ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফেডারেল রিজার্ভ তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারবে না- অর্থমন্ত্রী মুহিত

বাংলাদেশের রিজার্ভ অর্থ চুরির অভিযোগ নাকচ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৯ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশের রিজার্ভ অর্থ চুরির অভিযোগ নাকচ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে ফেডারেল রিজার্ভে থাকা এ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ চুরির কোন নথিপত্র ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে নেই। সোমবার অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক এ্যাকাউন্টে রক্ষিত স্থিতি ‘হ্যাকড’ হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করলেও তবে কি পরিমাণ অর্থ গায়েব হয়েছে তা জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পাওয়ার আগেই লেনদেনটা সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং ফেডারেল রিজার্ভ কোনমতেই তাদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। হ্যাকারদের এই অর্থ লোপাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন দায় দেখছেন না অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকারদের হাতিয়ে নেয়া অর্থ ফেরতে প্রয়োজনে মামলা করবেন বলে জানান তিনি। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মুখপাত্র আন্দ্রেয়া প্রিস্ট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে ফেডারেল রিজার্ভে থাকা এ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ চুরির মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ চুরির কোন নতিপত্র ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে নেই। ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই। ফেডারেল সিস্টেমে দুর্নীতিরও কোন প্রমাণ নেই। সোমবার অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক এ্যাকাউন্টে রক্ষিত স্থিতি থেকে ‘হ্যাকড’ হওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অর্থের একাংশ ইতোমধ্যে আদায় করা সম্ভব হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থের গন্তব্য শনাক্ত করে তা ফেরত আদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইটেলিজেন্স ইউনিট ফিলিপিন্সের এন্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে। ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সের এন্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষ তাদের দেশের আদালতে মামলা দায়ের করেছে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবগুলোর ফ্রিজ (জব্দ) আদেশ আদালত থেকে সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সাইবার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক ও তার ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন টিম এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের টিমের সঙ্গে কাজ করছেন। এতে আরও বলা হয়, ফিলিপাইনের এ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অর্থ ফেরত আদায়ের আদালতে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে বিশ্বব্যাংকের স্টোলেন এ্যাসেটস রিকভারি (এসটিএআর) প্রক্রিয়াও অবলম্বিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে তদন্তলব্ধ তথ্যাদি অপ্রকাশিত রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বৃহত্তর আর্থিক খাতে সাইবার নিরাপত্তা সার্বিকভাবে নিñিদ্র করার প্রক্রিয়া জোরালভাবে সচল রাখা হয়েছে। এদিকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকারদের হাতিয়ে নেয়া অর্থ ফেরতে প্রয়োজনে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী। হ্যাকারদের এই অর্থ লোপাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন দায় দেখছেন না অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এখানে কোন রকমের দোষ কিছু নেই। এটা ফেডারেল রিজার্ভের, যারা এটা সেখানে হ্যান্ডেল করেন, তাদের কোন গোলমাল হয়েছে। তারা যদিও বলছে, তাদের কোন দায়িত্ব নেই; তবে এটা হতেই পারে না। কারণ দেখা যায়, আমি যা শুনেছি বা জেনেছি, ওখান থেকে তারা (ফেডারেল রিজার্ভ) বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বার্তা প্রেরণ করেন। আমরা তোমাদের এ রকম একটা হুকুম পেয়েছি। তোমরা এটা কনফার্ম কর। জবাবে তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) বলেছে, এটা ফলস। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনা পাওয়ার আগেই লেনদেনটা হয়েছে। সুতরাং ফেডারেল রিজার্ভ কোনমতেই তাদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারবেন না। এ ঘটনায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের মুখপাত্র আন্দ্রেয়া প্রিস্টের অস্বীকারের পর সরকার কোন পদক্ষেপ নেবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অফকোর্স। আমরা কী করব, তার বিরুদ্ধে কেস করব। তাদের কাছে টাকা রাখছি, তারাই এই জন্য রেসপনসিবল। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে কেস করব। কোন তদন্ত করা হবে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংক ভাল বলতে পারবে। এদিকে এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট এ্যান্ড বাজেট ডিপার্টমেন্টের ব্যাক অফিসের (সিলিং) ৮ কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের সঙ্গে র‌্যাব ও পুলিশের একটি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ নিয়ে ব্যাক অফিসে (সিলিং) এ্যাকাউন্ট এ্যান্ড বাজেট ডিপার্টমেন্টে কাজ করেন ৮ কর্মকর্তা। পাশাপাশি এদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে বলে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে। এছাড়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়টি অব্যাহত রয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ হ্যাক হয়েছে বলে সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। একদিন পরই মঙ্গলবার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে কোন ধরনের হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।
×