ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ষড়যন্ত্রের পরাজয় আর সত্যের জয় হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৯ মার্চ ২০১৬

ষড়যন্ত্রের পরাজয় আর সত্যের জয় হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সর্বোচ্চ আদালত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ফাঁসির দ- বহাল রাখায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সত্যের জয় ও প্রজন্মের বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে মনে করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহ। নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রত্যাশিত রায়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার ও অর্থলগ্নি কিছুটা হলেও অবসান হয়েছে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালতের ওপর এ প্রজন্মের আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে, টাকা দিয়ে সব কেনা যায় না। ষড়যন্ত্র করে ন্যায়বিচারকে কেউ বাধাগ্রস্তও করতে পারে না। এদিকে রায়ের প্রতিবাদে জামায়াত শিবিরের ডাকা আজকের হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। বেলা ১১টায় শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে হরতালবিরোধী মিছিলের ডাক দেয়া হয়েছে মঞ্চের পক্ষ থেকে। গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সম্পন্ন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ॥ সর্বোচ্চ আদালতে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর দ- বহাল রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এতে বলা হয়, আল বদর বাহিনীর তৃতীয় প্রধান একাত্তরের কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর যোগ্য শাস্তি নিশ্চিত হওয়ায় যুদ্ধাপরাধ বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সম্পন্ন হয়েছে। ‘হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর অন্যতম দোসর হিসেবে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ত্রাস ছিলেন মীর কাশেম আলী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রত্যক্ষবিরোধী জামায়াতের অন্যতম প্রধান অর্থ জোগানদাতাও ছিলেন তিনি। তাই ফোরাম মনে করে, দেশের শীর্ষ আদালতের এ রায়ে ন্যায়বিচার সমুন্নত হয়েছে। ফোরামের চেয়ারম্যান কে এম সফিউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে টাকা দিয়ে সব কেনা যায় না। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার হয়েছে। আমরা খুশি। খুব ভাল হয়েছে। অন্যায় করলে যে দ- পেতে হয় তা নিশ্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে কত কথা শোনা গেছে। মীর কাশেম মনে করত টাকা দিয়ে সব করা সম্ভব। প্রমাণ হয়েছে টাকা দিয়ে সবাইকে কেনা যায় না, এ বিচারের মাধ্যমে সেটা প্রমাণ হয়েছে। মীর কাশেমসহ সব যুদ্ধাপরাধীন দ- দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তিনি। ন্যায়বিচারকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না- আওয়ামী লীগ ॥ সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের প্রতিক্রয়ায় বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো সর্বোচ্চ আদালতের ন্যায়বিচারকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তারা মীর কাশেম আলীর ফাঁসি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, এ রায় জাতির প্রত্যাশিত রায়। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে পুরো জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। প্রত্যাশিত এই রায় দ্রুত কার্যকর করে জাতিকে কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, এ রায়কে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে যে বিতর্ক চলছে তা এ রায়ের ওপর কোন প্রভাব ফেলেনি। মীর কাশেম আলীর সম্পদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর সর্বোচ্চ আদালতে বহাল রাখা ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সকল শহীদ পরিবারের সদস্যরা ও সকল জনগণ শুকরিয়া আদায় করছে। বাংলার মানুষ ন্যায়বিচার পেয়েছে। এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেমের ফাঁসির রায় ঠেকাতে জামায়াত-শিবিরের সকল প্রকার প্রয়াস আজ ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে রায় প্রকাশের পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশও করেছে দলটি। আনন্দ মিছিলটি দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে শেষ করে। সমাবেশ থেকে দ্রুত মীর কাশেমের ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানানো হয়। ষড়যন্ত্র পরাজিত হয়েছে- গণজাগরণ মঞ্চ ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দ-িত রাজাকার মীর কাশেম আলীর ফাঁসি বহাল রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ইমরান এইচ সরকার বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে জনগণের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন হয়েছে। ধনকুবের যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেমকে রক্ষার জন্য দেশবিরোধী অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত পরাজয় হলো। রায়ের মাধ্যমে দেশবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রের বিপরীতে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতার বিজয় অর্জিত হয়েছে, প্রমাণিত হয়েছে ন্যায্য আন্দোলনের শক্তির কাছে কোন ষড়যন্ত্রই বাধা হতে পারে না। এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে এ রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে উল্লেখ করে ইমরান বলেন, এ রায় প্রদান করে আদালত প্রমাণ করেছেন, তারা আপস করেননি বরং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে যুদ্ধাপরাধী অপশক্তির ষড়যন্ত্রের যবনিকাপাত ঘটিয়েছেন। একইসঙ্গে আমরা আশা করছি জামায়াতে ইসলামীর আমির রাজাকার মতিউর রহমান নিজামীসহ বাকি যে মামলাগুলো আপীল বিভাগে ঝুলে আছে তারা সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেবেন। কেননা আমরা এর আগেও দেখেছি, এই যুদ্ধাপরাধী চক্র সর্বশক্তি দিয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করে। যাতে সেই সুযোগে তারা নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করার সুযোগ পায়। এমনিতেই ৪৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে, এখন আদালতের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করুন। যাতে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয় এবং দেশবিরোধী অপশক্তি নতুন করে ষড়যন্ত্রের সুযোগ না পায়। যুদ্ধাপরাধীর স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি বাজেয়াফত করে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানিয়ে ইমরান বলেন, যাতে বিপুল সম্পদকে ব্যবহার করে এই সন্ত্রাসীরা নতুন কোন নাশকতার পরিকল্পনা করতে না পারে। কিংবা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে। রায়কে কেন্দ্র করে সকাল ৮টা থেকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান নেয় গণজাগরণ মঞ্চ। আপীল বিভাগে মীর কাশেমের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় বহাল রাখার ঘোষণার পর উল্লাসে ফেটে পড়েন মঞ্চের কর্মীরা। এরপর শাহবাগ থেকে একটি আনন্দ মিছিল নিয়ে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার শাহবাগে ফিরে আসেন। মৃত্যুদ-াদেশ ন্যায়বিচারের পক্ষে- সিপিবি ॥ যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায় সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ বহাল রাখায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) স্বস্তি প্রকাশ করেছে। পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এক বিবৃতিতে এ রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রায়ের পর গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধের জন্য মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ-াদেশ ন্যায়বিচারের পক্ষে। এই রায়ে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও স্বস্তি প্রকাশ করছি। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ব্যক্তির পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও শক্তি এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ যেসব দেশ ও মহল যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে দ্রুতই উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করতে হবে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ, আদালত কর্তৃক ঘোষিত যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াত-শিবিরকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। প্রজন্মের জয়- বোয়াফ ॥ একাত্তরে বদর নেতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাশেম আলীর আপীলেও ফাঁসি রায় বহাল থাকায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সত্যের জয় ও প্রজন্মের বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)। মঙ্গলবার সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাকিবের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বোয়াফ সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় বলেন, নরঘাতক মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাশেম আলীর চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদ- বহাল থাকায় স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার ও অর্থলগ্নির কিছুটা হলেও অবসান হয়েছে এবং ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতের ওপর এ প্রজন্মের আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
×