শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর রামপুরায় দুই সন্তানকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে বলে র্যাব ও পুলিশের কাছে স্বীকার করলেও খুনের কারণ (মোটিভ) কি তা বলতে পারছে না মা মাহফুজা মালেকা জেসমিন। খুনের এক সপ্তাহ পরও খুনের কারণ উদ্ঘাটন না করতে পারায় মা-কে জিজ্ঞাসাবাদে বিশেষজ্ঞ ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ। তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় স্বীকারোক্তির চেয়ে প্রযুক্তিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তেরো ধরনের আলামতকে ডিএনএ পরীক্ষার
উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্রেফতারের পর লেখাপড়ার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে নিজের দুই সন্তানকে একাই হত্যা করেছেন বলে মা মাহফুজা স্বীকার করেছেন র্যাবের এমন দাবি থেকে সরে এসে পুলিশ বলছে অন্য কারণও থাকতে পারে। অন্য কোন কারণ খুঁজতে গিয়ে পুলিশ মাহফুজার স্বামীর কোন পরকীয়া প্রেম আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য মোবাইল ফোনের কললিস্টও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, মা মাহমুদা একাই করেছেন নাকি সঙ্গে আরও কেউ ছিল তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার কোন মানসিক সমস্যা আছে কিনা তাও জানার চেষ্টায় পুলিশের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তাকে। এ জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞদেরও সহায়তা নেয়া হয়েছে।
তদন্তকারী সূত্র জানায়, বালিশের কভার, বিছানার চাদর, ওড়নাসহ বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোর ডিএনএ টেস্ট করা হচ্ছে। সিআইডিও হত্যাকা-ের আলামত পরীক্ষার জন্য নিয়েছে। তারা আলামত পরীক্ষা করে দেখছেন। দুই সন্তানকে কি গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে নাকি ওড়না পেঁচিয়ে? আলামতের পরীক্ষার পর এসব বিষয়ে জানা যাবে।
তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজাকে রিমান্ডের তৃতীয় দিনেও তিনি একাই তার দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করছেন। কিন্তু কেন হত্যা করেছে তার জবাব নেই।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সহায়তার বিষয়টি মা মাহফুজা মালেক জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি নিজের দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তবে এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মা হিসেবে নয়, একজন রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এমন কী ঘটনা ঘটল যে সন্তানকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
মা ছাড়াও অন্য কারও যোগসাজশ রয়েছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, অন্য কারও যোগসাজশ রয়েছে কিংবা বা অন্য কারও দায় আড়াল করতে নিজে দায় স্বীকার করছেন কিনা তা তদন্তের পর জানা যাবে। দুই সন্তান হত্যার মামলাটি জটিল। এ ধরনের ঘটনায় অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করতে হয়। পারিপার্শ্বিক সব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই তদন্ত চলছে বলেও উল্লেখ করেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
গত সোমবার বিকেলে রামপুরার বনশ্রীর বি-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাসার পঞ্চম তলায় নুসরাত ও আলভী নিহত হয়। মৃত্যুর পর নিহত দুই সন্তানের মা জেসমিন ও খালা মিলা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, খাবারের বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তে চিকিৎসকরা জানান, তাদের হত্যা করা হয়েছে। এরপর সন্তানদের বাবা আমান উল্লাহ বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সন্তানদের মাকেই একমাত্র আসামি করা হয়। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামপুরা থানার পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান শুক্রবার আসামি জেসমিনকে দশ দিনের রিমান্ডে চান। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রবিবার রিমান্ডের তৃতীয় দিনে জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদেও খুনের প্রকৃত মোটিভ উদ্ধার হয়নি বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: