ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভ্যাট আদায়ে কোন কৌশল কাজে আসছে না

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৯ মার্চ ২০১৬

ভ্যাট আদায়ে কোন কৌশল কাজে আসছে না

এম শাহজাহান ॥ রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় উৎস ‘ভ্যাট’ নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট আদায়ে কোন কৌশলই যেন কাজে আসছে না। দেশে চলছে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ফাঁকির মহোৎসব। শুধু বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে বছরে ৫৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে রফতানিকারকরা। এছাড়া এনবিআরের তালিকাভুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৮০ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিক সুযোগ করে দিয়ে ভ্যাট পরিদর্শকসহ রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা নিচ্ছেন। তবে ভ্যাট ফাঁকিবাজ ও আদায়ে যেসব কর্মকর্তা অনৈতিক সুযোগ নিচ্ছেন তাদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। ফাঁকি ঠেকাতে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। ভ্যাট ফাঁকিরোধে আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন মূসক আইন কার্যকর করা হবে। আইনটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্ট শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটনে নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান ড. নজিবুর রহমান। একইসঙ্গে নিরীক্ষা অধিদফতরকে আরও সক্রিয় হওয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মাঠ পর্যায়ের কমিশনারেটগুলোকে তিনি এসব নির্দেশনা দিয়েছেন। চলতি অর্থবছরে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট খাত থেকে ৬৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে অর্থবছরের শুরু থেকে সতর্ক রয়েছে এনবিআর। ভ্যাট ফাঁকিরোধে র‌্যাবের সহায়তা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও পরবর্তীতে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে ভ্যাট ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিক নজর রাখছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান ড. নজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন। এনবিআর এ বিষয়ে অবগত আছে। ফাঁকিবাজদের আইনের আওতায় এনে ভ্যাট আদায় করবে এনবিআর। শুধু তাই নয়, ভ্যাট আদায়ে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তারাও আইনের আওতায় আসবেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বন্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা হিসাব করে দেখেছেন, যে পরিমাণ বন্ড সুবিধার অপব্যবহার হয় তা ঠেকানো গেলে বছরে দুটি পদ্মা সেতুর সমপরিমাণ অর্থায়ন করা সম্ভব। ফাঁকিরোধে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল, শুল্ক গোয়েন্দা ও ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগকে শক্তিশালী করা হবে। কর্মকর্তারা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছেন। এতে ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ফাঁকিবাজদের সতর্ক করে দিতে চাই, রাজস্ব পরিশোধ করুন। ফাঁকি দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করা হবে। তবে অযথা কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন সেটিও খেয়াল রাখা হবে। এদিকে ভ্যাট নিবন্ধন রয়েছে এমন ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজ পদ্ধতিতে বছরে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ভ্যাট দেয়ার পদ্ধতি করা হয়েছে। তবে এনবিআর মনে করছে, এ ধরনের তালিকাভুক্ত দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ শতাংশই ভ্যাট দেয় না। বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়ের সঠিক হিসাব রাখতে ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) মেশিনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ সূত্র মতে, ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ কমিশনারেটের অধীনে গত অর্থবছরে ৪২ হাজার ৯৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর ছিল। এর মধ্যে আলোচ্য সময়ে ভ্যাট দিয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৩১৮টি প্রতিষ্ঠান। নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আলোচ্য সময়ে ভ্যাট দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভ্যাট পাওয়া গেছে মাত্র ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ ভ্যাটের বাইরেই রয়ে গেছে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।
×