ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ;###;বিশ^বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে কমছে যার প্রভাব দেশেও পড়ছে

৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৯ মার্চ ২০১৬

৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছে আগের মাসের চেয়ে কম হারে। গত তিন মাস ধারাবাহিকভাবে নিম্নমুখী ধারায় ছিল মূল্যস্ফীতি। গেল ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জানুয়ারিতে যা ছিল ৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলমসহ বিবিএসের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শীতকালীন শাক-সবজিতে বাজার ভরে গেছে। কম দামে বাজারে প্রচুর সবজি পাওয়া যাচ্ছে। সবজিসহ সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। বিশ^বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে কমছে। যার প্রভাব দেশেও পড়ছে। যে কারণে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের জীবন-যাত্রার মান বেড়েছে। তাদের বাড়ি ভাড়া দিতে হয় না, কম দামে নানা পণ্য খেতে পারছেন। মুস্তফা কামাল বলেন, দেশেও খাদ্যপণ্যের দাম কম। বিদেশ থেকেও কম দামে খাবার আমদানি হচ্ছে। ডলারের মূল্যও স্থিতিশীল রয়েছে। যে কারণে খাবারের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। তবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা ধরে রাখতে হবে বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য। সব মিলে বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম মূল্যস্ফীতি হবে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি বলতে আগের বছরের নির্দিষ্ট কোন মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকের তুলনায় পরের বছর একই মাসে ওই সূচক যতটুকু বাড়ে তার শতকরা হারকে বুঝায়। অন্যদিকে ১২ মাসের পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির গড় করে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয়। খাদ্য এবং খাদ্য বহির্ভূত বিভিন্ন পণ্য ও সেবার মূল্য নিয়ে বিবিএস মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান তৈরি করে। জাতীয় মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি গ্রাম এবং শহরের মূল্যস্ফীতির আলাদা হিসাব করা হয়ে থাকে। বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, খাদ্যপণ্যে জানুয়ারি মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মূল্যস্ফীতি হার কমেছে। মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, শাক-সবজি, ফল, মসলা, দুধজাতীয় ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর মূল্য বাড়ার হার কম। জানুয়ারিতে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গ্রাম ও শহরে মূল্যস্ফীতির আলাদা হিসাবও দিয়েছে বিবিএস। এতে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণ অঞ্চলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আগের মাস জানুয়ারিতে তা ছিল ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত মাসে শহরাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ। এর আগের মাসে তা ছিল ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। সংস্থাটি বলছে, প্রসাধন সামগ্রী, জুতা, পরিধেয় বস্তু, বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি পণ্য, আসবাবপত্র, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ এবং সেবা খাতের মূল্যস্ফীতির হার উর্ধমুখী হয়েছে। এ কারণে খাদ্যবহির্ভূত খাতে আট শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি। এ খাতে ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বাজেটে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। বিশ^ব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ হবে। বিবিএস বলছে, দেশের গড় মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমে আসছে। গত এক বছরে (মার্চ ২০১৫ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত) গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গতকাল মজুরি সূচকও প্রকাশ করে বিবিএস। সংস্থাটির হিসাবে, ফেব্রুয়ারিতে মাসওয়ারী জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ মজুরির বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জানুয়ারিতে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে নতুন ভিত্তিবছর ধরে (২০০৫-০৬) ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) হিসাব করছে বিবিএস। এর আগে ১৯৯৫-৯৬ ভিত্তিবছর ধরে হিসাব করা হতো।
×