ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তুষ্ট দেশবাসী;###;পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আপীলের সুযোগ;###;রিভিউ আপীলে না গেলে রায় কার্যকরে কোন বাধা থাকবে না

ফাঁসিই বহাল ॥ আপীল বিভাগে মীর কাশেমের রায় ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ মার্চ ২০১৬

ফাঁসিই বহাল ॥ আপীল বিভাগে মীর কাশেমের রায় ঘোষণা

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মুত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর কমান্ডার, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর আপীল এক মিনিটে আংশিক খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। ১২ নম্বর অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসীম হত্যার দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপীল বেঞ্চ মঙ্গলবার সকালে পিনপতন নীরবতার মধ্যে এই রায়ের সংক্ষিপ্ত সার জানিয়ে দেন। এই বেঞ্চের অন্য চার সদস্য হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এজলাসে ওঠেন। প্রথমেই প্রধান বিচারপতি ও বিচারাধীন বিষয় নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ার জন্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেনকে তলব করা হয়েছে। ১৫ মার্চ এই দুই মন্ত্রী সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে তাদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর পর পুনরায় সকাল ৯টা ৪১ মিনিটে বিচারপতিসহ ৫ বিচারপতি এজলাসে আসেন। এক মিনিটের মাথায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মীর কাশেমের মৃত্যুদ- হওয়ার মধ্য দিয়ে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল। মীর কাশেম আলীর রায়কে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল। রায়ে তার মৃত্যুদ- বহাল থাকবে না দ- কমবে। মৃত্যুদ- বহাল রাখায় আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক , সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, এ্যাটর্নি জেনারেল, গণজাগরণ মঞ্চ, তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউটরসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া ২,৩,৭,৯,১০,১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগের দ- বহাল রেখেছেন আপীল বিভাগ। সব মিলিয়ে আপীল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের দুটি অভিযোগের মধ্যে একটিতে খালাস ও আরেকটিতে ফাঁসির আদেশ ৬টি অভিযোগে ৫৮ বছরের দ- পেয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল ৪,৬,১২ দ- প্রদান করলেও আপীল বিভাগ এ অভিযোগ থেকে মীর কাশেম আলীকে খালাস দিয়েছেন। এই তিনটিতে দুটিতে ১৪ বছর ও একটিতে ফাঁসির আদেশে খালাস দিয়েছেন। রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবীরা উল্লাস করে সেøাগান দিতে থাকে। ফাঁসি হলো ফাঁসি হলো মীর কাশেমের ফাঁসি হলো। এ নিয়ে আপীল বিভাগে সপ্তম চূড়ান্ত রায় প্রদান করা হলো। রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির ও মুরাদ রেজা, চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এসএম শাহজাহানসহ অর্ধশতাধিক জামায়াতপন্থী আইনজীবী। এ ছাড়া দেশী-বিদেশী মিডিয়ার শতাধিক সংবাদ কর্মী মীর কাশেম আলীর রায়ের খবর সংগ্রহের জন্য আদালতের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। মীর কাশেমের মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় ১(এ) নম্বরে ছিল। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামি উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রাষ ঘোষণার জন্য ৮ মার্চ দিন ধার্য করে আদেশ দেয় আপীল বিভাগ। রায় ঘোষণার পর আইনমন্ত্রী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায়ে সরকার ও জনগণ সন্তুষ্ট। রিভিউ আবেদন না করলে রায় কার্যকর করতে বিলম্ব করা হবে না। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় পেয়েছি। আমি এ রায়ে খুশি। অন্যদিকে আসামি পক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রায়কে কেন্দ্র করে সুপ্রীমকোর্টের ভেতর ও বাইরে কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। সুপ্রীমকোর্টের মূল প্রবেশদ্বারসহ অন্য প্রবেশ দ্বারগুলোতে সুপ্রীমকোর্টে আগতদের চেক করে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। এ ছাড়া এজলাসে ঢোকার সময় সাংবাদিকসহ অন্যান্যদের আইডি কার্ড প্রদর্শন করে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। এদিকে মীর কাশেম আলীর পতœী খন্দকার আয়েশা খাতুন বলেছেন, এ রায়ের আইনী ভিত্তি নেই। আপীলের রায়ে যে তিনটিতে ট্রাইব্যুনালে দ- পেয়েছিলেন, তার মধ্যে ৪,৬,১২ অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে আপীল বিভাগ। আর ২,৩,৭,৯,১০,১১,১৪ নং অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দ- বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। আপীল আদালত ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে মীর কাশেমকে খালাস দিয়েছেন, যেখানে তাকে মৃত্যুদ- দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগে সাত বছর করে সাজার রায় থেকেও এই জামায়াত নেতা খালাস পেয়েছেন। আপীল নাকচ করে ১১ নম্বর অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসীম উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজনকে হত্যার দায়ে মীর কাশেমের সর্বোচ্চ সাজার রায়ই বহাল রাখা হয়েছে। একই সিদ্ধান্ত হয়েছে ২, ৩, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ের সাজার ক্ষেত্রেও। পরবর্তী ব্যবস্থা ॥ এখন নিয়ম অনুযায়ী, সুপ্রীমকোর্ট এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। সেটি হাতে পেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই মৃত্যু পরোয়ানা ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ। পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবে আসামি পক্ষ। তবে রিভিউ যে আপীলের সমকক্ষ হবে না, তা যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ‘রিভিউ’ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়েই স্পষ্ট করা হয়েছে। রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদ- বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দেয়া হবে। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন। সপ্তম রায় ॥ মীর কাশেমের আপীল চূড়ান্ত রায়টি হলো আপীল বিভাগের সপ্তম রায়। এর আগের ছয়টি রায়ের মধ্যে চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর দুই পক্ষের করা রিভিউ আবেদন এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আর সর্বশেষ রায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর সর্বোচ্চ সাজা বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হলে দ- কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বাংলাদেশের জনগণ সন্তুষ্ট ॥ রায়ের পর আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকার্য সম্পন্ন হয়, আর আমরা বারংবার সন্তুষ্ট হই। সেই একই ধারাবাহিকতায় আজকের রায়ে সরকার এবং আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের জনগণ সন্তুষ্ট। ‘আমরা আশা করি যে, আইনী প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তির মাধ্যমে এই রায় আমরা কার্যকর করতে পারব ইন্শা আল্লাহ।’ রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশনের রায়ে বলা হয়, রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আসামি রিভিউ পিটিশন করতে পারবেন। ‘অপেক্ষা করব এই ১৫ দিনের জন্য। তারা যদি রিভিউ পিটিশন দাখিল না করে তাহলে আমরা এই রায় কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ মীর কাশেম আলী রিভিউ আবেদন করলে তার শুনানি শেষে যে রায় হয় সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও দুই মন্ত্রীকে তলবের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি নন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মঙ্গলবার রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এই বক্তব্য (দুই মন্ত্রীর) সরকারের নয়, সেহেতু আমি বলব আস্থাহীনতার কোন অবকাশ এখানে নেই।’ আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য না করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সকলের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে যে, বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্ট একটা প্রতিষ্ঠান, ইট ইজ এন ইনস্টিটিউশন। দৃঢ় মনোভাবেই বিচার হচ্ছে ॥ সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম রায় ঘোষণার পর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোভাবের কারণেই মানবতাবিরোধীদের বিচার হচ্ছে। ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’ মঙ্গলবার সকালে মীর কাশেম আলীর আপীলের রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যাশিত ফল পেয়েছি। যুদ্ধাপরাধী যারা সেই সময় ইসলামী ছাত্র সংঘের পাকিস্তানের নেতা ছিলেন, সেই নিজামী দন্ডিত হয়েছেন, পূর্ব পাকিস্তানের যিনি সভাপতি ছিলেন মুজাহিদ দ-িত হয়েছেন। মুজাহিদের সঙ্গে মীর কাশেম ছিলেন সেক্রেটারি, তিনিও আজ দ-িত হয়েছেন।’ সন্তুষ্ট প্রসিকিউশন পক্ষ ॥ অন্যান্যের মতো রায়ে প্রসিকিউশন পক্ষও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু জনকণ্ঠকে বলেছেন, রায়ে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় পেয়েছি। অন্যদিকে প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা ও প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজও বলেছেন, তারা রায়ে খুশি। যদিও অনেকেই প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় গাফিলতির অভিযোগ এনেছিলেন। তথাপি ট্রাইব্যুনালের দ- আপীল বিভাগ বহাল রাখায় প্রসিকিউশন পক্ষ খুশি। তুরিন আফরোজ বলেন, এর পরও কোন অদক্ষতা ধরা পড়লে তা শুধরে নেবেন তারা। আইনগত ভিত্তি নেই ॥ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায় আপীল বিভাগে বহাল রাখার ‘আইনগত ভিত্তি নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন এই যুদ্ধাপরাধীর স্ত্রী খোন্দকার আয়েশা খাতুন। মঙ্গলবার রায়ের পর এক বিবৃতিতে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বিচার বিভাগ কি আসলেই স্বাধীন?’ গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে আয়েশা খাতুন বলেন, ‘মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্য-প্রমাণ আনা হয়েছে, তা কোনভাবেই অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট নয়, যা মামলার যুক্তিতর্ক চলার সময়ে প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন মন্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়। ‘সুতরাং মৃত্যুদ- বহাল রাখার মতো কোন আইনগত ভিত্তি নেই।’ পরিবারের সঙ্গে কথা বলে রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত ॥ মীর কাশেম আলীর রায় ঘোষণার পর খন্দকার মাহবুব হোসেন, ‘রায় সম্পর্কে কোন মন্তব্য নেই। তবে ভবিষ্যত ইতিহাস এ রায় পর্যালোচনা করবে, মূল্যায়ন করবে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রায় নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা তা কোন কিছুর ওপর নির্ভর করে না।’ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা হবে কি না -এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওনার (মীর কাশেম) ছেলে এখানে উপস্থিত আছেন। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে রিভিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ অনুলিপির অপেক্ষায় ॥ সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকায় একাত্তরের বদর নেতা মীর কাশেম আলীর দ- কার্যকরে এবার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের অপেক্ষা শুরু হলো। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপীল বেঞ্চ মঙ্গলবার রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেন। এরপর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির জন্য অপেক্ষার কথা শোনা যায় রাষ্ট্র ও আসামি- দুই পক্ষের মুখেই। ওই অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর আসামি রায় পর্যালোচনার আবেদন (রিভিউ) করতে পারবেন। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষারও সুযোগ পাবেন। দুটোই নাকচ হয়ে গেলে সরকার দ- কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে। নিরাপত্তা জোরদার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলীর চূড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে সুপ্রীমকোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকেই কোর্ট এলাকায় অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা সুপ্রীমকোর্টের প্রধান ফটক মাজার গেট এবং বার কাউন্সিল গেটে সাধারণ জনগণ এ প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। প্রত্যেকের দেহ ও ব্যাগ তল্লাশি শেষে তাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতির আদালতের আশপাশেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বদর কমান্ডার থেকে শীর্ষ নেতা ॥ আসামি মীর কাশেম আলী আলবদর বাহিনীর তৃতীয় প্রধান ছিলেন। প্রধানত ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীরাই আলবদর বাহিনীতে যোগ দেয়। ১৯৭১ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামীর নেতা একেএম ইউসুফের নেতৃত্বে খুলনাতে সর্বপ্রথম রাজাকার বাহিনী গঠিত হলেও আলবদর বাহিনী গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল। ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতা মতিউর রহমান নিজামী, প্রাদেশিক নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী প্রমুখকে নিয়ে আলবদর হাইকমান্ড গঠন করা হয়। হাইকমান্ডে ছিলেন, মতিউর রহমান নিজামী ( সমগ্র পাকিস্তানের প্রধান),আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (অবরুদ্ধ বাংলাদেশের প্রধান),মীর কাশেম আলী (প্রথমে চট্টগ্রামের প্রধান,পরে ঢাকার ৩য় প্রধান), মোহাম্মদ ইউনুস (কমান্ডার ইন চীফ), মোহাম্মদ কাজিম উদ্দিন (প্রধান, বদরবাহিনী কেন্দ্রীয় প্রচার),আশরাফ হোসেন (বদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও ময়মনসিংহ জেলা প্রধান), মোঃ শামসুল হক (ঢাকা শহরের প্রধান), মোস্তফা শওকত ইমরান, আশরাফুজ্জামান খান ( বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের প্রধান জল্লাদ),এ এস এম রুহুল কুদ্দুস, সরদার আব্দুস সালাম (ঢাকা জেলা প্রধান), খুররম মুরাদ (জামায়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী ) আব্দুল বারী ( জামালপুর জেলা প্রধান), আবদুল হাই ফারুকী ( রাজশাহী জেলা প্রধান), আব্দুল জায়ের মোঃ নাসির (চট্টগ্রাম জেলা প্রধান), মতিউর রহমান খান (খুলনা জেলা প্রধান), চৌধুরী মঈনুদ্দিন (বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের অপারেশন ইনচার্জ), নুর মোহাম্মদ মল্লিক (ঢাকা শহরের নেতা ), একে মোহাম্মদ আলী (ঢাকা শহরের নেতা); উল্লেখ্য, ইসলামী ছাত্রসংঘের জেলা প্রধানরা স্ব স্ব জেলার রাজাকার বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন আগেই।
×