ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ও বঙ্গমাতা পরিষদের সেমিনারে খাদ্যমন্ত্রী কামরুলের মন্তব্য

চীফ জাস্টিস ও এ্যাটর্নির কণ্ঠে জামায়াতের লবিস্টদের বক্তব্য

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ৭ মার্চ ২০১৬

চীফ জাস্টিস ও এ্যাটর্নির কণ্ঠে জামায়াতের লবিস্টদের বক্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামায়াত-বিএনপি এবং তাদের লবিস্টরা যে সুরে কথা বলছে, প্রধান বিচারপতিও ঠিক একই সুরে কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বর্ধিত সভায় তিনি এ কথা বলেন। এদিকে রবিবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) পৃথক এক সভায় বর্তমান আইনমন্ত্রী ও সাবেক এই আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপির ভাষা এবং আমাদের এ্যাটর্নি জেনারেলের ভাষাও একই, তিনি আর রিজভী একই সুরে কথা বলছেন। এদিকে দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, এটা হয়ত ব্যক্তিগতভাবে কেউ মন্তব্য করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে যে কেউ তার মতপ্রকাশ করতে পারেন। তবে তিনি নিজে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। রবিবার বিকেলে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, বিচারপতিরা প্রকাশ্য আদালতে বলেনÑ প্রসিকিউটরা রাজনীতি করছেন। তখন ১৬ কোটি মানুষের একজন হিসেবে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি কি রি-এ্যাকশন দিতে পারব না? তিনি বলেন, আমি তো প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কথা বলছি না। রায় ঘোষণার আগে আমাকে যেভাবে সংক্ষুব্ধ করেছেন রি-এ্যাকশন দেয়ার স্বাধীনতা কি আমার নেই? এখানে সংবিধানকে লঙ্ঘন করা, আদালত অবমাননা করাÑ এসব কথা বলার তো কোন অর্থই হয় না। মীর কাশেম আলীর আপীলের শুনানিতে প্রসিকিউশনের কাজে প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ প্রকাশের পর শনিবার ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মীর কাশেমের আপীলের পুনঃশুনানির দাবি করেন মন্ত্রী কামরুল ইসলাম। ওই আপীল শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকেও বাদ রাখতে বলেছিলেন তিনি। নির্মূল কমিটির ওই গোলটেবিলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকও বলেছিলেন প্রধান বিচারপতিকে সরে দাঁড়াতে। পরে রবিবার দুই মন্ত্রীর বক্তব্যকে অসাংবিধানিক ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেন এ্যাটর্নি জেনারেল। নির্মূল কমিটির আলোচনা সভায় কামরুল বলেন, জামায়াত যে অভিযোগ করেছে, বিএনপি যে অভিযোগ করেছে, তাদের আন্তর্জাতিক লবিস্ট গ্রুপ যে সুরে কথা বলছে, একই সুরে কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি। প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন তিনি। এই মামলার রায় কী হবে, তা প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি। পরে রবিবার দুপুরে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য অসাংবিধানিক। প্রধান বিচারপতিকে জড়িয়ে মন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনও। পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সময় আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কামরুল নিজেকে একটা পক্ষ দাবি করে বলেন, আমি কিন্তু আদালত অবমাননাকর কোন কথা বলিনি, সংবিধান লঙ্ঘন করিনি। আমি বলিনি যে আদালত বায়াসড হয়ে এ কথাগুলো বলেছে। আমরা সবাই রায়ের আগে প্রধান বিচারপতির মন্তব্যগুলোতে উদ্বিগ্ন হয়েছি যে, কী হতে যাচ্ছে? আমি এ মামলার বাদী, ১৬ কোটি মানুষই এ মামলার বাদী। তিনি বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোন কথা বলা সমীচীন নয়, এটা আমি স্বীকার করছি। কিন্তু বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বিচার চলাকালীন কেউ কোন পক্ষকে এরকমভাবে হার্ট বা কষ্ট দিতে পারেন না। কষ্ট দিয়েছেন বলেই আমার মুখ দিয়ে এ রকম কথা বের হয়েছে। জনমনের সংশয় দূর করার জন্য এই আপীল জানিয়েছি (প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে বেঞ্চ গঠন); আদালত অবমাননার জন্য নয়। তিনি আরও বলেন, যখন দেখি প্রকাশ্য আদালতে প্রসিকিউটরদের একেবারে ধুয়ে ফেলেছে এবং আদালত একপর্যায়ে এমন কথাও বলেছেÑ প্রসিকিউটররা মামলার নামে রাজনীতি করছেন। তার মানে রাষ্ট্র বা সরকার রাজনীতি করছে তা বোঝা যাচ্ছে। তখন কি আমি সংক্ষুব্ধ হব না? উদ্বিগ্ন হব না? আমার কোন রি-এ্যাকশন থাকবে না? এখনও প্রত্যাশা করি রায়টা ঠিক হোক। মীর কাশেম আলীকে ছেড়ে দিলে কলিজাটা ফেটে যাবেÑ বলেন এই মন্ত্রী। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ ‘স্বাধীনতা দিবস ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ জনতা ব্যাংকের পরিচালক বলরাম পোদ্দার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম মৃধা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ। মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা কামরুল ইসলাম বলেছেন, আগামী ৮ তারিখ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর আপীলের রায়। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার আমরা করছি, চারজনের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। নিজামীর মৃত্যুদ- আপীলে বহাল রেখেছে। এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। যথাসময় কার্যকর হবে। তিনি বলেন, আগামী ৮ তারিখ তাদের সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি, যিনি কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। তার লবিস্ট টবি ক্যাডম্যান আন্তর্জাতিক বিশ্বে এই বিচারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এখন পর্যন্ত তার (কাশেম) অর্থ সক্রিয়। তার দেহটা কারাগারের কনডেম সেলে, কিন্তু তার অর্থ বাইরে সক্রিয়, তৎপর এবং ষড়যন্ত্র করছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা অতীতে সকল রায়ের সময় যেভাবে মাঠে ছিলাম, ৮ তারিখ তেমনি মাঠে থাকব। আজকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ বিচার সম্পর্কে কথা উঠছে। প্রসিকিউশন রাজনীতি করছেÑ এ কথা উঠছে। অর্থাৎ জামায়াত-বিএনপি এবং তাদের লবিস্টরা যে সুরে কথা বলছে, সে কথাটা আজকে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্যে বলেছেন। প্রসিকিউশন এবং ইনভেস্টিগেশনকে এক কাতারে দাঁড় করানোর কথাও তিনি (প্রধান বিচারপতি) বলেছেন। অথচ এই প্রসিকিউশন ২৩টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। ২ জনের মৃত্যুদ- হয়েছে এবং সকল মামলা তারা (বর্তমান প্রসিকিউশন) সফলভাবে পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, আমরা এতকিছু বুঝি না, আমরা প্রত্যাশিত রায় চাই। একজন মন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, একজন সাধারণ বিচারপ্রার্থী হিসেবে এ মামলারও বিচারপ্রার্থী। বিচারপ্রার্থীরা আজ হতাশ। এ বিচারের রায় কি হবে তাদের মনে একটা সন্দেহ আছে। আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের সন্দেহ দূর হবে। আমরা প্রত্যাশিত রায় ৮ তারিখ পাব। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ৮ তারিখ মীর কাশেম আলীর রায় ঘোষণা হবে। আমরা অধীর আগ্রহে বসে আছি, তার সর্বোচ্চ সাজা দেখার জন্য। শহীদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, যদি ওলটপালট হয় তাহলে শহীদদের আত্মা তাদের ক্ষমা করবে না। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখেনÑ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ। ব্যক্তিগতভাবে যে কেউ মতপ্রকাশ করতে পারে ॥ বিচারাধীন বিষয়ে এবং প্রধান বিচারপতির কার্যক্রম নিয়ে কোন মন্ত্রী প্রশ্ন করতে পারেন কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আপনারা জানেন, আমি আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময়ও বিচারাধীন বিষয়ে কখনও মন্তব্য করিনি। তাই এখনও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। এটা হয়ত ব্যক্তিগতভাবে কেউ মন্তব্য করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে যে কেউ তার মতপ্রকাশ করতে পারেন। রবিবার দুপুরে জাতীয় আইন সহায়তা কেন্দ্র এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকরা আইনমন্ত্রীর কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।
×