ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি ভোট ॥ অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার কথা ভাবছে ইসি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৮ মার্চ ২০১৬

ইউপি ভোট ॥ অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার কথা ভাবছে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে প্রার্থীরা যাতে কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন না হন সে কারণে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পরিকল্পনা করছে ইসি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ইউপি নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলোতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষে কাজ শুরু করেছে তারা। সোমবার নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য সব দ্বার খুলে দেয়া হবে। তারা যাতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আর কোন বাধার সম্মুখীন না হন বিষয়টি গুরুত্ব দিতেই ইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েও মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রার্থীরা যাতে কোন বাধার সম্মুখীন না হন সেজন্য সব ব্যবস্থাই করা হচ্ছে উল্লেখ করেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধার কারণ বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ক্ষমতাসীন দলের বাধার কারণে প্রথম দফায় দলের শতাধিক প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগও দাখিল করা হয়। কিন্তু বিএনপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইসি জানায়, তাদের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট নয় বিধায় এর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তবে জানা গেছে, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের বাধার বিষয়টি আমলে নিয়েই মনোনয়নপত্র জমাদানে বিকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় ধাপে মনোনয়নপত্র একাধিক স্থানে জমা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা নেয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধার অভিযোগ পায় ইসি। এ কারণে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় সবগুলো ইউপি দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে এবং মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধার অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ইতেমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিকল্প মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি গত ৩ মার্চ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা ঠেকাতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার নিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অতি দ্রুত এটি কার্যকর করার কথাও ভাবছে কমিশন। এটি হলে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আর কেউ বাধা দিতে পারবে না। এর সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে অতি দ্রুত এটি কার্যকর করা হবে উল্লেখ করেন। তবে কমিশনের কর্মকর্তা জানিয়েছে আইনগত বাধা ও বিধিমালায় পরিবর্তন এনেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আইনগত ও বিধিমালায় পরিবর্তন এনে ইউপি নির্বাচনের মাধ্যমেই এ বিধান চালু করতে চায়। এমনকিত তৃতীয় ধাপ থেকে এ বিধান চালু করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, আইনগত বাধা দূর করে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের শেষ ধাপগুলোতেই এ বিধান চালু হতে পারে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সারাদেশে ইউপি নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে দুই দফার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দফায় ৭৩২ ইউপিতে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে মাঠে রয়েছে। আগামী ২২ মার্চে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে প্রথম দফায় ৬২ ইউপিতে একক প্রার্থী থাকায় তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ইউপি নির্বাচন দলীয় হলেও ইসির হিসাব অনুযায়ী ১১৯ ইউপিতে বিএনপি কোন প্রার্থী নেই। বিএনপির দাবি জোর করে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেয়া হয়েছে। এদিকে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থীদের বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, বাছাইয়ে দ্বিতীয় দফায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়া দেড়শ’র বেশি চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থী রয়েছে ১০ জনের মতো। প্রার্থিতা ফিরে পেতে তাদের তিনদিনের মধ্যে আপীল করতে হবে। ইসির হিসাব অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় ৬০ ইউপিতে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। এর মধ্যে ১৩ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। জানা গেছে, বাছাই এ সংখ্যার আরও বাড়তে পারে। দ্বিতীয় দফায় ১৩ মার্চ প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে ভোট হবে ৩১ মার্চ। ইসি জানিয়েছে, মনোনয়নপত্র জমদানে বাধার সার্বিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই অনলাইনে জমাদানের মতো বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে ভাবছে ইসি। শুধু ইউপিতে নয় আগামীতে সব নির্বাচনেই এ ব্যবস্থা করা হবে যাতে কেউ মনোনয়নপত্র বাধার কারণে জমা দিতে পারেনি এমন অভিযোগ না করতে পারে। নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেন, মনোনয়নপত্র জমাদানে কারও কোন অভিযোগ থাকলে তা সুনির্দিষ্ট আকারে আসতে হবে। কোন উড়ো খবরের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। প্রত্যেক নির্বাচনেই ইসি শক্ত অবস্থানে থাকে। নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও শক্ত অবস্থানে থাকতে বলা হয়। এ নির্বাচনেও শক্ত অবস্থানে রয়েছে ইসি। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তারা সবাই আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরাও তাদের জন্য সহযোগিতার দ্বার খুলে দেব। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬২ প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে কোথাও অনিয়ম হলো কিনা সেটা দেখা হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে, এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আইনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিধান রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমলে নিচ্ছি। ফেনীর পরশুরামে মনোনয়নপত্র জমা নেয়ার সময় একদিন বাড়ানোও হয়েছে। এরপরও কেউ ঘরে বসে থাকলে ধরে এনে নির্বাচন করানো সম্ভব নয়।
×