ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নয়া গ্রামে স্বপ্নের নীড়

হাওড়ে ভূমিহীনদের ঠিকানা

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৮ মার্চ ২০১৬

হাওড়ে ভূমিহীনদের ঠিকানা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ৭ মার্চ ॥ কয়েক বছর আগেও যেখানে কোন বসতি ছিল না। এখন সেই হাওড়েই গড়ে উঠছে নতুন গ্রাম। মাথাগোঁজার আশ্রয়ের জন্য এলাকা ছেড়ে এক সময় ছুটেচলা এসব ভূমিহীন পরিবারগুলো এখন স্বপ্নের নীড়ে। জেলার হাওড় অধ্যুষিত মিঠামইনের প্রত্যন্ত উড়িয়ন্দ গ্রামের পরিবারগুলোর অধিকাংশই নিরক্ষর-অল্পশিক্ষিত। এখানে গ্রামীণ গৃহবধূরা গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি সংসারে সচ্ছলতা আনতে দিনমজুর স্বামীর সঙ্গে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে। এসব হতদরিদ্র নারীরা এখন সেলাই কাজ ও মুদি মনোহরী ব্যবসা করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। জানা যায়, হাওড় অঞ্চলের ২৩টি ভূমিহীন পরিবার টাকা সঞ্চয় করে ২০১৪ সালের শুষ্ক মৌসুমে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে মিঠামইন সদর ইউনিয়নের পূর্বপ্রান্তের হাওড়ের ৩৮ শতাংশ জমি কেনে। ভূমির দলিল সম্পাদন করা হয় ‘উড়িয়ন্দ বহুমুখী উন্নয়ন সমিতি’ নামে। পরে ওই বছর ক্রয়কৃত ভূমির অর্ধেক মাটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় নিজেরা ভরাট করে। বাকি অর্ধেক পপি-রিকল প্রকল্পের অর্থায়নে ভরাট করা হয়। কিন্তু পরের বছর বর্ষার পানির ঢেউয়ে আস্তে আস্তে মাটি সরে যাওয়ায় ওখানে বসবাসরত হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে নেমে আসে চরম হতাশা। তখন স্থানীয় প্রশাসন অক্সফার্মের সহযোগিতায় ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা ব্যয়ে গ্রামটিতে ১১০ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট প্রস্থের প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করে দেয়। এছাড়া স্থানীয় ইউপির পক্ষ থেকে গ্রামে টিউবওয়েল বসিয়ে বিশুদ্ধ পানির বন্দোবস্ত করা হয়। সম্প্রতি সরেজমিনে উড়িয়ন্দ গ্রামের দিনমজুর ফিরোজ মিয়ার স্ত্রী স্বাধীনা আক্তার ও সেলিম মিয়ার স্ত্রী তাজমহল বেগমের সঙ্গে কথা হলে জানান, আগে তাদের নিজেদের কোন জমাজমি ছিল না। অন্যের বাড়ির আঙিনায় বসবাস করতেন স্বামী দিনমজুরের কাজ করে খুব কষ্টে সংসারের ঘানি টানতেন। এসব হতদরিদ্র গ্রামীণ গৃহবধূদের পপি-রিকল প্রকল্প আর্থিক সহায়তা দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছে। তাদের ছেলেমেয়েরা এখন স্কুলে গিয়ে পড়াশুনা করছে। গ্রামের প্রতিবন্ধী সোনামউদ্দিনের মেয়ে কলেজছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, এককালীন নগদ সাড়ে ১২ হাজার টাকা সহায়তা পেয়ে সেলাই মেশিন ও থান কাপড় কিনে প্রথমে ব্যবসা শুরু করি। এখন পড়াশুনার পাশাপাশি সেলাইয়ের আয় দিয়েই নিজের ও সংসারের খরচ মিটাতে পারছি। উড়িয়ন্দ বহুমুখী উন্নয়ন সমিতির কোষাধ্যক্ষ লুৎফর রহমান লিটন জানান, তারা ভূমিহীন হওয়ায় এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে থাকতেন। এরূপ ২৭টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে বর্তমানে ১৪টি পরিবার এ গ্রামে বসবাস শুরু করেছে। অন্যরা ঢাকা ও সিলেটে কাজের সন্ধানে রয়েছে। তারাও এক সময় এখানে এসে বসবাস শুরু করবে।
×