ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নয়টি দেশের মিশন প্রধানদের ঘোষণা

বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়তে চায় লাতিন আমেরিকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৭ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়তে চায় লাতিন আমেরিকা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর ও বিস্তৃত সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী লাতিন আমেরিকা। তবে এই সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। এছাড়া লাতিন আমেরিকা হতে পারে বাংলাদেশী পণ্যের অন্যতম গন্তব্য। রবিবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এক সেমিনারে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের নয়টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের সঙ্গে লাতিন আমেরিকার সম্পর্ক : সম্ভাবনার নতুন দুয়ার’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিআইআইএসএস। সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের নয়টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও মিশনপ্রধানরা বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে ব্রাজিল ছাড়া অন্যরা অনাবাসী হিসেবে দিল্লীতে অবস্থান করেন। সেমিনারে দিল্লী থেকে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, ইকুয়েডর, পেরু, ভেনিজুয়েলা, গায়ানা ও ত্রিনিদাদ টোবাগোর মিশনপ্রধানরা যোগ দেন। সেমিনার শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের নয়টি দেশের মিশনপ্রধানরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর ও বিস্তৃত করার ঘোষণা দেন। তারা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো গভীর সম্পর্ক গড়তে চায়। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন মিশনপ্রধানরা। সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ এবং লাতিন আমেরিকার জনগণের মধ্যে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার বিষয়ে একই রকমের মূল্যবোধ এবং শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। সে কারণে এ দু’অঞ্চলের মধ্যকার ভৌগোলিক দূরত্ব অতিক্রমে ভূমিকা রাখতে পারে। বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় ও অন্যান্য সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে পারে। শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশ ও লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য প্রতিনিধি দল বিনিময় ও বাণিজ্যমেলা আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে বাংলাদেশ ও লাতিন আমেরিকার দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উভয়ে লাভবান হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশ ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ধীরগতিতে এগিয়ে চলেছে। লাতিন আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভাষা একটি অন্যতম সমস্যা। এছাড়া ভিসার সমস্যাও রয়েছে। এ দুটি সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ওয়ানজা ক্যাম্পাস নবরেগা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী ব্রাজিল। বাংলাদেশ ও ব্রাজিল বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরামে একযোগে কাজ করছে। বিশেষ করে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে দুই দেশ অতীতে কাজ করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। আমরা এখন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশে নিযুক্ত পেরুর রাষ্ট্রদূত অনাবাসী জোসে জে জি বলেন, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এই সম্পর্ক বাড়ানো সম্ভব নয়। লাতিন আমেরিকা বাংলাদেশের অনেক দূরে হলেও রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিগতভাবে একে অপরের সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে। বাংলাদেশ ও লাতিন আমেরিকা উভয়েই খাদ্য নিরাপত্তা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ইস্যুতে এখন একযোগে কাজ করছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত মেক্সিকোর অনাবাসী রাষ্ট্রদূত মেলবা প্রিয়া তার বক্তব্যে বলেন, মেক্সিকোয় বাংলদেশের পোশাক পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চাইলে মেক্সিকোয় পোশাক খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগের দারুণ সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ উভয় দেশকেই কাজে লাগাতে হবে। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা একে অপরের মধ্যে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক নয়, সকল বিষয়ে অংশীদার হতে চাই। বাংলাদেশে নিযুক্ত কলম্বিয়ার অনাবাসী রাষ্ট্রদূত মনিকা ল্যানজা বলেন, বাংলাদেশ ও কলম্বিয়ার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আমরা এই দূরত্ব ঘোচাতে চাই। দুই দেশই ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করার জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে পারে। তিনি বলেন, কলম্বিয়ার বহুমুখী সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতির মিল রয়েছে। তাই দুই দেশকে আরও কাছাকাছি আসতে কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত ফ্রাংক হ্যানস্্ ড্যানেনবার্গ আন্তর্জাতিক পরিসরে বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা রহিতকরণের প্রস্তাব করেন। সেমিনারে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সৈয়দ সাদ আন্দালিব, বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আবদুর রহমান এনডিসি, আইসিসির পরিচালক ড. সলিমুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ॥ বাংলাদেশে নিযুক্ত লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের নয়টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও মিশনপ্রধানরা রবিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) অফিসে এক সৌজন্য বৈঠক করেন। এ সময় ব্রাজিল, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, ইকুয়েডর, পেরু, ভেনিজুয়েলা, গায়ানা ও ত্রিনিদাদ টোবাগোর মিশনপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
×