ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি সংশ্লিষ্টদের

বনশ্রীতে দুই শিশু হত্যা মামলার তদন্তভার ডিবিতে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৮ মার্চ ২০১৬

বনশ্রীতে দুই শিশু হত্যা মামলার তদন্তভার ডিবিতে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বনশ্রীতে আলোচিত দুই শিশু হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। হত্যাকা-ের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতেই মামলাটির তদন্ত থানা পুলিশের কাছ থেকে ডিবিতে হস্তান্তর করা হলো। যদিও সোমবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হত্যাকা-ের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে পারেনি ডিবি পুলিশ। তবে ডিবি পুলিশ পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিয়েছে। তদন্তে নিহতদের পিতা এবং মায়ের কোন অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়েও কোন তথ্য মেলেনি। তদন্তকারীরাও মায়ের হাতে দুই শিশুকে হত্যা করার বিষয়ে গোলকধাঁধায় রয়েছেন। মহানগর পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জনকণ্ঠকে জানান, সোমবার থানা পুলিশের কাছ থেকে মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরিত হয়েছে। ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। যদিও তদন্তে হত্যার কারণ সম্পর্কে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য বিষয় পাওয়া যায়নি। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রামপুরা থানাধীন বনশ্রীর বি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর জিএম এ্যাপার্টমেন্ট লিমিটেডের তৈরি জিএম শাহনূর নামের সাততলা বাড়ির লিফটের চতুর্থ তলার পূর্ব দিকের ৫/এ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে নুসরাত আমান অরণী (১২) ও তার ভাই আলভী আমানের (৭) রহস্যজনক মৃত্যু হয়। অরণী সিদ্ধেশ্বরীতে অবস্থিত ভিকারুননেসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। আর বাড়ি থেকে মাত্র দু’শ’ গজ সামনেই অবস্থিত হলি ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার নার্সারি ক্লাসের ছাত্র ছিল আলভী আমান। খাদ্যে বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যু হয় বলে প্রথমে নিহতদের পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে খাবার সরবরাহকারী বনশ্রীর ক্যান্ট নামের চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের ম্যানেজার মামুনুর রহমান মাসুদ, প্রধান বাবুর্চি আসাদুজ্জামান রনি ও তার সহযোগী আতাউরকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া র‌্যাব নিহতদের বসবাসকারী বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী পিন্টু (৩০) ও ফেরদৌস (২৮) এবং নিহতদের গৃহশিক্ষিকা শিউলী আক্তার (২৮), নিহতদের খালু নজরুল ইসলামের ভাগ্নে শাহীন (২২), নিহতদের মায়ের মামাত ভাই ওবায়দুর ইসলামকে (৩৪) ঢাকা থেকে আটক করে। অন্যদিকে জামালপুর থেকে নিহতদের পিতা গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী মোঃ আমানউল্লাহ আমান (৩৯), নিহতদের মা মামলার একমাত্র আসামি মাহফুজা মালেক জেসমিন (৩৬) এবং খালা আফরোজা মালেক মিলাকে (৩২) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় আনে। র‌্যাবের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয় নিহতদের মা। এরপর গত ৩ মার্চ রাতে স্বামীর দায়ের করা মামলায় একমাত্র আসামি স্ত্রী। মামলা দায়েরের পর কারাগারের বাইরে থাকা সবাইকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, ছেলেমেয়ের পড়াশুনা ও ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকায় মা একাই দুই সন্তানকে হত্যা করেন বলে মায়ের দাবি। মামলাটির আগের তদন্তকারী কর্মকর্তা রামপুরা থানার পরিদর্শক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানও একই কথা বলছেন। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা ডিবির এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, নিহতদের মা বলেছেন, ঘটনার দিন অরণী গৃহশিক্ষিকার কাছে পড়া পারেনি। অরণী একই কথা বললে তিনি খুব রেগে যান। অরণীকে মারধর শুরু করেন। রাগের বশবর্তী হয়ে এক পর্যায়ে অরণীর গলা ধরে চাপ দেন। এ সময় অরণীর সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তারা খাট থেকে পড়ে যায়। রাগের বশবর্তী হয়ে অরণীর গলায় থাকা ওড়না দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে ফেলে। এতে শ্বাসরোধে অরণীর মৃত্যু হয়। অরণী মারা যাওয়ার পর ঘুমিয়ে থাকা আলভীর দিকে তাকিয়ে থেকে তার মনে হয়, আলভীও কথা শুনে না। তারও ভবিষ্যতে তেমন কিছুই হবে না। অতএব তাকে বাঁচিয়ে রেখে কোন লাভ নেই। এরপর অরণীর গলার ওড়না খুলে আলভীর গলায় পেঁচিয়ে তাকেও শ্বাসরোধ করা হলে তারও মৃত্যু হয়।
×