ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ জাভেদ বিন-এ-হাকিম

শিশুর মানসিক বিকাশে ভ্রমণ

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ৭ মার্চ ২০১৬

শিশুর মানসিক বিকাশে ভ্রমণ

একটি শিশুর উৎকর্ষ মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ যে কয়েকটি উপকরণ রয়েছে তার মধ্যে ভ্রমণ হলো অন্যতম। সুস্থ ও স্বাভাবিক নিয়মে বেড়ে উঠতে এবং বাস্তব জীবনের শিক্ষা দেয়ার জন্য শিশুকে সময় সুযোগ করে প্রায়ই নিয়ে যান প্রকৃতির কাছে। উদার করা প্রকৃতিই হলো আমাদের উত্তম শিক্ষক। শহুরে পরিবেশে-অভিভাবকদের সঙ্গে সঙ্গে সন্তানরাও যন্ত্রে পরিণত হওয়ার পথে। যার দীর্ঘ নেতিবাচক প্রভাব শিশুর জীবনে প্রতিফলিত হয়। যা এক সমাজ-সংসার-রাষ্ট্রের গঠনমূলক পরিবেশ সৃষ্টির অন্তরায়। আমি আমার সন্তানদের জন্য ভাবি তাই সুযোগ পেলে/করে প্রায়ই তাদের নিয়ে উজাড় করা প্রকৃতির পানে ছুটি। তেমনি গত কিছুদিন আগে যান্ত্রিক জীবনে মিলেছিল দুই দিনের ছুটি, ব্যাস আর পায় কে? সঙ্গী জীবন সঙ্গিনী আর তিনকন্যা। রাতের গাড়িতে চড়ে সকাল দশটায় গিয়ে পৌঁছি কক্সবাজার। আগে থেকেই এন আজিম কটেজ রেখে ছিল রেডি। কলাতলী নেমে সোজা হোটেল লবি, খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে ছুটি সৈকতমুখী। বালিয়াড়ি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে করি মিতালি। বীচ বাইকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট হতে কলাতলী ছুটে বেড়াই মহা আনন্দে। আমার তিনকন্যা কনিতা, রবিতা, বসিতাহ বলতেই আমি যে অজ্ঞান, তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে আমিও হই উচ্ছ্বসিত। এবার শুরু হয় উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে জলকেলি, তিনকন্যার প্রতি তিক্ষè দৃষ্টি রাখতে গিয়ে আমি তখন মহা ব্যস্ত। এ যে সন্তানের প্রতি বাবার অকৃত্রিম ভালবাসারই অংশ। দীর্ঘক্ষণ সমুদ্রের নোনাজলের ঢেউয়ের সঙ্গে মাতামাতি, অতঃপর ঘোড়ার পিঠে সওয়ার, ফটোস্যুট অবশেষে হোটেলমুখী। ফ্রেস হয়ে বার্ড রেস্তোরাঁয় কয়েকপদের ভর্তা, ভাত, রূপচাঁদা ফ্রাই দিয়ে পেট পূজারি। চেটে-পুটে খেয়ে দেয়ে সময়িক বিশ্রাম নিয়ে ঘুরে বেড়াই শহরজুড়ে, আচার কিনে ব্যাগ ভরি, শামুক-ঝিনুকের হরেক পসরা কিনে লই চোরের বোঝা, কলাতলী বীচে সি-পপিস এ মজাদার সব বার্গার আর সি-ফুড গোগ্রাস করে চলে যাই ঘুমাতে। ওঠতে হবে সকাল সকালে, যেতে হবে সৌন্দর্যের আধার, নয়ন জুড়ানো প্রকৃতির রাজ্য উখিয়ার পাটুয়ার টেক। দুরন্ত-ছুটন্ত প্রাণবন্ত মেয়েদের জন্য কি আর চাইলেই ঘুমাতে পারি, কটেজে ছোটাছুটি করে বিছানায় শুই রাত ১২টারও পরে। এক ঘুমে রাত পার। সকালে নাশতা সেরে শফিকুলের সিএনজি অটোরিক্সায় চড়ে যাই উখিয়ার পথে, মেরীন ড্রাইভে পিচ করা সড়কে অটোরিক্সা ছুটছে। সড়কের এক পাশে সাগর, আরেক পাশে পাহাড়, সারি সারি ঝাউগাছের ছায়াঘেরা সুনসান নিরিবিলি সড়ক পথে জার্নি করার মজাই আলাদা। মাঝে ইনানী ব্রেক, ঘণ্টা তিনেক বিশাল বালিয়াড়ি আর ঢেউয়ের সঙ্গে চলে খুনসুটি, কষ্ট পাইÑ যখন দেখি অগণিত চিপ্সের প্যাকেট, কলার খোসা সিগারেটের প্যাকেট, ফিল্টারসহ আরও অনেক প্রকারের আবর্জনা সুন্দর একটি সেকতজুড়েÑ যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ, সচেতনতার অভাব আর অবহেলা- সমানতালে চলতে থাকলে, খুব শীঘ্রই সুন্দর একটি সৈকতের অপমৃত্যু হবে। পেট বাবাজির ডাক পড়ে-যাই সৈকত লাগোয়া নাম ডাক ওয়ালা এক রেস্টুরেন্টে, চলে দুপুরের আহার। দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের টাকা খসাতে জুড়ি মেলা ভার কিন্তু একটি ড্রেসিংরুমের জন্য সামান্য ব্যয় করতে রয়েছে যত কার্পণ্য। টয়লেটের ভেতরেই সারতে হয় ভ্রমণপিপাসুদের ভেজা কাপড় বদলানোর কাজ। আশ্চর্য ! বাইরে কত সুন্দর সাজানো-গুছানো অথচ বাতির নিচে অন্ধকার। দেখা হয় ঢাকা থেকে যাওয়া নানান দেশে ঘুরে বেড়ানো হুমায়ুন সাহেবের সঙ্গে। তিনিও এমন একটি রেস্টুরেন্টে ড্রেসিংরুম না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করলেন। এসব কারণেই আমাদের দেশে পর্যটন শিল্প বিকাশে, যা এক বিশাল অন্তরায়। খাবার পর্ব চুকিয়ে আবারও ছুটি। ইনানী হতে মাত্র সাত কিলোমিটার। পাটুয়ারটেক যাবার পথের সৌন্দর্য যেন আরও হৃদয় গ্রাহি আরও বেশি কোমল। উদার করা প্রকৃতির মোহে মনের অজান্তেই গেয়ে উঠিÑ ইচ্ছে করে যাই চলে যাই অচিনপুর/যেখানে দুঃখ নেই কষ্ট নেই। সিএনজি অটোরিক্সার ব্রেকে চেতনা ফিরে এলো। একেবারে পাটুয়ারটেক বীচে লাগোয়া থেমেছে। ততক্ষণে ভাটা শুরু, পুরোপুরি মোক্ষম সময়। ওয়াও! এ যেন প্রবাল পাথরের স্বর্গ রাজ্য। সৈকতজুড়ে শামুক-ঝিনুকের ছড়াছড়ি, নেই কোন উটকো হকার কিংবা অসচেতন মানুষের উদ্ভট কোলাহল। বর্জ্যমুক্ত চিক চিক করা সাদা বালির সৈকত। ঝিনুক কুড়ানো শিশুদের সঙ্গে আমার তিনকন্যাও মিলেমিশে করেছিল সৌহার্দ্যরে মেলবন্ধন, আজ নেই কোন ধনী-গরিবের ভেদাভেদ। সবাই এখানে প্রকৃতির মেহমান। উচ্ছল উদ্যম প্রাণ চঞ্চল্য ছোটাছুটি। সারিবদ্ধ নারিকেল গাছের ছায়া। সৈকতের পাশেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সবুজের গালিচায় মোড়ানো পাহাড়, রয়েছে জেলে পরিবারের জীবন মানের চিত্র। হাত বাড়ালেই মিলবে হরেকপদের সদ্য ধরে আনা সামুদ্রিক মাছ। তৃপ্তি পাবেন, যখন দেখবেন আপনি ও আপনার শিশুরা কলাতলী বা লাবণী পয়েন্টে বীচে বিচরণ করা মানুষ রুপি দু-পায়া জন্তুগুলোর নোংড়ামি দেখে বিব্রত না হচ্ছেন। পুরো একটা বিকেল ঝড়ের দিনে মামার বাড়িÑ আম কুড়াতে সুখ থুক্কু পড়ন্ত বিকেলে সাগর পাড়েÑ শামুক-ঝিনুক কুড়াতে সুখ। পশ্চিমা অথৈ জলে সূর্য লুকানোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও উত্তরে ফেরার পথ ধরি। যোগাযোগ : ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের গাড়িতে কক্সবাজার কলাতলী। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিক্সায়/মাইক্রোতে উখিয়ার পাটুয়ার টেক। ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া জনপ্রতি ৯০০ টাকা হতে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রচুর হোটেল/মোটেল/কটেজ রয়েছে কক্সবাজার। ভাড়া রুমপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা হতে ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত। আরও বেশি জানতে নেটে সার্চ দিন, পেয়ে যাবেন আপনার সাধ্যের মধ্যে থাকার জন্য হোটেল-মোটেলের ঠিকানা। তথ্য : প্রথমদিন কক্সবাজার রাত্রি থেকে পরেরদিন খুব ভোরে রওনা হলে যাবার পথে দরিয়ানগর ও ইনানী বীচে ঘুরে পাটুয়ার টেকের সৌন্দর্যে মন ভরে উপভোগ করা যাবে, ভ্রমণ সূচীতে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পাটুয়ারটেক বীচে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় হলো ভাটা। খরচপাতি তিন দিনের ভ্রমণে জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা হলেই যথেষ্ট। সতর্কতা : সঙ্গে ব্যাগ রাখুন, যে কোন খাবারের মোড়ক-বর্জ্য, সেই ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন। মডেল : অহনা, সাঞ্জু ও আদি
×