ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার গাইডলাইন প্রস্তুত সারাদেশে পাঠানো হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৮ মার্চ ২০১৬

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার গাইডলাইন প্রস্তুত সারাদেশে পাঠানো হবে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ‘শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক শিশুর সঙ্গে যোগাযোগের সময় তাদের চোখে চোখ রাখবেন, নরম সুরে কথা বলবেন, শালীনভাবে অঙ্গভঙ্গি করবেন এবং শিশুদের সঙ্গে সহজবোধ্যভাবে কথা বলবেন, সম্মান প্রদর্শন করে’- শিশুদের সঙ্গে শিক্ষকদের এমন আচরণের নির্দেশনা দিয়ে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে পাঠদানের ন্যূনতম মানদ-ের অনুমোদন দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সারাদেশের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের শেখানোর ক্ষেত্রে শিক্ষক কিভাবে যোগাযোগ করবেন তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এ মানদ-ে। ‘প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সেবা প্রদানের ন্যূনতম মানদ-সমূহ’ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনায় স্কুল ও শ্রেণীকক্ষের পরিবেশ, সহশিক্ষা কার্যক্রমও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্কুল পরিদর্শন ও মূল্যায়নে কার্যকারিতা এবং অভিভাবক সম্মেলনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। মানদ-ের আলোকে শিক্ষা সেবা প্রদান করে সকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এ মানদ- অর্জন করার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। মানদ-ের ৩৭ ক্ষেত্র ও উপাদান উল্লেখ করে প্রথমেই বলা হয়েছে, তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর একটি উল্লেখযোগ্য এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রম হলো ‘প্রাক-প্রাথমিক’। জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্র্রেণী চালু করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত কারিকুলামের আলোকে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখন-শেখানো সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৩৭ হাজার ৬৭২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে সরকারী শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট বিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। শ্রেণীকক্ষে শিশুর সঙ্গে শিক্ষকের যোগাযোগ সম্পর্কে মানদ-ে বলা হয়েছে, শিক্ষক শিশুর সঙ্গে যোগাযোগের সময় তাদের চোখে চোখ রাখবেন, নরম সুরে কথা বলবেন, শালীনভাবে অঙ্গভঙ্গি করবেন এবং শিশুদের সঙ্গে সহজবোধ্যভাবে কথা বলবেন, সম্মান প্রদর্শন করে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণী অবস্থিত হতে হবে উল্লেখ করে মানদ-ে বলা হয়েছে, স্কুলের প্রাঙ্গণ হবে পরিষ্কার, সমতল ও জলাবদ্ধতামুক্ত। শ্রেণীকক্ষের বাইরে খেলাধুলার জায়গা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩০ শিক্ষার্থীর জন্য কমপক্ষে ২৫০ বর্গফুট শ্রেণীকক্ষ ও তার পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবে। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, বসার জায়গা রাখা, পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক ঝুঁকিমুক্ত এবং স্কুলে ফার্স্ট এইড কিট বক্স রাখা বাধ্যতামূলক। জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে স্কুলে সকল উপকরণ সরবরাহ ও সংরক্ষণ, শ্রেণীকক্ষে সৃজনশীল কাজ প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা এবং শিখন কার্যক্রমের সময়সীমা হবে সর্বোচ্চ বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিখন চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ক্লাস রুটিন তৈরি করতে হবে। ইতিবাচক নিয়মানুবর্তিতা হিসেবে শারীরিক বা মানসিক কোন শাস্তি না দিয়ে বা নেতিবাচকভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে না রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে মানদ-ে। অভিবাদন ও উৎসাহ প্রদান করার ওপর জোর দিয়ে বলা হয়েছে, অভিবাদন একটি দৈনন্দিন চর্চার বিষয় হিসেবে দেখা হবে। শিক্ষক শিশুদেরকে যে কোন উপলক্ষে প্রশংসা করবেন এবং উৎসাহ প্রদান করবেন। শিক্ষকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বলা হয়েছে, শিশুরা ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষকের সঙ্গে তাদের অনুভূতি, সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা ও শিখন চাহিদার কথা শেয়ার করবে। প্রতি শ্রেণেিত একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রাখা ছাড়াও শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কদের প্রশিক্ষণের জন্যও মানদ-ে বলা হয়েছে। খেলার ধরন সম্পর্কে মানদ-ে বলা হয়েছে, বার্ষিক পরিকল্পনা ও শিখনক্রম অনুসারে শিশুর শারীরিক, স্কুল ও সূক্ষ্ম পেশীর সঞ্চালনসহ জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এমন খেলা নির্ধারণ করতে হবে। খেলা নির্ধারণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন সৃজনশীল, কল্পনার খেলা ও ইচ্ছেমতো খেলার সমন্বয় থাকে। শিক্ষকরা খেলাধুলায় সহায়তা করবেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া করার সুযোগ, নেতৃত্বের উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের মোট সময়ের অর্ধেক নানা কাজ ও কথা যেমন- প্রশ্ন করা, ব্যাখ্যা চাওয়ায় নিয়োজিত রাখতে বলা হয়েছে। একক ও দলীয় কাজগুলো কিভাবে করা হবে তাও মানদ-ে রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, নিয়মের মধ্যে না থেকে আগ্রহমূলক শিক্ষা ছাড়াও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নমনীয় হয়ে শেখাতে হবে। হাজিরা খাতা আপডেট থাকা, শিক্ষার্থীদের মাসিক স্বতন্ত্র মূল্যায়ন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে মাসে একবার স্কুল পরিদর্শন ও রিপোর্ট প্রদান, বছরে কমপক্ষে ছয়টি অভিভাবক সভা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১০ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হলেও মানদ- ছিল না, এখন প্রণীত হয়েছে। এর মাধ্যমে স্কুলগুলো ন্যূনতম মানদ- নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে শিক্ষা নীতির আলোকে শুরু হওয়া প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি নির্দিষ্ট মানদ- নির্ধারণ করার এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষা নীতি প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত শিক্ষাবিদরা বলছেন, এর ফলে শিশুদের জন্য সহনশীল অভিন্ন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা সহজ হবে। তবে এ নির্দেশনা অনুসারে সকল প্রতিষ্ঠান চলছে কিনা তা দেখার ওপরই এর সুফল প্রাপ্তি নির্ভর করছে। আইসিটি শিক্ষকদের আন্দোলন ॥ আগামী ১২ মার্চের মধ্যে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত না নিলে ১৩ মার্চ থেকে ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের (আইসিটি) শিক্ষকরা। জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ এমপিও বঞ্চিত আইসিটি শিক্ষক সংগঠন’র উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সভাপতি মোঃ আশিকুজ্জামান।
×