ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাবেশ, আলোচনা সভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নারী দিবস পালন

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৯ মার্চ ২০১৬

সমাবেশ, আলোচনা সভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নারী দিবস পালন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্যক্তি থেকে কর্মজীবন-সমাজের প্রতিটি স্তরে সমঅধিকারের দাবি নিয়ে মঙ্গলবার পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠন র‌্যালি, মানববন্ধন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে। গণমাধ্যমে নারী দিবস নিয়ে ছিল নানা আয়োজন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৬ : সমতার প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ঘোষণা দেয়া হয় যে, আগামী বছর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারী সাংবাদিকদের সম্মাননা, সংবর্ধনা ও ফেলোশিপ দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে প্রতিবছর দুই জন নারী সাংবাদিককে সম্মাননা দেয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, প্রেসক্লাব প্রথমবারের মতো নারী দিবসে আলোচনা সভার আয়োজন করে প্রমাণ করেছে জাতীয় প্রেসক্লাবে নারী-পুরুষের সমতা রয়েছে। নারী দিবসে একজন প্রিন্ট ও একজন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নারী সাংবাদিককে সম্মাননা দিলে সাংবাদিকতা পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মেয়েরা খুবই মেধাবী। এ জন্য সাংবাদিকতার মতো একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। তিনি বলেন, নারী তার দক্ষতা, আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে যাবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী সম্মাননার পাশাপাশি নারী সাংবাদিকদের উৎসাহ দিতে ফেলোশিপ চালু করারও ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, নারী সাংবাদিকদের শুধু নারী হিসেবে নয়, বন্ধু হিসেবে এ সম্মান জানাতে চাই। নারী সাংবাদিকদের কর্মদক্ষতা বাড়াতেও কাজ করবে জাতীয় প্রেসক্লাব। জাতীয় প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো এ আয়োজন হলেও ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে তা করা হবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা পেশায় টিকে থাকেন এমন নারীর সংখ্যা খুবই কম। যারা টিকে থাকেন তারা অনেকটা যুদ্ধ করে টিকে থাকেন। সম্মাননার মাধ্যমে তাদের উৎসাহ দেয়া হবে। নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নি বলেন, টিভি সাংবাদিকতায় নারীদের যত অংশগ্রহণ আশা করেছিলাম তত করেনি। ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় নারীদের নিরাপত্তা বিধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। পুরুষ সহকর্মীরা সহযোগিতা করলে নারী-পুরুষের ব্যবধান কমে আসবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিও এক বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করে। এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী খামারবাড়ির কেআইবি কমপ্লেক্সের থ্রি-ডি সেমিনার হলে ‘কৃষি উন্নয়নে নারীর ভূমিকা শীর্ষক’ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বক্তারা বলেন, শুধু কৃষিক্ষেত্র নয়, কৃষির শাখা-উপশাখাতেও নারীরা ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। ফসল উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্র ছাড়াও পশুপালনেও সমান ভূমিকা রাখছে। তবে নারী শ্রমিকদের মজুরির ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। একই পরিশ্রম করে কম মূল্য পাচ্ছেন। তবে সে দিন খুব বেশি দূরে নয়, নারীরা অচিরেই কৃষক হিসেবে মর্যাদা পাবেন। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নারীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। উচ্চতর গবেষণায় পারিবারিক চাপ ও সহকর্মীদের নেতিবাচক মানসিকতার কারণে নারীরা পিছিয়ে আছে, সামনের কাতারে নিয়ে আসার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন এবারই প্রথম নারী দিবসে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংগঠনের পক্ষে দিবসটি উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়, এতে নারী-পুরুষ কৃষিবিদরা অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি কৃষিবিদ চত্বর থেকে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা হয়ে পুনরায় কৃষিবিদ চত্বরে এসে শেষ হয়। এর আগে কৃষিবিদ চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিমিন হোসেন (রিমি) এমপি বলেন, শুধু কৃষিক্ষেত্র নয়, কৃষির শাখা-উপশাখাতেও নারীরা ব্যাপক অবদান রেখে চলছে। ফসল উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্র ছাড়াও পশুপালনেও সমান ভূমিকা রাখছে। দারিদ্র্য নিরসন ও খাদ্য নিরাপত্তায় নারীর ভূমিকা অনেক। সরকার কৃষিনীতি প্রণয়ন করেছে। কৃষিতে নারীর অর্থনৈতিক দিকটির কথা বিবেচিত হচ্ছে। খুব বেশি দূরে নয়, নারীরা দ্রুতই কৃষক হিসেবে মর্যাদা পাবেন। তিনি আরও বলেন, নারী-পুরুষ সভ্যতার দুটি হাত, কেউ কারও চেয়ে কম নয়। সমানে সমান। বৈষশ্য দূর করে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে গেলেই সমাজের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর নাজমা শাহীন তার বক্তব্যে বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অবদান নিয়ে আলোচনার চেয়ে কৃষিতে নারীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি আরও গুরুত্ব দেয়া উচিত। কৃষিতে দেশের উন্নয়ন হলেই নরীর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে। পরিবারে নারীরা ব্যাপক অবদান রাখলেও তারা খাবার কম খাচ্ছে। উচ্চতর গবেষণায়ও নারীরা পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউশনের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. তালুকদার নুরুন্নাহার বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে অধিকার, মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান লক্ষ্যটি অর্জন করতে আমাদের কি করণীয় উচিত তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হওয়া উচিত। নারীর মজুরির ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে, একই পরিশ্রম করে কম মূল্য পাচ্ছেন। উর্ধতন মহলকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, উদ্যোগ নিতে হবে। এখনও অনেক ক্ষেত্রে নারীদের কম দক্ষ বিবেচনা করা হয়, কিন্তু কেন? অথচ গবেষণায় অনেকক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রথম নারী কৃষিবিদ বিলকিস আমিনা হককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সিমিন হোসেন (রিমি) এমপি। এর আগে তার দীর্ঘ জীবনের ওপর তথ্যনির্ভর একটি সøাইড শো প্রদর্শন করা হয়। সম্মাননা পাওয়ার পর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে আমিনা হক বলেন, আমার এই দীর্ঘ চলার পথে পরিবার থেকে শুরু করে প্রায় সবারই সহযোগিতা পেয়েছি। নারীর কোন অংশে পিছিয়ে থাকার নয়। সত্যিকার অর্থে চলার পথে আমার অভিজ্ঞতা খুব সুন্দর। সম্মাননা প্রদানের জন্য এ সময় আয়োজকদের তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মাহফুজা বেগম, স্বাগত্য বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ প্রফেসর ড. নীতীশ চন্দ্র দেবনাথ। সংঠনের সভাপতি কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব খাদ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. মাইক রবসন, কেআইবির মহাসচিব কৃষিবিদ মোহাম্মদ মোবারক আলী ও কৃষিবিদ ড. আব্দুস সাত্তার মল্ডল।
×