবার বিশ্বকাপের মিশনে খেলতে নেমে যাবেন চন্দিকা হাতুরাসিংহের শিষ্যরা। এই আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে ওঠার জন্য কোন অনুশীলনও করতে পারেনি দল। মাত্র একদিন সময় পেয়েছে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার। এমনকি এশিয়া কাপ ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ এমনটা কল্পনাতেও ছিল না আইসিসির। এ কারণেই বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচ রাখা হয়েছিল ৫ মার্চ হংকংয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটি ছিল এশিয়া কাপ ফাইনালের আগের দিন। এশিয়া কাপ ফাইনালে ওঠার কারণে বাংলাদেশ সেই প্রস্তুতি ম্যাচটাও খেলতে পারেনি। সরাসরিই এখন খেলতে হবে ডাচদের বিরুদ্ধে। ঢাকায় ২০ ডিগ্রীর উপরে তাপমাত্রা ছিল। সেখানে ধর্মশালায় গড়পড়তা তাপমাত্রা হচ্ছে ১০ থেকে ১৬ ডিগ্রী। প্রচুর ঠা-া। এ ঠা-ায় মাত্র একদিন অনুশীলন করেই খেলতে নামতে হবে। এজন্য ম্যাচেও এর প্রভাব পড়তে পারে। চ্যালেজটা বুঝতে পারছেন অধিনায়ক মাশরাফি নিজেও। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের জিরো থেকে শুরু করতে হবে। এখন একটি টুর্নামেন্ট শেষ হলো, তার মানে সব জিরো হয়ে গেছে। এবার নতুন করে শুরু করতে হবে। টি২০ ক্রিকেটে সব দলই কঠিন। কম ওভারের খেলা, মুহূর্তেই সব পাল্টে যেতে পারে। আমরা যদি সুপার টেনে কোয়ালিফাইও করি আমাদের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। মানসিকভাবে যত দ্রুত সম্ভব সঠিক জায়গায় ফিরে আসা গুরুত্বপূর্ণ।’ দেশের ক্রিকেটপাগল সবারই স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ দল এবার এশিয়া কাপ জিতবে। কিন্তু ভারত বিশ্বের এক নম্বর টি২০ দল। তাই সেটা সম্ভব হয়নি। স্বপ্নটা একটু করে দেখতে শুরু করেছিলেন মাশরাফিরাও। কিন্তু এমন পরাজয়ের দুদিন পরই ঘুরে দাঁড়ানো, ভাঙ্গা মানসিকতায় লড়াইয়ে নামাটা সহজ হবে বাংলাদেশের? এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘ছেলেরা ফাইনাল খেলেছে। বেশ ভাল পারফর্ম করেছে। আশা করছি এ পারফর্মেন্স আমরা বিশ্বকাপে ধরে রাখতে পারব। আমাদের সেখানেও ভাল খেলতে হবে। এখান থেকে বাড়তি কিছু চিন্তা করে ওখানে খেলতে পারব না। একদিন পরই আমাদের নামতে হবে। সে জন্য সবকিছু ভুলে গিয়ে নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।’ সবমিলিয়ে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে। ২০০৭ সালে প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেই বিশ্বকাপ থেকে এবার ষষ্ঠ বিশ্বকাপ পর্যন্ত মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ খেলছেন। টানা ছয়বারই তারা অংশ নিচ্ছেন। দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও তারা। নাসির হোসেনও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কাতারেই পড়েছেন। ২০১২ ও ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে খেলেছেন। আল আমিন, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদও একটি করে টি২০ বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতায় পুষ্ট। মোহাম্মদ মিঠুন অবশ্য একবার টি২০ বিশ্বকাপের দলে থেকেও খেলতে পারেননি। এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার আশায় আছেন। বাকি সবাই প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে নামবেন। বাছাইপর্বে বাংলাদেশের তিন প্রতিপক্ষ হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ওমান। ওমান দুর্বল দল এবং এশিয়ার দল। মনে করা হচ্ছে, ওমানের বিপক্ষে সব দলই জিতবে। কিন্তু হল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড হচ্ছে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ দল। দলটি ইউরোপ অঞ্চলের। ঠা-া তাদের কাছে ‘ডালভাত’! গরম হলেই বরং অস্বস্তিতে থাকে তারা। ঠিক তার উল্টো হচ্ছে বাংলাদেশের বেলাতে। ঠা-া হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের জন্য অস্বস্তির। সেই অস্বস্তি নাকি আবার বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দেয়। হল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগেও দুটি টি২০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। হল্যান্ডেই হওয়া সেই দুই ম্যাচের সিরিজে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ১ ম্যাচে হেরেছে। আরেক ম্যাচে জিতেছে। দ্বিতীয় ম্যাচটি মাশরাফিরা খেলবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এরআগে এ দলটির বিপক্ষে চারবার টি২০তে লড়াই করে তিনবারই জিতেছে বাংলাদেশ। তবে ২০০৯ সালের টি২০ বিশ্বকাপে যে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছে আয়ারল্যান্ড, সেই ম্যাচটিতে আইরিশরাই জিতেছিল। এবারও তাই আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে ভয় আছে।
×