ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আদালত অবমাননার অভিযোগে দুই মন্ত্রীকে তলব

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ মার্চ ২০১৬

আদালত অবমাননার অভিযোগে দুই মন্ত্রীকে তলব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর আপীলের রায়ের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের করা মন্তব্য আদালত অবমাননাকর উল্লেখ করে তাদের তলব করেছে সুপ্রীমকোর্ট। মঙ্গলবার মীর কাশেমের রায় ঘোষণার আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের নয় বিচারপতির (পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ) বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী ১৫ মার্চ হাজির হয়ে ওই বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে তাদের। আদেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, নির্দেশনা মেনেই আদালতে ব্যাখ্যা দিতে যাব। তবে ব্যাখ্যা দিতে সময় চাইবেন বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী। বেঞ্চের অপর আট সদস্য হলেন- বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক ও বিচারপতি মোহম্মদ বজলুর রহমান। মঙ্গলবার সকাল ৯টা বাজার কিছু আগেই সুপ্রীমকোর্টের ১ নম্বর আদালতে (প্রধান বিচারপতির আদালত) উপস্থিত হতে থাকেন মামলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও গণমাধ্যমকর্মীরা। আদালতে ঢুকতে থমকে যায় সবাই। কারণ মীর কাশেমের আপীল শুনানি গ্রহণকারী বেঞ্চটি পাঁচ সদস্যের হলেও নয় বিচারপতির (পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ) বসার ব্যবস্থা করছেন আদালতের কর্মচারীরা। আদালতের পরিস্থিতি দেখে দুই মন্ত্রীকে তলব করা হতে পারে, এমন গুঞ্জন শুরু হয় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সুপ্রীমকোর্টের নয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এজলাসে ওঠেন। চেয়ারে বসেই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এ্যাটর্নি জেনারেলকে ডাকেন। এ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়াতেই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে অশুভ ও অবমাননাকর বক্তব্যে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা স্তম্ভিত, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।’ পরে দুই মন্ত্রীকে তলবের আদেশ দেন সুপ্রীমকোর্ট। মীর কাশেম আলীর রায়ের আগে দুই মন্ত্রীকে তলবের আদেশ আসায় রায় হবে কী হবে না, এ নিয়েই তৈরি হয়েছিল সঙ্কট। সোমবার সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় এক নম্বরে মামলাটি রায়ের জন্য রাখা হলেও সকালে প্রকাশিত কার্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় মামলাটি। এ কারণেই রায় ঘোষণার আগে ৩৫ মিনিট সময় কেটেছে উৎকণ্ঠায়। সকাল ৯টা ৫ মিনিট থেকে ৯টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত রায় হবে কি হবে না, প্রথমবারের মতো এ ধরনের দ্বিধা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে জানা যায়, ভুলবশত মামলাটি মুদ্রিত কার্যতালিকা থেকে বাদ পড়েছিল। গত শনিবার রাজধানীর বিলিয়া মিলনায়তনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় দুই মন্ত্রীর দেয়া যে বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে তা বিচার প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ এবং সুপ্রীমকোর্টের সম্মান ও মর্যাদাকে হেয় করার শামিল বিবেচনা করে কারণ দর্শাতে নোটিস দেন আপীল বিভাগ। ওই গোলটেবিলে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মীর কাশেম আলীর আপীলের পুনরায় শুনানিও চেয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে পদ ছাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেন। ওই বক্তব্যের কারণে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কার্যক্রম কেন শুরু করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে সুপ্রীমকোর্টের নোটিসে। দুই মন্ত্রীকে ১৫ মার্চ সকাল ৯টায় হাজির হয়ে এর জবাব দিতে হবে। দুই মন্ত্রীর তলবের আদেশ দেয়ার কিছু সময় পরই আদালত থেকে বেরিয়ে যান মীর কাশেমের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এর পরপরই কার্যতালিতায় মীর কাশেমের মামলাটি না থাকার বিষয়টি নজরে আসে আদালতের। পরে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, সাপলিমেন্টারি কার্যতালিকায় না থাকায় আজ রায় হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে। এর বেশি এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এ সময়ের মধ্যেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে রায় না হওয়ার বিষয়টি। রায় কবে হবে এ বিষয়টিও যানা যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকেন বিচারপ্রার্থীরা। এ সময় সকলেই উৎকণ্ঠায় পড়ে যান। রায় না হওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর পর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বুঝতে পারলে বেঞ্চ অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে দেখা যায় ভুল বশত কার্যতালিকা থেকে মামলাটি বাদ পড়েছে। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, কনটেমট মামলাটি ১ নম্বরে ও মীর কাশেম আলীর আপীল মামলাটি ১(ক) নম্বরে রাখতে বলা হয়েছিল। তবে সেটি ভুলবশত হয়নি। এর পর তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধিত কার্যতালিকা প্রস্তুত করা হলে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় ঘোষণা করে সুপ্রীমকোর্ট। খাদ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, অবমাননার অভিযোগ নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে তিনি আদালতের কাছে সময় চাইবেন। তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত স্বস্তি প্রকাশ করছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, এই মামলার ১৬ কোটি বাদীর একজন হিসেবে এই রায়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আমরা যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি, এর মধ্যে দিয়ে তাদের ভা-ারে আরও একটি সাফল্য যোগ হলো বলেও মন্তব্য করেন কামরুল। নিজের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আদালতেরে প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আদালতের দিকনির্দেশনা অনুয়ায়ী যাব। আদালত রুলনিশি জারি করেছেন, আমি টেলিভিশনে দেখেছি। তিনি বলেন, হয়ত আদেশের কাগজ পেয়ে যাব। আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই সেই রুল নিশির জবাব দেব এবং আদালত যেভাবে নির্দেশ দেবেন সেভাবেই আমি অগ্রসর হব। তিনি বলেন, আমি আজই (মঙ্গলবার) দেশের বাইরে যাচ্ছি। একটি সরকারী সফরে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর যাব। ১৬ বা ১৭ তারিখ দেশে ফিরব। আমি আদালতের কাছে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় প্রার্থনা করব। এই সফরের জিও গত ২ মার্চ হয়েছে, আজ মালয়েশিয়াতে একটি কনফারেন্সে যাচ্ছি। মন্ত্রী হিসেবে নয়, যুদ্ধাপরাধ মামলা নিয়ে ওই বক্তব্য ছিল ব্যক্তিগত বলে মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু যত কথাই বলি না কেন, আমি যে মন্ত্রিসভার একজন সদস্য এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। কিন্তু বক্তব্য ছিল আমার নিজস্ব বক্তব্য, একজন বিচারপ্রার্থী মানুষ হিসেবে, যোগ করেন কামরুল।
×