ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অগ্নিঝরা মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৮ মার্চ ২০১৬

অগ্নিঝরা মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আলোচনা নয়, সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হবে স্বাধীনতা। ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক ও সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতির সেই নির্দেশে পাল্টে যায় পুরো বাংলাদেশের চিত্র। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে পালনে উত্তাল বিক্ষুব্ধ বাংলায় বিদ্রোহ-সংগ্রামের তরঙ্গ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ছড়িয়ে পড়ে। বাঙালীর প্রচ- বিক্ষোভে একাত্তরের এই দিনে রেডিও-টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করতে বাধ্য হয় পাকি শাসকগোষ্ঠীরা। চোখের সামনে সবাইকে বোকা বানিয়ে বঙ্গবন্ধুর কৌশলে স্বাধীনতার আহ্বানে হতভম্ভ হয়ে যায় পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা। বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বানিয়ে স্বাধীনতার আন্দোলনকে ভ-ুলের শেষ পরিকল্পনাও ব্যর্থ হওয়ায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম দমনের নীলনক্সা আঁটতে থাকে পাকি শাসক গোষ্ঠীরা। আর সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রই আঁটতে থাকে পাক হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দালালরা। আজ রক্তঝরা ৮ মার্চ। উনিশ শ’ একাত্তরের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা চূড়ান্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। আর ৭ মার্চে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ বাংলার জনগণ। বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন তাঁর পক্ষে দেশবাসী জেগে উঠতে শুরু করে। বাংলার দামাল ছেলেরা দলে দলে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলতেই থাকে। এ সময় স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর বাণী রেডিওতে প্রচার না করায় স্বাধীনতার নেশায় পাগল বাঙালী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বেতার কর্মীদের আন্দোলনের কারণে পাকিস্তানীরা বাধ্য হয় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি বেতারে প্রচার করতে। ৮ মার্চ সকাল ৮টায় রেডিওতে ভেসে আসে বঙ্গবন্ধুর সেই অবিস্মরণীয় ভাষণ- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ অন্যদিকে আগের মতোই উত্তাল জনতা মিটিং-মিছিলে প্রকম্পিত করে রাখে সারাদেশ। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে এদিন মহল্লায় মহল্লায়, বাসভবনে, ছাত্রাবাসে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে কালো পতাকা উঠানো হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন আজ এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান মুক্তি আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক জনসভায় যে প্রত্যক্ষ কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন আমরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বাংলার সংগ্রামী জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র নেতারা অপর এক বিবৃতিতে সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশের স্বাধিকার সংগ্রামের নিরস্ত্র বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সব সরকারী-বেসরকারী ভবনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কালো পতাকা উত্তোলনের আহ্বান জানান। একাত্তরের এ দিনে গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব) এম আসগর খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাত করেন। বেতার ও টিভি শিল্পীদের একটি প্রতিনিধিদলও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। তারা বর্তমান মুক্তি আন্দোলনের অনুকূলে অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্দেশে আগামী ১০ মার্চ থেকে বেতার ও টেলিভিশনে তাদের যোগদানের সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন।
×