ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মীর কাশেমের মামলা নিয়ে একই সুর রিজভী ও দুই মাহবুবের

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৭ মার্চ ২০১৬

মীর কাশেমের মামলা নিয়ে একই সুর  রিজভী ও দুই মাহবুবের

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর আপীল নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, খন্দকার মাহবুব হোসেনের সঙ্গে একই সুরে সুর মিলিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে জড়িয়ে সরকারের দুই মন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ, হুমকিমূলক এবং রাজনৈতিক মস্তানি। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বক্তব্য দেয়ায় সরকারের দুই মন্ত্রীর বিচার দাবি করেছেন। দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সর্বোচ্চ ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে আঘাত ছিল। এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য বিচার বিভাগকে অবজ্ঞা ও অবমাননা করার শামিল। অন্যদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর মামলা থেকে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সরে দাঁড়ানো উচিত বলে দুজন মন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য অসাংবিধানিক। শনিবার রাজধানীর ধানম-িতে বিলিয়া মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র : সরকার, বিচার বিভাগ ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তাগণ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মৃত্যুদ-ে দ-িত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর আপীলের পুনঃশুনানি দাবি করেছেন। তারই প্রতিক্রিয়ায় রবিবার বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ সমস্ত কথা বলেছেন। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ‘চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ, হুমকিমূলক এবং রাজনৈতিক মস্তানি। এ ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অবৈধ সরকার একদলীয় শাসনের যাত্রাপথে সব সীমানা লঙ্ঘন করল।’ তিনি বলেন, আপীলের শুনানিতে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন দলের কাজ নিয়ে প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ প্রকাশের মধ্য দিয়ে রায়েরই ইঙ্গিত মিলছে। এ মামলার রায় কী হবে, তা প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি। তার বক্তব্যের মধ্যে এটা অনুধাবন করেছি, এ মামলায় আর মৃত্যুদ-ের রায় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকও প্রধান বিচারপতির মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। তা না পারলে তাকে সরে দাঁড়াতে বলেন। এর সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দুই মন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন, তা রাষ্ট্রের একটি স্বতন্ত্র অঙ্গ হিসেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর নগ্ন হস্তক্ষেপ। ...এটি আদালত অবমাননাকর।’ খন্দকার মাহবুব হোসেন ॥ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতি ও মীর কাশেম আলীর রায় নিয়ে সরকারের দুই মন্ত্রী যে মন্তব্য দিয়েছেন তাতে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই দেখার বিষয়। সংবিধানের রক্ষকরা যেভাবে সংবিধান ভঙ্গ করেছেন তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেবে সেটা সরকারই ভাল জানেন।’ রবিবার সুপ্রীমকোর্ট বার আয়োজিত প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্যর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ভার্বমূতি রক্ষায় সর্বোচ্চ আদালত দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পদস্থ দু’জন মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বিচার বিভাগের জন্য হুমকি স্বরূপ। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যদি এই দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থ্য গ্রহণ না করা হয় তাহলে দেশবাসী মনে করবে ন্যায়বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রীমকোর্র্টও বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের রক্তচক্ষু দেখে ভীতসন্ত্রস্ত। বিএনপির এই আইনজীবী বলেন, সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের পাঁয়তারা করছে। মীর কাশেম আলীর মামলা নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সেটা আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে। দুই মন্ত্রীর বক্তব্য শুধু মীর কাশেম আলীর মামলার ব্যাপারে নয়, এটা সর্বোচ্চ আদালতে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে আঘাত স্বরূপ। মাহবুবে আলম ॥ যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর আপীল নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের পর এ ধরনের মন্তব্য এড়ানোর পাশাপাশি এ রায় নিয়ে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে ওই বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রায়ের তিন দিন আগে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যে রবিবার এ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি একটি দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রধান, সুতরাং তাকে বিতর্কিত করা মানে বিচার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করা।’
×