ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ওইদিন সকালে হাসিনা-মোদির ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন হবে নতুন এই সঞ্চালন

ত্রিপুরা থেকে ১০০ মে.ও. বিদ্যুত আসছে ২২ মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৭ মার্চ ২০১৬

ত্রিপুরা থেকে ১০০ মে.ও. বিদ্যুত আসছে ২২ মার্চ

রশিদ মামুন ॥ দুই দফা পিছিয়ে আগামী ২৩ মার্চ ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসছে বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়া দিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংযুক্ত হবেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথভাবে ভারত-বাংলাদেশের নতুন এই সঞ্চালন উদ্বোধনে ঢাকা ও দিল্লী যৌথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। ২৩ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১০টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত ২৫ মিনিটের সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বিদ্যুত মন্ত্রণালয় ২২ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেবে। বিদ্যুত মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিপুরার বিদ্যুতের দর অনুমোদন করেছেন। আগামী বুধবার সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। গত ৯ জানুয়ারি ঢাকায় দুই দেশের বিদ্যুত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে প্রতি ইউনিটের (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম সাড়ে ৫ রুপী দেশীয় মুদ্রায় ৬ টাকা ৪১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। যদিও এই দামের বিষয়ে গেল বছরের শেষ দিকে দিল্লীতে ভারত-বাংলাদেশ একমত হতে পারেনি। ভারত শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থান পরিবর্তনে সম্মত হয়নি। শেষমেষ ভারতের প্রস্তাবিত দামই মেনে নেয় বাংলাদেশ। জানুয়ারিতে ঢাকায় বাংলাদেশের বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে ত্রিপুরার বিদ্যুত, গ্রাম ও শহর উন্নয়ন এবং পরিবহনমন্ত্রী মানিক দে এক সংবাদ সম্মেলনে দামের বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তবে এবার নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ পদ্ধতিতে ত্রিপুরার সঙ্গে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি হবে। অর্থাৎ বিদ্যুত দিলেই টাকা পাবে ত্রিপুরা। এরজন্য বাড়তি ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দরকার হবে না। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, সব কিছু ঠিক থাকলেও এখনও ভারতের সঙ্গে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরের দিন নির্ধারণ হয়নি। সরকারের ক্রয় কমিটি প্রস্তাবটি অনুমোদন করার পর ক্রয় চুক্তির জন্য ত্রিপুরাকে আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ। প্রথা অনুযায়ী বিদ্যুত আমদানির আগেই ক্রয় চুক্তিটি স্বাক্ষর হতে হবে। এর আগে বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর সঞ্চালন লাইনটি উদ্বোধনের কথা ছিল। তবে দাম নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় প্রথমবার প্রক্রিয়াটি ব্যর্থ হয়। দুই দেশের পাওয়ারগ্রিড কোম্পানি ত্রিপুরা-কুমিল্লা সঞ্চালন লাইনটি চার্জ করলেও প্রায় আড়াইমাস তা পড়ে রয়েছে। গত জানুয়ারিতে ত্রিপুরার বিদ্যুত মন্ত্রী ঢাকা সফরের সময় জানানো হয় ফেব্রুয়ারিতেই বিদ্যুত পাবে বাংলাদেশ। যদিও সেবার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২৩ মার্চ বিদ্যুত আমদানি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিনা মাশুলে ট্রানজিট রুট ব্যবহার করে ত্রিপুরার পালাটানায় ৭৭৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করে ভারত। বাংলাদেশের সহযোগিতার জন্য ওই কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় বিষয়টি পিছিয়ে যায়। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বিদ্যুত উন্নয়ন কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করলে ভারত বিদ্যুত দিতে সম্মত হয়। এ প্রেক্ষিতে ত্রিপুরার সঙ্গে আলোচনার জন্য দুই দেশ একটি কমিটি গঠন করে। তারা আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যুত আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত করে। ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানির জন্য কুমিল্লা থেকে ত্রিপুরা অংশে মোট ৫৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে উভয় দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ২৮ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ২৬ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন এই গ্রিড লাইনটি ত্রিপুরার সুরজমনি নগর থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লাকে সংযুক্ত করেছে। প্রসঙ্গত এর আগে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ভারত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুত আমদানি শুরু হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে এ বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। ভারত থেকে এখন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট আমদানি প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে ভারত। দেশটির বেসরকারীখাত থেকে ওই বিদ্যুত কিনে আনতে হবে। আগামী বছরের শেষনাগাদ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ওই বিদ্যুত যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
×