ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান

বিআরটি আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ মার্চ ২০১৬

বিআরটি আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের বোনাস ও ভাতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ‘সুপ্রীমকোর্ট জাজেস (রিমিউনারেশন এ্যান্ড প্রিভিলেজেস) (এ্যামেন্ডমেন্ট) এ্যাক্ট, ২০১৬’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে কারিগরি সহায়তার জন্য ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য এ সংক্রান্ত খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, লাইসেন্স ছাড়া বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রান্সজিট) নির্মাণ, উন্নয়ন বা পরিচালনা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দ-ের বিধান রেখে বিআরটি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অনুমোদন ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তরের এবং অননুমোদিতভাবে বিআরটিএর টিকেট বা পাস বিক্রি, এমনকি টিকেট বা পাস জাল করলেও শাস্তি পেতে হবে। উভয়ক্ষেত্রে ১০ বছরের কারাদ- ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দ-ের কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। কর্মচারীরা বিআরটির যন্ত্রপাতি অপব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদ- বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। একটি স্বতন্ত্র লেন দিয়ে দ্রুত বিশেষ ধরনের বাস চলাচলই হলে বিআরটি। বিআরটি আইনে ৫৩টি ধারা ও ১০টি অধ্যায় রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে বিআরটি পরিচালিত হবে। কর্তৃপক্ষ বলতে ঢাকায় বোঝাবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক এখানে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। খসড়া আইনে মানবিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ক্ষতিপূরণ ও বীমার ব্যবস্থা রয়েছে। বিআরটি পরিচালনার সময় দুর্ঘটনার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হন বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান, তাহলে লাইসেন্স গ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্ত বা ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারকে নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিতে বিআরটির লাইসেন্সধারী নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্র বা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। আহত ব্যক্তি যদি নিজ উদ্যোগে চিকিৎসা গ্রহণ করে তবে লাইসেন্স গ্রহীতা প্রবিধান নির্ধারিত পদ্ধতি ও পরিমাণ খরচ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। এছাড়া খসড়া আইন অনুযায়ী বিআরটি লাইসেন্স গ্রহীতা দুর্ঘটনার সময় তাৎক্ষণিকভাবে জরুরী সেবা প্রদানকারী সংস্থাকে জানাবে ও দুর্ঘটনা সম্পর্কিত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবে বলেও জানান তিনি। আইন অনুযায়ী বিআরটি’র যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বীমা করতে হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ক্ষতিপূরণ দাবির ৯০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করে দেবে। ভাড়া নির্ধারণের জন্য সময় সময় সরকার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারের অনুমোদন নিয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ভাড়ার হার নির্ধারণ করবে। ভাড়া নির্ধারণের জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটিও থাকবে। যাত্রী পরিবহন সংক্রান্ত তথ্য কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে ও বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করবে।’ বিআরটি’র প্রতিটি কোচে যুদ্ধাগত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, মহিলা, শিশু, প্রবীণদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হবে। বিআরটি’র জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে। অধিগ্রহণ হতে পারে এমন স্থানে রাতারাতি স্থাপনা নির্মাণ হলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তায় দু’টি লেন হবে বিআরটি’র জন্য। ২০১২ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, বিআরটি’র মাধ্যমে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট আসতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিকে ৪০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। বিআরটি স্টেশন সংখ্যা হবে ২৫টি, বাসের সংখ্যা হবে ১৪০টি। বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৭ সালে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বিচারপতিদের বোনাস ও ভাতা আইনে অন্তর্ভুক্ত ॥ এছাড়া সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের বোনাস ও ভাতা আইনে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এজন্য ‘সুপ্রীমকোর্ট জাজেস (রিমিউনারেশন এ্যান্ড প্রিভিলেজেস) (এ্যামেন্ডমেন্ট) এ্যাক্ট, ২০১৬’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের উৎসব ভাতা দেয়া হয় সার্কুলারের মাধ্যমে, যা তাদের আইনে নেই। এ বছর থেকে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে নববর্ষ ভাতা দেয়া হবে সকল সরকারী-কর্মচারীদের। এটাও সার্কুলারের মাধ্যমে ওনারা (বিচারপতিরা) পাবেন। তিনি বলেন, বিচারপতিরা অনুরোধ করেছেন আইনের মাধ্যমেই আমার বেতন পাই। আমাদের ভাতাগুলোও যেন আইনে আসে। এজন্য ঈদ বোনাস ও নববর্ষ ভাতার বিষয়টি সংযোজন করে এ আইনটি আনা হয়েছে। পরমাণু শক্তি ব্যবহারে কারিগরি সহায়তায় চুক্তি হচ্ছে ॥ পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে কারিগরি সহায়তার জন্য ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য এ সংক্রান্ত খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশের রূপপুরে রাশিয়ার সহায়তায় পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে ভারত। এছাড়া শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে ভারতের কাছ থেকে প্রযুক্তি ধার নিতে পারব।
×