ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অর্ধশতাধিক নেতা নতুন কমিটিতে বাদ পড়তে পারেন

বিএনপি নেতারা ব্যস্ত লবিং তদবির আর লন্ডন কানেকশনে

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ৭ মার্চ ২০১৬

 বিএনপি নেতারা ব্যস্ত লবিং তদবির আর লন্ডন কানেকশনে

শরীফুল ইসলাম ॥ ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি চলছে পুরনো কমিটি দিয়ে। তবে জাতীয় কাউন্সিলের পর নতুন কমিটি হচ্ছে বিধায় এ কমিটির নেতা হওয়ার লড়াই এখন তুঙ্গে। কে কাকে ডিঙ্গিয়ে সুবিধাজনক পদে যেতে পারেন এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। জাতীয় কাউন্সিলের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দৌড়ঝাঁপ বাড়ছে। দিনরাত চলছে দলের সিনিয়র নেতাদের বাড়ি, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লবিং-তদবির। সূত্র মতে, ১৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় খালেদা জিয়াকে পুনরায় দলের চেয়ারপার্সন ও তারেক রহমানকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এখন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দলের নতুন নির্বাহী কমিটির কোন পদে কাকে দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ করছেন। ইতোমধ্যেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নতুন কমিটির একটি খসড়াও প্রস্তুত করেছেন বলে জানা গেছে। তবে কাউন্সিলের পর তারা আরও পর্যালোচনা করে নতুন কমিটি চূড়ান্ত করে সুবিধাজনক সময়ে ঘোষণা করবেন। বিএনপির বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটি ৩৮৬ সদস্যের। এবার এ কমিটির পরিধি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। আর এ কমিটিতে বর্তমান কমিটির শতাধিক নেতাকে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। আর বাদ দেয়া হচ্ছে অর্ধশতাধিক নেতাকে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার বেশিরভাগই থাকছেন নতুন মুখ। এর মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে নেয়া হবে সাবেক ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা তরুণ নেতাকে। সারাদেশের বিভিন্ন জেলার তৃণমূল থেকেও বেশ ক’জনকে স্থান দেয়া হবে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি করতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি হাইকমান্ড ভেতরে ভেতরে কাজ করছে। জানা যায়, এবার জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নেবে বিএনপির প্রায় ৩ হাজার কাউন্সিলর। আর কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে কাউন্সিলরসহ দলের প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী। ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় কাউন্সিল না হওয়ায় বিএনপির পদপ্রত্যাশী অনেক নেতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বর্তমান কমিটির অনেক নেতাও পদোন্নতির জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে। দেশে সিনিয়র নেতাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে লবিং-তদবিরের পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এবার বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নতুন কমিটির মহাসচিব করার বিষয়টি ফয়সালা হবে। কাউন্সিলের পর যে কমিটি আসবে তাতে মহাসচিব হিসেবে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। তবে দলের আরও ক’জন সিনিয়র নেতা মহাসচিব পদ পাওয়ার জন্য গোপনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেক নজরে আসার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া বর্তমান কমিটির যে শতাধিক নেতা পদোন্নতি পাওয়ার জন্য লবিং-তদবির করছেন তাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পেতে পারেন ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শামসুজ্জামান দুদু। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে নতুন যারা আসতে পারেন বলে আলোচনায় আছেন তারা হলেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কবির রিজভী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, কৃষক দল নেতা তকদির হোসেন জসিম প্রমুখ। এবার পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম মহাসচিব পদ পেতে যারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন, নাজিমউদ্দিন আলম, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, যুববিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সহ-প্রচার এমরান সালেহ প্রিন্স, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ। আর দলে নিষ্ক্রিয় থাকায় বর্তমান কমিটির অর্ধশতাধিক নেতা পরবর্তী কমিটিতে বাদ পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। এদের মধ্যে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান খান আজাদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাই, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক একেএম মোশাররফ, নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব) মঞ্জুর কাদের, সিরাজুল ইসলাম সরদার, এন আই খান, খন্দকার আহসান হাবিব, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শামসুদ্দিন, এম আকবর আলী, আনোয়ার হোসাইন, আলমগীর মোঃ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ, মিজানুর রহমান, শাহানা রহমান রানী, মতিয়ার রহমান তালুকদার, রাবেয়া সিরাজ, খালেদা পান্না প্রমুখ। প্রসঙ্গত বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। এর আগে ১৯৯৩ সালের ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলানগরে খোলা জায়গায় তাঁবু টানিয়ে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করা হয়। ২০০৯ সালের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের দিন খালেদা জিয়াকে পুনরায় চেয়ারপার্সন এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করে দলের ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নিতে ইতোমধ্যেই নির্বাহী কমিটি, ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি জেলা কমিটি থেকে দু’জন করে নারী কাউন্সিলরের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তাদের নামে কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে বিএনপির গুলশান ও নয়াপল্টন কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিড় বেড়েছে সিনিয়র নেতাদের বাসায়ও। পরবর্তী নির্বাহী কমিটিতে স্থান পেতে বিএনপি নেতারা এখন বিগত দিনে নিজেদের কর্মকা-ের ফিরিস্তি নিয়ে হাজির হচ্ছেন সিনিয়র নেতাদের দ্বারে দ্বারে। কেউ কেউ পদকে ধরে রাখার জন্য, আবার কেউ কেউ আরেকটু ভাল অবস্থানে যাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমেও নিজের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন। কেউবা আবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেরও দ্বারস্থ হচ্ছেন। কোন কোন নেতাকে আগে দলীয় কার্যালয়ে কখনও দেখা না গেলেও এখন কোন কাজ না থাকলেও চলে যাচ্ছেন গুলশান চেয়ারপার্সনের কার্যালয় কিংবা নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। দলে পদ পাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন এতদিন নিষ্ক্রিয় থাকা সংস্কারপন্থী নেতারাও। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বড় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসতে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। তবে যারা অতীতে দলের জন্য কাজ করেছেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে। এবার নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। আর এ কমিটি দল ও দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিলের জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। কাউন্সিলের পর অবশ্যই দলের নতুন নির্বাহী কমিটি আসবে। এতে বর্তমান কমিটির ত্যাগী ও মেধাবী নেতারা পদোন্নতি পাবেন।
×