ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাছাই পর্বে বাংলাদেশের সামনে আজ হল্যান্ড

এগিয়ে যাওয়ার লড়াই শুরু

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৯ মার্চ ২০১৬

এগিয়ে যাওয়ার লড়াই শুরু

মিথুন আশরাফ, ধর্মশালা থেকে ॥ মনে আছে, ২০১২ সালের কথা। হল্যান্ডের হ্যাগে বাংলাদেশ-হল্যান্ড মুখোমুখি হয়। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলে দুই দল। সিরিজে খেলতে নামার আগে হল্যান্ডকে যেন গনাতেই ধরেনি কেউ! টি২০ ক্রিকেটে যে খুবই দুর্বল দল হল্যান্ড। সেই হল্যান্ডই কি না বাংলাদেশকে সিরিজে জিততে দেয়নি। প্রথম ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে সিরিজে সমতা আনে হল্যান্ড। এরপর থেকে হল্যান্ডের বিপক্ষে আর কোন টি২০ ম্যাচই খেলেনি বাংলাদেশ। আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায় হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় এ দুই দল পরস্পরের মুখোমুখি হবে। যে ম্যাচে হল্যান্ডকে ‘আতঙ্ক’ দল হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন? উত্তর-ধর্মশালায় খেলা বলেই। ধর্মশালায় আবহাওয়া ঠা-া। যে আবহাওয়ায় অভ্যস্থ হল্যান্ড। এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলায় এ আবহাওয়ায় মাত্র একদিন অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়েই নিতে পারেনি ঠিকমতো। এ আবহাওয়ায় হল্যান্ডও প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পায়নি বেশি। তবে কন্ডিশন যে রকম তাতে হল্যান্ডের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আবহাওয়ার বাইরেও ধর্মশালার উইকেট হচ্ছে পেস সহায়ক। ধারণা করা হচ্ছে, যে দল পেস আক্রমণ মজবুত করে নামবে, তাদের জয়ের সম্ভাবনাই উজ্জ্বল। এর আগে সেই প্রমাণ মিলেছেও। কিন্তু এ উইকেটে দেখা গেছে আবার ব্যাটিংটাও হয় দুর্দান্ত! যদি পেস আক্রমণের সামনে শুরুর ধাক্কা সামলে উইকেটে টিকে থাকা যায়, তাহলে রানের ফোয়ারাও মিলে। তাও দেখা গেছে। ধর্মশালায় এখন পর্যন্ত দুটি ওয়ানডে হয়েছে। আর একটি হয়েছে টি২০ ম্যাচ। দুই ওয়ানডের মধ্যে প্রথমটিতে ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত হেরেছে টিম ব্রেসনান ও স্টিভেন ফিনের মতো পেসারদের তোপে। দ্বিতীয় ম্যাচে আবার উল্টো হয়। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেরম টেইলর, জেসন হোল্ডার, আন্দ্রে রাসেলদের পেস আক্রমণকে তুলোধুনো করে বিরাট কোহলি শতক করেন, ম্যাচও জিতিয়ে দেন। রানের বন্যা বয়ে যায়। গত বছর এ স্টেডিয়ামে একটিমাত্র টি২০ হয়। সেটিতে পেসাররা কিছুই করে দেখাতে পারেনিই। ব্যাটসম্যানদের ম্যাচ হয়ে ওঠে। তাতে করে ভারতকে হারিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। পেস আক্রমণ যতই মজবুত হোক, এ পেস নিয়েই ভয় আছে। এর একটি কারণ জানাও গেল। ধর্মশালা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত। এখানের উইকেট যেমন পেসারদের জন্য সহায়ক, ঠিক তেমনি পেসারদের জন্য বিপজ্জনকও! পেস যত বেশি গতি পায়, ব্যাটসম্যানের ব্যাটের ছোঁয়ায় নাকি তারচেয়েও বেশি গতিতে বল বাউন্ডারির দিকে ছোটে। আর আকাশে কোনভাবে বল তুলে দিতে পারলে দ্রুতগতিতে বল শূন্যে ভেসে বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ দলে যেমন ‘কাটার’ খ্যাত মুস্তাফিজুর রহমান, ‘ইয়র্কার’ খ্যাত আবু হায়দার রনি, বাংলাদেশ দলে গতির রাজা হয়ে ওঠা তাসকিন আহমেদ, ‘ভ্যারিয়েশন ম্যান’ আল আমিন ও ‘ডিপেন্ডেবল’ মাশরাফি বিন মর্তুজা আছেন, হল্যান্ড দলেও কয়েকজন পেসার আছেন। যারা আতঙ্ক হয়ে উঠতে পারেন। টি২০তে ২৬ ম্যাচেই ৪৩ উইকেট নেয়া আহসান মালিক, ৩৫ ম্যাচে ৪৩ উইকেট নেয়া মুদাসসর বুখারি, ৭ ম্যাচে ৫ উইকেট নেয়া লোগান ভ্যান বিক’রা বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারেন। আরেকজন আছেন, যাকে কোনভাবেই ভুলে গেলে চলবে না। তিনি টিম ভ্যান ডার গাগটেন। ২০১২ সালে যিনি বাংলাদেশকে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে হারিয়ে দিয়েছিলেন। পেস আক্রমণ বাদ দিয়ে যদি কোনভাবে স্পিনাররা জৌলুস ছড়িয়ে ফেলে, সেখানেও আছে আতঙ্ক। বাংলাদেশ দলে স্পিনার বলতে সাকিব আল হাসান আছেন। সঙ্গে আছেন আরাফাত সানি। কিন্তু পেস আক্রমণ যদি শক্তিশালী করা হয় তাহলে কী আর আরাফাত একাদশে সুযোগ পাবেন। তার মানে স্পিনার বলতে শুধু সাকিবকেই ধরতে হবে। তাকে দিয়েই যা করার করতে হবে। হল্যান্ডের সেই মানের কোন স্পিনার না থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় বংশোদ্ভূত হল্যান্ডের পাসপোর্টধারী চায়নাম্যান ১৪ ম্যাচে ১২ উইকেট নেয়া মাইকেল রিপন তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন। রিপনের সঙ্গে বামহাতি অভিজ্ঞ স্পিনার ১৮ ম্যাচে ২৩ উইকেট নেয়া ভ্যান ডার মারউইতো আছেনই। এবার আসা যাক আসল স্থানে। যে স্থানটিই দুইদলের মূল শক্তি বলা চলে। সেটি হচ্ছে ব্যাটিং। ২০১২ সালে যে হল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচটি জিতে সেটি ব্যাটিংয়ের জোড়েই জিতে। দ্বিতীয় ম্যাচে বোলিং ও ব্যাটিং দুটিই ভাল করে হল্যান্ড। যদিও পুরো ২০ ওভারে গিয়ে জয় পায় হল্যান্ড। তবে এক মাইকেল সোয়ার্টকেই যে বাংলাদেশ বোলাররা আটকাতে পারেনি, সেই ভয় এবারও আছে। সোয়ার্ট নেই। তবে তামিম, সৌম্য, সাব্বির, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহদের টেক্কা দেয়ার মতো ব্যাটসম্যান আছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে জেতা ম্যাচে পিটার বোরেন ছিলেন অধিনায়ক। এবারও তিনিই আছেন। ওয়েসলি বারেসি, বুখারি, টম কুপাররাও সেই ম্যাচে ছিলেন। এই ম্যাচেও আছেন। জ্বলেও উঠতে পারেন। স্টেফান মাইবার্গ ও মারউই যে কোন সময় জৌলুস ছড়াতে পারেন। তাতে করে হঠাৎ যে কোন একজনের ব্যাটিং তা-ব দেখাও যেতে পারে। হল্যান্ড অধিনায়ক বোরেনতো বলেই দিয়েছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশের সঙ্গে খেলব। এবং ভাল খেলার চেষ্টা করব।’ জেতার চেষ্টার কথাও উচ্চারিত হয়েছে বোরেনের কণ্ঠে। তার এমন সাহস হওয়ার একটিই কারণ, ম্যাচটি টি২০। আর সেই স্বল্প ওভারের ম্যাচে এর আগেও বড় দলকে হারানোর যোগ্যতা দেখিয়েছে হল্যান্ড। টি২০ বিশ্বকাপে তো ইংল্যান্ড যেন তাদের শিকারেই পরিণত হয়েছে। ২০০৯ সালে যখন প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপ খেলে হল্যান্ড, প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়। চমক জাগায়। বোরেন নিজেই ৩০ রান করে সেই ম্যাচে জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। এরপর ২০১৪ সালে গত টি২০ বিশ্বকাপেও তো ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দেয় হল্যান্ড। ব্যাট হাতে বারেসি (৪৮) ও মাইবার্গ (৩৯) মিলে দলকে ১৩৩ রানে নিয়ে যান। এরপর ৩ উইকেট করে নিয়ে বুখারি ও ভ্যান বিক ম্যাচই জিতিয়ে দেন। বড় টুর্নামেন্টে যে অঘটন ঘটাতে পটু হল্যান্ড, তা বোঝাই যাচ্ছে। বড় দল তাদের শিকার হয়। সেই বড় দলটি কী এবার বাংলাদেশ? হল্যান্ডের বিপক্ষে যে বাংলাদেশ জিতবে, তা ধরেই নেয়া হচ্ছে। এশিয়ার সেরা দুই দলের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। টি২০ বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ টি২০ হয়। টুর্নামেন্টে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দলকে পেছনে ফেলে ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। দলের ওপর এখন সবার বিশ্বাস এসে গেছে, টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোই যেখানে পারে না, সেখানে আইসিসির সহযোগী দলগুলো কিভাবে কুলিয়ে উঠতে পারবে? এরপরও খেলাটি হচ্ছে ভারতে, হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায়। যেখানের ঠা-া আবহাওয়ায় এর আগে কখনই খেলেনি বাংলাদেশ। অঘটন ঘটে গেলেও যেতে পারে। তাই সাবধান থাকাটাই আসল কাজ। সেই সাবধান হওয়ার বিষয় যখন আসছে, তখন হল্যান্ড তো ‘আতঙ্ক’ হয়ে ধরা দিচ্ছেই।
×