ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের মিশন শুরু বুধবার, মাশরাফিদের প্রথম প্রতিপক্ষ হল্যান্ড, ভাবনায় ক্লান্তি ও কন্ডিশন

মূলপর্বের লড়াইয়ের আগে লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ মার্চ ২০১৬

মূলপর্বের লড়াইয়ের আগে লড়াই

মিথুন আশরাফ ॥ এসে পড়ল সেই ক্ষণ। আর মাত্র একদিন বাকি। বুধবার থেকেই বাংলাদেশের টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপের মিশন শুরু হয়ে যাবে। সেদিন হল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করবে বাংলাদেশ। এরপর প্রথম রাউন্ডে (যেটিকে ধরা হচ্ছে বাছাইপর্ব) শুক্রবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ও রবিবার ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে মাশরাফিবাহিনী। বাংলাদেশ আছে ‘এ’ গ্রুপে। গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট তালিকায় সবার উপরে থাকলেই ‘সুপার টেনে’ খেলবে বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ থাকবে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ড। বাছাইপর্বে খেলতে নামার আগে মাশরাফিদের প্রথম প্রতিপক্ষ থাকছে আসলে কন্ডিশন! কখনই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০০ ফুট উপরের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের কাংরা জেলার একটি শহর ধর্মশালায় খেলেনি বাংলাদেশ। যেখানে প্রচুর ঠা-া থাকে পুরো বছরজুড়েই। সেই কন্ডিশনকে আগে জয় করতে হবে। এরপর না এক এক করে ম্যাচ জিতে সেরা ১০ দলের একটি হওয়ার আশা পূরণ হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এ পর্বে অংশ নিতে সোমবারই বাংলাদেশ থেকে ধর্মশালার উদ্দেশে রওনা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। যে দলে আছেন বাংলাদেশের ১৫ ক্রিকেটার। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান রুম্মন, নাসির হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, আরাফাত সানি, তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ মিঠুন, আল আমিন হোসেন, নুরুল হাসান সোহান ও আবু হায়দার রনি আছেন। এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠায় একটু দেরিতেই ধর্মশালায় পৌঁছাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। রবিবার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। সোমবার প্রথমে ঢাকা থেকে দিল্লীতে যেতে হয়েছে। ঢাকা থেকে সরাসরি হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় কোন ফ্লাইট নেই। তাই একটু বিপাকেই পড়েছে বাংলাদেশ দল। দিল্লী থেকে নিজেদের ভাড়া করা চার্টার্ড বিমানে করে ধর্মশালায় পৌঁছাতে হয়েছে। মঙ্গলবার ধর্মশালায় একদিনের অনুশীলন শেষেই বুধবার বিশ্বকাপের মিশনে খেলতে নেমে যাবেন চন্দিকা হাতুরাসিংহের শিষ্যরা। মাত্র একদিনের অনুশীলন সেরেই মিশনে খেলতে হবে। এতে সমস্যায়ও পড়তে পারে বাংলাদেশ। ঢাকায় ২০ এর উপরে তাপমাত্রা। সেখানে ধর্মশালায় গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ১০ থেকে ১৬ ডিগ্রী। প্রচুর ঠা-া। এ ঠা-ায় মাত্র একদিন অনুশীলন করেই খেলতে নামতে হবে। এ জন্য ম্যাচেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচক, সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আগেই বলেছেন, ‘ধর্মশালার কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে আমরা সময় খুব কম পাব। যেহেতু সেখানে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৬ ডিগ্রীর মধ্যে থাকবে, তাই আগে ব্যাট করে বিপদে পড়তে হতে পারে। মূলত কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াই হবে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।’ যদিও এশিয়া কাপ খেলার ফলে নিয়মিত ক্রিকেটের মধ্যেই ছিলেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু খেলাগুলোত আর ধর্মশালায় হয়নি। ম্যাচ প্রস্তুতি নেয়া হয়ে গেছে এশিয়া কাপেই। তবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াত আর গেল না। তবে দলে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা আছেন। যারা অনেক দেশ ঘুরে ক্রিকেট খেলেছেন। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার বিষয়টিও তাদের ভালই জানা আছে। সেই সক্ষমতাও আছে। ২০০৭ সালে প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেই বিশ্বকাপ থেকে এবার ষষ্ঠ বিশ্বকাপ পর্যন্ত মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ খেলছেন। টানা ছয়বারই তারা অংশ নিচ্ছেন। দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও তারা। নাসির হোসেনও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কাতারেই পড়েছেন। ২০১২ ও ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে খেলেছেন। আল আমিন, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদও একটি করে টি২০ বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতায় পুষ্ট। মোহাম্মদ মিঠুন অবশ্য একবার টি২০ বিশ্বকাপের দলে থেকেও খেলতে পারেননি। এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার আশায় আছেন। বাকি সবাই প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে নামবেন। তরুণরা যেহেতু এখনও বিদেশ সফরে অভ্যস্থ হয়ে উঠতে পারেননি তাই দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ওপর আস্থা রয়েছে নান্নুর। তিনি বলেছেন, ‘এশিয়া কাপে আমরা সেরা সেরা দলের বিপক্ষে খেলেই বিশ্বকাপে খেলব। তাই ব্যাটিং-বোলিংয়ের প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তা নেই। তবে ধর্মশালার কন্ডিশনে মানিয়ে নেয়া সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। দলে অনেক সদস্য এক শ’র বেশি ম্যাচ খেলা। তাদের দ্রুতই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সক্ষমতা রয়েছে।’ সেই সক্ষমতা এখন কাজে দিলেই হয়। বাছাইপর্বে বাংলাদেশের তিন প্রতিপক্ষ হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ওমান। ওমান দুর্বল দল এবং এশিয়ার দল। মনে করা হচ্ছে, ওমানের বিপক্ষে সব দলই জিতবে। কিন্তু হল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড হচ্ছে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের জন্য হুমকি স্বরূপ দল। দলটি ইউরোপ অঞ্চলের। ঠা-া তাদের কাছে ‘ডালভাত’! গরম হলেই বরং অস্বস্তিতে থাকে তারা। ঠিক তার উল্টো হচ্ছে বাংলাদেশের বেলাতে। ঠা-া হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের জন্য অস্বস্তির। সেই অস্বস্তি না কি আবার বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দেয়। প্রথম ম্যাচ আবার হল্যান্ডের বিপক্ষে। যাদের বিপক্ষে এর আগেও দুটি টি২০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। হল্যান্ডেই হওয়া সেই দুই ম্যাচের সিরিজে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ১ ম্যাচে হেরেছে। আরেক ম্যাচে জিতেছে। দ্বিতীয় ম্যাচটি মাশরাফিরা খেলবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এর আগে এ দলটির বিপক্ষে চারবার টি২০তে লড়াই করে তিনবারই জিতেছে বাংলাদেশ। তবে ২০০৯ সালের টি২০ বিশ্বকাপে যে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছে আয়ারল্যান্ড, সেই ম্যাচটিতে আইরিশরাই জিতেছিল। এবারও তাই আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে ভয় আছে। আর ওমান দুর্বল দলই। বাংলাদেশকে শুধু প্রতিপক্ষ দল নিয়ে নয়, আগে কন্ডিশন নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে কন্ডিশনই। আগে কন্ডিশনকে জয় করতে হবে। এরপর এক এক করে হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ওমান বধে ‘সুপার টেনে’ খেলার পথ পরিষ্কার করতে হবে।
×