ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নৌচলাচল ঝুঁকিতে

সাগরে অসংখ্য ডুবোচর

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৭ মার্চ ২০১৬

সাগরে অসংখ্য ডুবোচর

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৬ মার্চ ॥ বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চর জেগে ওঠার কারণে উপকূলের সমুদ্রপথ নৌযান চলাচলের জন্য চরম ঝুঁকির কবলে পড়েছে। গভীর সমুদ্রের কোথাও নির্বিঘেœ কোন নৌযান চলাচল করতে পারে না। বিশেষ করে ভাটার সময় স্পিডবোট পর্যন্ত নির্বিঘেœ চালানো যায় না। এছাড়া সাগর মোহনা আন্ধারমানিক ও ঢোস এলাকা দিয়ে সাগরে যাওয়া এবং আসা পর্যন্ত হমকির মুখে রয়েছে। মোহনায় ডুবোচরের কারণে অপরিচিত নৌযান চলাচল করতে গিয়ে আটকে যায়। ট্যুরিস্ট সী-বোটের মালিক সোহেল জানান, ফাতরার বনাঞ্চলে যাওয়ার প্রাক্কালে নতুন করে ডুবোচর জেগেছে। ভাটার সময় অনেকপথ ঘুরে যেতে হয়। সাগর মোহনা লেম্ফুরচর সংলগ্ন এই চরটি জেগে ওঠেছে। জেলেদের সংগঠন আশার আলো মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ জানান, কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পূর্ব-পশ্চিম কোণে দক্ষিণ দিকে সাগরবক্ষে প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল চর পড়েছে। ভাটার সময় সেখানে কোমর-থেকে গলা সমান পানি থাকে। ট্রলার চালাতে সমস্যা হয়। এছাড়া পশ্চিমে আন্ধারমানিক মোহনায় একটি চর জেগেছে, যেখানে ভাটার সময় মাত্র হাঁটু সমান পানি থাকে। কোন নৌযান চালানো যায় না। তিনি জানান, অবস্থা এমন হয়েছে যে সাগর থেকে মাছ ধরে আন্ধারমানিক মোহনায় ঢুকতে গেলে এখন সমস্যা হয়। সাগর থেকে প্রায় পশ্চিম দিকে ৪/৫ কিলোমিটার ঘুরে ফাতড়ার বনের কিনার থেকে বোট চালিয়ে মহীপুর-আলীপুরে আসতে হয়। জেলে আলমগীর দাবি করেন, গত দুই বছরে যেন বেশি বেশি চর জেগে ওঠেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, ২০০৯ সালে কুয়াকাটা এবং তৎসংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা জিও কাইনেটিক্স সুষ্ঠুভাবে তাদের অনুসন্ধান কাজ পরিচালিত করতে পারেনি। এমনকি পূর্বপরিকল্পিত ম্যাপ থেকে একটি সাইসমিক লাইন তখন ডুবোচরের কারণে বাদ দিতে হয়েছে। পরবর্তিতে স্থানান্তর করে নতুন সাইসমিক লাইনে সম্পন্ন করতে হয়। ওই কোম্পানির পাবলিক রিলেশন অফিসার অনুজ চৌধুরী বাবু জনকণ্ঠকে জানান, কূল থেকে প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত অসংখ্য চর জেগে ওঠেছে। যে কারণে তাদের স্পিডবোট পর্যন্ত চলাচলে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তিনি এমন ধারণা দেন যে, কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম থেকে শুরু করে ১৫-২০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্র পর্যন্ত পূর্বদিকের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে জেগে ওঠেছে অসংখ্য চর। জোয়ারের সময় হাঁটু কিংবা কোমর সমান পানিতে ডুবে থাকে চরগুলো। কিন্তু ভাটায় পুরো ল্যান্ড এলাকা জেগে ওঠে। জেলেরা হেঁটে চলাচল করছে। মহীপুর আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা গাজী ফজলুর রহমান জানান, সমুদ্র বক্ষে এত বেশি চর জেগেছে যে বর্ষার সময় তাড়াতাড়ি কিনারে আসা যায় না। তিনি বলেন, ‘এখন ভাটার সময় সাগর থেকে মহীপুরে আসতেই সমস্যা হয়। মাছ ধরে কিনারে ফিরতে সময় অনেক বেশি লাগে।’
×