ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রানার্সআপ, মন্দ কি

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ৭ মার্চ ২০১৬

রানার্সআপ, মন্দ কি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ স্বপ্নটা অনেক বড় ছিল। ইতিহাস কড়া নাড়ছিল, কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে আকাশ আগেই কেঁদেছিল অঝোরে বাংলাদেশ দলের জন্য। শেষ পর্যন্ত অপমৃত্যু ঘটল লালিত স্বপ্নের, সমাপ্তিটাও হল কান্নাতে। আবারও এশিয়া কাপের ফাইনালে জিততে পারল না বাংলাদেশ। বিশ্বের এক নম্বর টি২০ দল ভারতের কাছে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে হাজার হাজার স্বাগতিক দর্শকদের হৃদয় চূর্ণকারী ৮ উইকেটের বড় পরাজয়ে রানার্সআপ হয়েছে। যদিও রবিবার দিনটি বেশ পয়মন্ত বাংলাদেশ দলের জন্য। সবচেয়ে বেশি ২৬ ম্যাচে এদিনেই জয় এসেছে। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে ঝড়ো বৃষ্টিতে ফাইনাল ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা কাটিয়ে যখন খেলা শুরু হল তখন দৈর্ঘ্য কমিয়ে দেয়া হয় ১৫ ওভারে। টসভাগ্যে হেরেই মূলত রান বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ। মাহমুদুুল্লাহ রিয়াদ ঝড়ে ৫ উইকেটে ১২০ রান তোলে নির্ধারিত ১৫ ওভারে। জবাবে ভারত শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি আর অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাটিং ঝড়ে ১৩.৫ ওভারে ২ উইকেটে ১২২ রান তুলে চ্যাম্পিয়ন হয় সর্বাধিক ষষ্ঠবারের মতো। ২০১২ সালের মতো আবারও রানার্সআপ হয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। স্বপ্নের ফাইনাল শুরুর ঘণ্টা দেড়েক আগেই আঘাত আগাম কালবৈশাখী ঝড়ের। গৌরবময় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত সাজানো ময়দান হল ল-ভ-। বিপুল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়া ধূলিঝড়ের সঙ্গে স্বপ্ন বেঁধে আসা দর্শকদের প্রাণটাও যেন উড়ে গেল। এরপর ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, বৈদ্যুতিক গোলযোগ- ৃআঁধার নামল ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশের ক্রিকেটপাগল দর্শকদের হৃদয়ে। খেলা না হওয়ার আশঙ্কা দানা বাঁধল টানা দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে। মাঠে তখন গোড়ালি ডুবে যাওয়া পানির স্রোত। নির্দিষ্ট সময়েই সব থেমে গেল, কিন্তু খেলা হবে তো? কিন্তু মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে লুকিয়ে আছে বিস্ময়। বিশ্বের যেকোন ভেন্যুর চেয়ে এর ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত। দেড় ঘণ্টার পরিচর্যাতেই পুরনো রূপে ফিরল মাঠ। ৫ ওভার কমিয়ে ম্যাচ ১৫ ওভারের করা হলো। এমন দিনে ম্যাচের মূল ফ্যাক্টর টস। সেই ভাগ্যপরীক্ষায় হেরে আগে ব্যাটিং পেয়ে গেল বাংলাদেশ ভেজা আউটফিল্ড ও আর্দ্র উইকেটে- বেশ কঠিন পরীক্ষা। বাংলাদেশ দলে এদিন নুরুল হাসান সোহান ও মোহাম্মদ মিঠুনের পরিবর্তে প্রথমবারের মতো নাসির হোসেন এবং আবু হায়দার রনি। স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিল ভারত। সৌম্য সরকার আর তামিম ইকবাল ভালই শুরু করলেন। তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে অভিজ্ঞ আশিষ নেহরাকে ৩ চার হাঁকানো সৌম্য বেশিই বেপরোয়া হয়েছিলেন। ওভারটির শেষ বলেই তিনি সাজঘরে (১৪)। পরের ওভারে তামিম (১৩) এলবিডব্লিউ। যে উচ্ছ্বাসটা শুরু হলো, তা থেমে গেল নিমিষে। ২ উইকেটে ৩০, পাওয়ার প্লে-র ৫ ওভার খারাপ হয়নি বাংলাদেশের। এরপর কিছুটা সতর্কভাবেই খেলতে থাকেন সাব্বির রহমান ও সাকিব আল হাসান। শনিবার কুঁচকিতে টান লাগায় খেলা নিয়ে সংশয় ছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। ফাইনালে জ্বলে উঠলেন তিনি। স্বাগতিক ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকে ঠাসা গ্যালারিতে আবারও উচ্ছ্বাসের ঢেউ। ঢেউটা যেন ছুঁয়ে যাওয়া দমকা বাতাসে আন্দোলিত ধানক্ষেতের মতো সুন্দর! ঢেউটা থামতে দেননি সাকিব-সাব্বির। তবে ভারতীয় বোলাররা বুঝেশুনেই বোলিং করে রানরেট তেমন বাড়তে দেননি। সাকিব ২১ রান করে যখন বিদায় নেন, ততক্ষণে ৩৪ রানের জুটি হয়ে গেছে। এরপর মুশফিক এসে ব্যার্থতা কাটাতে পারেননি। এ আসরে দ্বিতীয়বার রানআউট হয়েছেন তৃতীয়বার ৪ রান করে। রবীন্দ্র জাদেজার পরের বলেই মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে সাঝঘরে মাশরাফি। মাঠে পিনপতন নীরবতা। হারদিক পা-ে, বুমরাহ, অশ্বিন ও জাদেজা দারুণ বোলিং করছিলেন। সঙ্গে উইকেট পতন, রানের গতি মন্থর হয়ে যায়। সাব্বির আবারও দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন। কৌশলী কিছু শট খেলে রান আদায় করে নেন। তবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এসে তা-ব চালান। ইনিংসের ১৪তম ওভারে ম্যাচের গতিই পাল্টে ফেলেন পা-ের বলে ঝড় তুলে। দুই ছক্কা ও একটি চার হাঁকিয়ে তুলে নেন ২১ রান। আর এতেই চ্যালেঞ্জিং একটি সংগ্রহ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। মাত্র ১৩ বলেই ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল্লাহ। কিছুটা ধীরস্থির সাব্বির ২৯ বলে ২ চারে করেন হার না মানা ৩২। শেষ ৩ ওভারে তোলা ৪২ রানে ৫ উইকেটে ১২০ রান পায় টাইগাররা। স্লিপে রোহিত শর্মার ক্যাচটা লুফেই পেছনে তাকালেন সৌম্য। মাঠে উপস্থিত দর্শকরা থমকে গিয়েছিলেন, এবারও হয়তো ক্যাচ ছেড়েছেন তিনি। চলতি আসরে আগেও কয়েকটি ক্যাচ হাতছাড়া করেছিলেন। কিন্তু মাশরাফিসহ বাকিরা উল্লাস করতে করতে এগিয়ে যেতেই বিমূঢ় দর্শকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। অন্য ম্যাচগুলোর মতোই ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিং করতে এসেই আঘাত হানলেন আলআমিন হোসেন। বাংলাদেশ বোলিংয়ের শুরুটা হয়েছে স্বপ্নের মতো। তবে পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে রনির বলে ১৪ রান নিয়ে ৫ ওভারে ১ উইকেটে ৩৩ তুলে ভারতীয় দল ভাল অবস্থানেই চলে যায়। আর শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলি সতর্কভাবে শুরুর পর চড়াও হন দেখেশুনে। ক্রমেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যান ম্যাচের ভাগ্যকে। আলআমিন-তাসকিনের মতো নিয়ন্ত্রতিত বোলিং করতে পারেননি আর কেউ। ধাওয়ান পুরো আসরে ব্যর্থ হলেও এদিন জ্বলে উঠে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক হাঁকান। তিনি ৪৪ বলে ৬০ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেন ৯ চার, ১ ছক্কায়। দ্বিতীয় উইকেটে দারুণ ফর্মে থাকা বিরাট কোহলির সঙ্গে ৯৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছে রেখেই ফিরে যান তিনি। এ জুটিই মূলত বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। পরে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি এসে ১৪তম ওভারে আলআমিনের ৫ বলেই তুলে নেন ২০ রান। কোহলি ২৮ বলে ৫ চারে ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৭ বল হাতে রেখেই সর্বাধিক ষষ্ঠবারের মতো এবং একমাত্র টি২০ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় ভারত ২ উইকেটে ১২২ রান তুলে। ২০১২ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বাংলাদেশের। এবার ভারতের কাছে হেরে একই বিষণœতা আর বিদীর্ণ বুক নিয়েই মাঠ ছাড়লেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
×