ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আস্থার প্রতীক আল আমিন-সাব্বির

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৮ মার্চ ২০১৬

আস্থার প্রতীক আল আমিন-সাব্বির

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আবারও এশিয়া কাপ হাতছাড়া। গত তিন আসরের দুটিতেই ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ দল। ২০১২ সালের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে এবং এবার ভারতের কাছে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হলো স্বাগতিকরা। তবে এবার ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের দিক থেকে চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান রুম্মান। রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন তিনি। আর সে কারণেই হয়ে গেছেন টি২০ কোন আসরের প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়। আবার বোলিংয়েও সবাইকে ছাড়িয়ে সেরা বাংলাদেশের পেসার আল আমিন হোসেন। তিনি সেরা বোলার হিসেবে পেয়েছেন ‘কুলেস্ট প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’ পুরস্কার। তাই গৌরবটা নেহাত কম হয়নি বাংলাদেশ দলের। এ দুই ক্রিকেটারই দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে আইসিসির সর্বশেষ ঘোষিত টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে ভাল একটা অবস্থানেও চলে এসেছেন। বেশ খারাপ সময় গেছে মাঝে আল আমিনের। গত বছর বিশ্বকাপে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য কোন ম্যাচ না খেলেই বহিষ্কৃত খেলোয়াড় হিসেবে দেশে ফিরে আসতে হয়েছিল। এছাড়া বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটিও ধরা পড়েছিল। সেটা কাটিয়ে স্বপ্নের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নিলেও খেলতে পারেননি। এরপর টানা অনেক সিরিজে তাকে আর দলেই ডাকেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নির্বাচকরা। তবে গত বছর নবেম্বরে তাকে না ডেকে আর উপায় ছিল না। জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে ঘরোয়া সিরিজে ইনজুরির কারণে অপরিহার্য পেসার রুবেল হোসেন এবং তাসকিন আহমেদ ইনজুরিতে থাকায় আবার ফেরেন। ফেরার পর থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন আল আমিন। বিশেষ করে ডেথ ওভারে বিধ্বংসী বোলিং করে তিনি আবারও ভরসার কারণ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ দলের। এবার এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি সামনে থেকে। প্রতি ম্যাচেই শুরুর দিকে দলকে যেমন সাফল্য দিয়েছেন তেমনি ফিরতি স্পেলে ফিরে আবার ব্রেক থ্রুও দিয়েছেন। সবমিলিয়ে এশিয়া কাপে তিনি ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ১১ উইকেট। ১২.১৮ গড়ে ৭.৯৬ ইকোনমি রেটে এ উইকেট নিয়েছেন তিনি। যদিও বাছাই খেলার পর আবার চূড়ান্ত পর্বেও সুযোগ করে নেয়া আরব আমিরাতের অধিনায়ক পেসার আমজাদ জাভেদ ৭ ম্যাচ খেলে সর্বাধিক ১২ উইকেট নিয়ে শীর্ষে। বেশি ম্যাচ খেলায় এবং চূড়ান্ত পর্বের হিসেব বিবেচনায় তিনি পুরস্কার জিততে পারেননি। এমন ধারাবাহিক সাফল্যের কারণেই আল আমিন র‌্যাঙ্কিংয়েও এগিয়ে এসেছেন ১৭ ধাপ এগিয়ে এসেছেন। এখন তিনি বিশ্ব টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৫ নম্বর বোলার। গত নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ থেকেই ধারাবাহিক আল আমিন টানা ৯ ম্যাচে উইকেট শূন্য থাকেননি। এই ম্যাচগুলোতে নিয়েছেন সবমিলিয়ে ১৯ উইকেট। এ কারণেই তার এ উন্নতি। শুরু থেকেই সাব্বিরের গায়ে তকমা লেগে গেছে ‘টি২০ স্পেশালিস্ট’ তিনি। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে ক্রমেই অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন রাজশাহীর এ তরুণ। নিজেকে মেলে ধরছেন ধারাবাহিকভাবে। এ কারণে ক্যারিয়ারের শুরুতে ৫/৬ নম্বরে ব্যাটিং করলেও এখন তার অবস্থান নির্দিষ্ট হয়ে গেছে ওয়ানডাউনে। এর আগেও তাকে দুয়েকবার তিন নম্বরে পরীক্ষা করা হয়েছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন। চলতি বছর জানুয়ারিতে জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে ৪ টি২০ ম্যাচের আরেকটি সিরিজে পুনরায় তাকে ফেরানো হয় তিন নম্বরে। তারপর থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি। নিজের সামর্থ্যটা প্রমাণ করেছেন ক্রমাগতভাবেই রান করে। সবমিলিয়ে সর্বশেষ ৯ ম্যাচে তিনি ৪৫.১৪ গড়ে করেছেন ৩১৬ রান। আছে সর্বোচ্চ ৮০ রানের ব্যক্তিগত ইনিংসও। যেটা এবার এশিয়া কাপে তিনি খেলেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এশিয়া কাপটা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন সাব্বির। কারণ টি২০ ক্যারিয়ারের সেরা সময় কেটেছে তার এবারের আসরে। ৫ ম্যাচে ৪৪.০০ গড়ে করেছেন সর্বাধিক ১৭৬ রান। যদিও তার চেয়ে এগিয়ে বাছাইপর্বে খেলা হংকংয়ের ব্যাটসম্যান বাবর হায়াত। তিনি মাত্র ৩ ম্যাচেই ৬৪.৬৬ গড়ে ১৯৪ রান করেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্ব এবং গুরুত্ব বিবেচনায় সাব্বির এগিয়ে। তার নৈপুণ্য দলকে রানার্সআপ করেছে, আর হায়াতের নৈপুণ্যও হংকংকে এশিয়া কাপের মূল পর্বে উঠাতে পারেনি। চূড়ান্ত পর্বের ব্যাটিং বিবেচনায় ভারতের অপরিহার্য ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি আছেন সাব্বিরের পরে। তিনি ৫ ম্যাচে করেছেন ১৫৩ রান। সাব্বিরের এ সাফল্যের কারণেই তিনি হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। কোন বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে এটিই টি২০ ফরমেটের কোন বড় টুর্নামেন্টের সেরা হওয়ার প্রথম নজির। দারুণ এ সাফল্যের জন্য র‌্যাঙ্কিংয়েও ৪৪ ধাপ এগিয়েছেন সাব্বির। টি২০ বিশ্ব ব্যাটিং র‌্যাঙ্কিংয়ে এখন সাব্বির আছেন ২০ নম্বরে।
×