ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চেতনায় স্বাধীনতা

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ৭ মার্চ ২০১৬

চেতনায় স্বাধীনতা

ঘাসের চাদরে ঢেকে আছে মাঠ, আর সেই সবুজ খোলা মাঠে গোল হয়ে বসে আছে একদল তরুণ-তরুণী, দু’একজনের হাতে গিটার, গিটারের টুংটাং বাজনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবাই গলা ছেড়ে গান গাইছে। দেশের গান, জাগরণের গান। এ দৃশ্য এখন আমাদের কারও কাছে অচেনা নয়। সময়টাই যেন এখন জাগরণের। আর এই জাগরণের জয়গানে তরুণরা তো সবার সামনে। শুধুই তারাই নয়, গোটা দেশ যেন মেতেছে আজ নতুন গানে। আর নতুন সুরের তালে। আবালবৃদ্ধবনিতা আজ স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত। তারই বহির্প্রকাশ আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও আজ স্পষ্ট। চলনে বলনে, পোশাকে আসাকে দেশপ্রেমের প্রকাশ চোখে পড়ার মতো। ফেব্রুয়ারিতে সাদা-কালো রঙের পোশাক যেন হয়ে ওঠে ভাষা শহীদদের প্রতি নীরব সম্মান জানানোর মাধ্যম। মার্চে লাল-সবুজ-হলুদ, বৈশাখে সাদা- লাল আবার ডিসেম্বরে লাল-সবুজ যেন এরই ধারাবাহিকতা চলে আসে। আর ফাল্গুনে বাসন্তী-লাল তো বসন্তের প্রকৃতিরই রূপ। এ রকম ঐতিহ্য আর ইতিহাসের কথা মনে রেখে পোশাক পরেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার শুধু পোশাক কিংবা রূপসজ্জায় নয়, অন্য অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছেন আরেকটু এগিয়ে। ভাষা আন্দোলনের মাসে কিংবা স্বাধীনতার মাসে অথবা বিজয়ের মাসে অনেকে মোবাইল ফোনের রিংটোনে ব্যবহার করেন দেশের গান। ওয়েলকাম টিউনেও সেট করেন দেশাত্মবোধক গান। ফেসবুকের প্রোফাইলেও ব্যবহার করতে দেখা যায় জাতীয় পতাকার ছবি। মাসব্যাপী অনেকেই পরেন ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের থিমভিত্তিক পোশাক। শুধু তাই নয়, পোশাকে থাকে দেশীয় ঐতিহ্যের নানা প্রতিকৃতি। অনেকে আবার দেশপ্রেমের ছোঁয়ায় সাজিয়ে রাখেন আপন ঘরটুকুও। গৃহসজ্জায় ব্যবহৃত উপকরণগুলোয় থাকে নিজস্ব ইতিহাসে আর ঐতিহ্যের ছাপ। ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেন শতভাগ বাঙালীয়ানা। সেখানে হয়ত ঘরের কোণ সাজাতে ঠাঁই পায় একতারা, দোতারা, সুদৃশ্য ডাইনিং টেবিলে দেখা যায় মাটির তৈরি থানা-বাসন, গ্লাস-মগ ইত্যাদি। জানালার পর্দায় ঝুলে থাকে লাল-সবুজের বাহারি পর্দা। ঘরের দেয়ালে থেকে স্মৃতিসৌধ কিংবা রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিও যেন বাদ না পড়ে। সে খেয়ালও থাকে। ইতিহাস আর ঐতিহ্য নয়। আমাদের সংস্কৃতিও বাদ যায় না এসব থেকে। উৎসবের আমেজকে আরও প্রাণবন্ত করতে বেজে ওঠে দেশীয় গান, দেশের গান। জারি-সারি, ভাওয়াই ছাড়াও তরুণ প্রজন্মের শিল্পীর গাওয়া দেশাত্মবোধক গান শুনতে পাওয়া যায় ঘরে-বাইরে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান নিয়ে বের হয়েছে সঙ্কলিত সিডি। এসব গানও শোনা যায় বিভিন্ন শপিংমলে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। স্বাধীনতার চেতনায় জাগ্রত আজ গোটা দেশ, সমগ্র জাতি, ঘরে বাইরে, কর্মস্থলে সবখানে সবাই সজাগ নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে। এই দেশী ছাপটাই এখন আমাদের পরিচয়। গ্রীষ্মের আমের বোল, বর্ষাস্নাত কদম ফুল, নদীর বুকে পাল তোলা নৌকা, হেমন্তের ধান খেতে বয়ে যাওয়া শীতল বাতাস, পৌষের পিঠাপুলি, কিংবা বসন্তের বর্ণিল প্রকৃতি এসবই আমাদের পরিচয়ের বাহক। আর তার সাথে আছে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সবই উঠে আসছে তরুণ প্রজন্মের জীবনে-যাপনে, বেশভূষায়। বিশেষ দিবসগুলোর থিম নিয়ে তৈরি হচ্ছে পোশাক, গহনা, গৃহসজ্জার উপকরণ। পাশাপাশি প্রাধান্য পাচ্ছে দেশীয় খাবার হচ্ছে সঙ্গীতায়োজন ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সবই ছিল আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। আর এ লড়াইয়ের ইতিহাস আমাদের গৌরবের ইতিহাস। গৌরবময় এ ইতিহাসকে অমলিন রাখতে গোটা দেশ আজ জেগেছে নতুন করে। জাগরণী মন্ত্রে দীক্ষিত সমগ্র বাঙালী জাতি, যাদের চেতনায় আছে মুক্তিযুদ্ধ। আর অনুভূতিতে আছে স্বাধীনতার আনন্দ। তারই প্রকাশে তরুণ কণ্ঠে ধ্বনিত হয় স্বাধীনতার গান। শাওন রহমান মডেল : সনি রহমান ও সাদিয়া আফরিন
×