ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘জিরো’ থেকে শুরু করতে হবে ॥ মাশরাফি

ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৮ মার্চ ২০১৬

ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দম ফেলার সুযোগ নেই। ১২ দিনব্যাপী একটি টুর্নামেন্ট খেলেই আবার মাঠে নামতে হবে। সে কারণে সোমবার সকালেই দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। রবিবার এশিয়া কাপ টি২০ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত থাকতে হয়েছে মাঠে। কিন্তু বুধবার হল্যান্ডের বিপক্ষে নামতে হবে টি২০ বিশ্বকাপের প্রাথমিক রাউন্ডে ভারতের ধর্মশালায়। এশিয়া কাপ জয়ের যে স্বপ্ন ছিল সেটা পূরণ হয়নি। হৃদয় ভেঙেছে কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের। অথচ ভারতের সঙ্গে ফাইনালের আগে মাঠে বসে খেলা দেখার জন্য টিকেট কাটতে গিয়ে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অনেকে। হারের পর তাদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু তিনি মনে করেন এই কষ্ট ক্রিকেটারদের হৃদয়ে রাখলে চলবে না। শুরু করতে হবে ‘জিরো’ থেকে। বিশ্বকাপ যুদ্ধ শুরু করতে হবে সম্পূর্ণই নতুন মিশন হিসেবে। এশিয়া কাপে দল যে ছন্দে ছিল সেটা ধরে রাখাটা অবশ্য কঠিনই হবে বাংলাদেশ দলের জন্য ভিন্ন কন্ডিশন এবং ভিন্ন আরেকটি টুর্নামেন্টে। মাশরাফি দাবি করেছেন দলের প্রথম লক্ষ্য বিশ্বকাপের সুপার টেনে খেলা। একটি টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেছে রবিবার রাতেই। ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পরই সেটা অতীত হয়ে যায়। কারণ নতুন টুর্নামেন্ট কখনও আগের নৈপুণ্যে বিশেষ কোন কার্যকর ভূমিকা রাখে না। ভারতের কাছে হেরে আবারও এশিয়া কাপ ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই কষ্টটা মন থেকে ছুড়ে ফেলতে চান টি২০ অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘ছেলেরা ফাইনাল খেলেছে। বেশ ভাল পারফর্ম করেছে। আশা করছি এ পারফর্মেন্স আমরা বিশ্বকাপে ধরে রাখতে পারব। আমাদের সেখানেও ভাল খেলতে হবে। এখান থেকে বাড়তি কিছু চিন্তা করে ওখানে খেলতে পারব না। একদিন পরই আমাদের নামতে হবে। সে জন্য সবকিছু ভুলে গিয়ে নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।’ মাশরাফি মনে করছেন বিশ্বকাপে দলকে ‘শূন্য’ থেকে শুরু করতে হবে। কারণ আলাদা কন্ডিশন এবং ভিন্ন প্রতিপক্ষের সঙ্গে সম্পূর্ণ আলাদা একটি টুর্নামেন্ট খেলতে হবে। প্রতিপক্ষ হল্যান্ড হলেও টি২০ ক্রিকেটে কাউকে ছোট করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের জিরো থেকে শুরু করতে হবে। এখন একটি টুর্নামেন্ট শেষ হলো, তার মানে সব জিরো হয়ে গেছে। এবার নতুন করে শুরু করতে হবে। টি২০ ক্রিকেটে সব দলই কঠিন। কম ওভারের খেলা, মুহূর্তেই সব পাল্টে যেতে পারে। আমরা যদি সুপার টেনে কোয়ালিফাইও করি আমাদের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। মানসিকভাবে যত দ্রুত সম্ভব সঠিক জায়গায় ফিরে আসা গুরুত্বপূর্ণ।’ এশিয়া কাপে দল একটা ভাল ছন্দে চলে এসেছিল। টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ওপর দুর্বলতার যে খোলস চেপে বসেছিল সেটাও অনেকখানি ঝড়ে গেছে। এবার নিজেদের পরিবেশ, দর্শকহীন জায়গায় একদিন পরেই খেলতে হবে ভিন্ন টুর্নামেন্টে। ছন্দে ছেদ পড়ার একটা শঙ্কা আছে। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘টি২০ ক্রিকেটে এটা (ছন্দ) বড় একটি জিনিস। আমি চেষ্টা করব সবাইকে অনুপ্রাণিত করার। কেউ প্রত্যাশা করেনি আমরা ফাইনাল খেলব। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় সাফল্য। আমাদের এ পরাজয় ভুলে যাওয়া উচিত। কারণ আমরা র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দলের বিপক্ষে হেরেছি। আমাদের সামনে যে খেলা আছে সেগুলোতে মনযোগ দেয়া উচিত। আমি মনে করি যে ফাইনালে ওঠার ম্ধ্যামে আমাদের যে অর্জন সেটাকে অনেক বড় পাওয়া বলে মনে করি।’ কিন্তু দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে না পারায় মাশরাফি বেশি কষ্ট পেয়েছেন দেশের সাধারণ দর্শকদের জন্য। কারণ এবার ঐতিহাসিক এ ফাইনাল দেখার জন্য টিকেটের যে চাহিদা ছিল তা মেটানো যায়নি। সে কারণে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে এবং সাধারণ অনেক দর্শকই পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন। আবার ম্যাচের আগে ঝড়-বৃষ্টিতেও কষ্ট পেয়েছেন দর্শকরা। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের খুব খারাপ লাগছে। বাজে আবহাওয়া মাথায় নিয়ে মানুষ অনেক কষ্ট করে খেলা দেখেছেন। একটা টিকেটের জন্য অনেকে আহত হয়েছেন। সারাদেশের মানুষ দোয়া করেছিল। তাদের প্রতিদান দিতে না পেরে আমরা দুঃখিত।’ মাশরাফি মনে করেন টি২০ বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে অনেক কিছুই এবার এশিয়া কাপ থেকে পেয়েছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে তিনি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কথা বিশেষভাবে মনে করেছেন। তাছাড়া টি২০ ক্রিকেটটার মেজাজও অনেকখানি বুঝে উঠতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘রিয়াদ ভাল ব্যাটসম্যান। কিন্তু সে এভাবে নিয়মিত বিগ হিট করতে পারে সেটা সে এবার করে দেখিয়েছে। বিশ্বকাপের আগে আমরা এটা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে আমাদের আরেকজন বিগ হিটার আছে। বিশ্বকাপে এটা খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ টুর্নামেন্ট থেকে আমরা যা পেয়েছি সেটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বিশ্বকাপে। টি২০ বিবেচনায় আমরা এখান পর্যন্ত এসেছি সেটাও অনেক। আমি আগেও বলেছি আমাদের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।’
×