ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

মীর কাশেম আলীর আপীল মামলার চূড়ান্ত রায় কাল

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৭ মার্চ ২০১৬

মীর কাশেম আলীর আপীল মামলার চূড়ান্ত রায় কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতের ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর আপীল মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে কাল মঙ্গলবার। অন্যদিকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর মোঃ নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও শামসুদ্দিন আহম্মেদসহ পাঁচ রাজাকারের পক্ষে সাফাই সাক্ষী না আসাতে সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়নি। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ মার্চ সাফাই সাক্ষী দেয়ার জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ঐ দিন সাফাই সাক্ষী না আসলে প্রসিকিউশন পক্ষ যুক্তিতর্ক শুরু করবে। আগামীকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে মীর কাশেম আলীর আপীলের চূড়ান্ত রায়। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট আপীল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করবেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যগণ হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। মীর কাশেম আলীর মামলাটি রায় হবে আপীল বিভাগের ৭ম মামলা। এর আগে ছয়টি আপীল মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত চারজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি বহাল রেখে ৬ষ্ঠ আপীল মামলার রায় দেয়া হয়েছে গত ৬ জানুয়ারি। জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির দ-াদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দিয়েছেন আপীল বিভাগ। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ সাজা পুনর্বহালের আরজিতে রাষ্ট্রপক্ষ আর খালাস চেয়ে আসামিপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানিয়েছেন। কিশোরগঞ্জের ৫ রাজাকার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর মোঃ নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও শামসুদ্দিন আহম্মেদসহ পাঁচ রাজাকারের পক্ষে সাফাই সাক্ষী না আসাতে সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়নি। আসামি পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ মার্চ সাফাই সাক্ষী দেয়ার জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ঐ দিন সাফাই সাক্ষী না আসলে প্রসিকিউশন পক্ষ যুক্তিতর্ক শুরু করবে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন এবং প্রসিকিউটর সুলতানা রেজিয়া। অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান। উল্লেখ্য, এই আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৭টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় ৫ আসামির মেধ্য একমাত্র এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহম্মেদ গ্রেফতার হয়েছেন। পলাতক চারজন হচ্ছেন শামসুদ্দিনের ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মোঃ নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও তারা আত্মসমর্পণ করেননি বা গ্রেফতার করা যায়নি। গত ১৩ মে পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, লুণ্ঠন, নির্যাতনের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে। তারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেরগুপ বিল, পীরাতন বিল ও আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ১৫ এপ্রিল এ মামলায় তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। ১৩ এপ্রিল এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেন তদন্ত সংস্থা। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার করিমগঞ্জ মধ্যপাড়া (দুলিপাড়া) গ্রামের মোঃ নাসিরউদ্দিন ও মোঃ শামসুদ্দিনের বাবার নাম মৃত আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি ও মায়ের নাম মৃত লুৎফুন্নাহার লতা। এ দু’জনের মধ্যে বড় ভাই নাসিরউদ্দিন সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই তিনি সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। ২০০২ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি অকালীন বাধ্যতামূলক অবসরে যান। অন্যদিকে ছোট ভাই শামসুদ্দিন কিশোরগঞ্জে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এ মামলার তদন্ত শুরু হয় গত বছরের ৬ জুন। তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান গত বছরের ২৬ নবেম্বর নাসিরউদ্দিন-শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও আরও অধিক তদন্তের জন্য ফেরত পাঠান প্রসিকিউশন। তাদের বিরুদ্ধে ১২ জনকে হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতন ও লুণ্ঠনের ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল সে সময়। এরপর পুনর্তদন্ত শেষ করে গত ১৩ এপ্রিল তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেন তদন্ত সংস্থা।
×