ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সোনার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিদেশী নিষিদ্ধ সিগারেট

কিছুতেই থামছে না ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্রের চালান

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৮ মার্চ ২০১৬

কিছুতেই থামছে না ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্রের চালান

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ দেশে অবৈধভাবে চোরাপথে মাদক, অস্ত্র, স্বর্ণ ও নিষিদ্ধ সিগারেটের বড় বড় চালান বিদেশ থেকে আসছে এবং তা পুনরায় দেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এবং বিশাল সমুদ্র ও স্থলপথ এসব নিষিদ্ধ ও অবৈধ চোরাচালান এবং মাদক পণ্যের ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড বিভিন্নভাবে এসব অবৈধ চোরাচালানের পণ্যের চালান পাচার রোধে কঠোর অবস্থানে থাকলেও কোন অবস্থাতেই তা থামছে না। ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্রে ভেসে যাচ্ছে পুরো দেশ। আর চোরাচালানের স্বর্ণের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিদেশী ব্র্যান্ডের সিগারেটের চালান। মাদকসহ চোরাচালানের বিভিন্ন পণ্য পাচারের এ ঘটনা সম্প্রতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায় সচেতন মহলকে তা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ফেলেছে। মিয়ানমার সরকারের প্রতি সে দেশের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ইয়াবা তৈরির কারখানা সরিয়ে নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যে প্রকাশ্য আহ্বান তা সে দেশের সরকার আমলে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন সংস্থার চোরাচালান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে মরণনেশা ইয়াবা ট্যাবলেট আসছে মুড়ি মুড়কির মতো। হাজার হাজার লাখ লাখ এমনকি কোটি কোটি পিসের চালান সীমান্ত গলে জলে স্থলে চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত পাচার হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্থল সীমান্তের ওপারে ইতোমধ্যে ১৮টি স্থানে যে ৪০টি ইয়াবা উৎপাদনকারী কারখানা গড়ে উঠেছে তা সরিয়ে নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানালেও এ ব্যাপারে সে দেশের পক্ষে কোন মহলের কোন বক্তব্য এখনও আসেনি। তবে ইয়াবার চালান অব্যাহত রয়েছে। স্থলে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, সমুদ্রে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড হরহামেশা ইয়াবার যে ছোট বড় চালান আটক করছে তা যে পরিমাণ পাচার হয়ে আসছে সে তুলনায় একেবারেই সামান্য বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে। ফলে এটা নিশ্চিত যে, যুব সমাজকে ধ্বংসকারী মাদক ইয়াবার চালানের বড় অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে। আর এর নেপথ্যে কাজ করছে শক্তিশালী চোরাচালানি সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট সদস্যদের নাম ঠিকানা পুলিশ ও বিজিবি ইতোমধ্যে কয়েকদফায় সুনির্দিষ্টভাবে প্রচার করলেও এদের টিকিটিও স্পর্শ করা সম্ভব হয়নি। ফলে ইয়াবা চালান আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না এবং ভবিষ্যতে ব্যতিক্রমী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বন্ধ হবার সম্ভাবনা নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অপরদিকে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ থেকে বান্দরবান সীমান্ত এলাকার অরক্ষিত জোনে চলছে অবৈধ অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা। এসব ব্যবসায় ভারি অস্ত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের গোলাবারুদ বেচাকেনা হচ্ছে অবাধে। এ দু’দেশের পুরো সীমান্ত সীমারেখা জুড়ে বিওপি প্রতিষ্ঠার কাজটি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এখনও সম্পন্ন না করার সুবাদে আন্তর্জাতিক অবৈধ অস্ত্রের বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট এ রুটটি ব্যবহার করছে। যে কারণে বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গী সংগঠনগুলোর সদস্য অস্ত্র প্রাপ্তির রুটগুলোর মধ্যে অন্যতমভাবে এ পথটি ব্যবহার করছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো তাদের কর্মকা-ে যেসব ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করছে তা থেকে কিছু কিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ বাংলাদেশী জঙ্গী সংগঠনগুলোর সদস্য ও সন্ত্রাসীদের হাতে চড়াদামে বিক্রি করে দিয়ে থাকে।
×