ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বস্ত্র খাতের বিকাশের অনুপাতে বাড়ছে না তুলার উৎপাদন

তুলার আমদানিনির্ভরতা প্রকট হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৮ মার্চ ২০১৬

তুলার আমদানিনির্ভরতা প্রকট হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের বস্ত্রশিল্পের পরিসর বেড়েছে। বড় হয়েছে এ শিল্পের লক্ষ্যও। কিন্তু উদাসীনতা, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশে সে হারে বাড়েনি এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলার উৎপাদন। ফলে বস্ত্র খাত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তুলার আমদানিনির্ভরতাও প্রকট হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার ওপর। তবে এ সঙ্কট নিয়ে তেমন ভাবনা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। দেশে তুলা উৎপাদন কম হওয়ার কারণ, যে পরিমাণ জমিতে তুলার আবাদ হওয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে না। খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে খাদ্যশস্যের আবাদি জমি হেক্টরের পর হেক্টর বেড়েছে। কিন্তু দেশের শিল্প বিকাশের জন্য প্রধানতম পণ্যগুলোর উৎপাদনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতেও দেখা যাচ্ছে না। দেশে আগের চেয়ে তুলার উৎপাদন কিছুটা বাড়লেও তা দিয়ে মিটছে না বার্ষিক চাহিদা। আর ক্ষমতাসীন সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন করতে হলে ওই বছর নাগাদ পণ্যটির যে পরিমাণ চাহিদার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা-ও পূরণ হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ২০২১ সালে দেশে তুলার চাহিদা তৈরি হবে প্রায় এক কোটি বেল (১৮২ কেজিতে এক বেল)। তবে ওই সময় মোট চাহিদার ১৫ শতাংশ বা কিছু বেশি দেশে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়। তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর (২০১৫-১৬) ৪২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার বেল। দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তুলার আবাদ হয় ৪২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। এ সময় উৎপাদন হয় এক লাখ ৫২ হাজার ৫৩০ বেল তুলা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪১ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় এক লাখ ৪৪ হাজার ৬১৬ বেল তুলা। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৭৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ করে তুলা উৎপাদন হয় এক লাখ ২৯ হাজার বেল। বর্তমানে দেশের স্পিনিং ও অন্যান্য খাতে বছরে মোট তুলার চাহিদা রয়েছে ৫০ লাখ বেল। তবে দেশে উৎপাদন মাত্র দেড় লাখ বেল, যা চাহিদার তুলনায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বাকি সাড়ে ৪৮ লাখ বেল বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের হিসাবমতে, দেশে বর্তমানে টেক্সটাইল মিলের সংখ্যা ৪০৭টি। এসব মিলের বার্ষিক তুলার চাহিদা ৫০ থেকে ৫৫ লাখ বেল। চাহিদা পূরণে দেশে উৎপাদিত তুলার পাশাপাশি আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতি বছর বাংলাদেশকে ১৩ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা তুলা আমদানিতে ব্যয় করতে হয়। বাংলাদেশ সাধারণত ভারত, চীন, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাম্বিয়া, মালি ও জিম্বাবুয়ে থেকে তুলা আমদানি করে থাকে। বর্তমানে বিশ্বে বছরে প্রায় তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ বেল তুলার চাহিদা সৃষ্টি হয়। তুলা উৎপাদনে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে আছে চীন ও ভারত। আর পণ্যটি আমদানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। চীনের অবস্থান প্রথম। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। ১৯৯৫-২০১২ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে বাংলাদেশে তুলা আমদানি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত বিশ্ববাজার থেকে বাংলাদেশ মোট ৫৭ লাখ ৫০ হাজার বেল তুলা আমদানি করবে। এই পরিমাণ ২০১৫ সালের চেয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ বেশি। একই সময়ে চীনের তুলা আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৫ লাখ বেল। সারাবিশ্বে তুলার মজুদ বর্তমানে ১০ কোটি ৪৪ লাখ বেল। এর সিংহভাগই মজুদ করেছে চীন। এতে দেশটির আমদানি কমেছে। এছাড়া তৈরি পোশাক খাতে চায়না শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি বাড়ায় তুলার চাহিদা কমেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ করতে সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী পোশাকশিল্পকে রফতানিতে বড় একটি অবদান রাখতে হবে। সে লক্ষ্যে দেশের গার্মেন্টশিল্প কাজ করছে। বিটিএমইর পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালে দেশের স্পিনিং মিলগুলোতে প্রায় এক কোটি বেল তুলার প্রয়োজন হবে। দেশে তুলা উৎপাদন না বাড়লে এর বিপরীতে ব্যয় হবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।’ ২০২১ সালে স্থানীয়ভাবে ১৫-১৬ শতাংশ চাহিদা মেটাতে এক লাখ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে এক লাখ ৮৪১ কোটি টাকার সাত লাখ বেল তুলা উৎপাদনের আশা করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা এসএম আবদুল বাতেন বলেন, ‘তুলাগাছের মূল সাধারণত দেড় ফুট নিচে যায়। চর এলাকায় ওপর অংশে বালু থাকলেও দেড় ফুট নিচে পলি মাটি রয়েছে।
×