ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নৌবিহারে একদিন

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৬ মার্চ ২০১৬

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নৌবিহারে একদিন

‘চল না ঘুরে আসি-অজানাতে/যেখানে নদী এসে থেমে গেছে’- নতুন কোন জায়গায় দু’জন মিলে ঘুরে আসা বোধহয় অনেক মজার। কিন্তু এক পরিবারের শত শত সদস্যদের আগমনে উচ্ছ্বসিত হওয়া যেন তার চেয়ে অনেক বেশি মজার। এমন এক অভিজ্ঞতা হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক ঝাঁক নবীন প্রবীণের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম আবর্তন থেকে শুরু করে ৪৩তম আবর্তনের অংশগ্রহণে হয়ে যাওয়া নৌবিহারে। আয়োজনটা চলে অবশ্য ঘটা করেই। অনেক আগ থেকেই চলে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের তোলপাড়। কখনও টি শার্টের ছবি, কখনও লঞ্চের ছবি, কখনও বা আয়োজন করার তাগিদে মিটিংয়ে বসে গল্পের ছলে কাটিয়ে দেয়ার অলস ছবি। কারও বাড়িতে আবার আয়োজনের নামে চলে আড্ডার ধুম, কিছু অন্ন সাবাড় করার পাঁয়তারা! এভাবেই চলে আসে কাক্সিক্ষত সেই দিন। ঘুমটা ভাঙলেই শুরু হয় নৌবিহারে যাওয়ার প্রস্তুতি। এ জন্য নাকি রাতে ঘুমও হয়নি এমন অভিযোগ ৩৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থী কাজী তাসলিমা কাকন, ৪৩ ব্যাচের শহীদ, সাদমান সাকিব ও ফজলে রাব্বিদের। সেদিন ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস ছাড়ে। ক্যাম্পাস থেকেও দুটি। শিশির ভেজা ঘাস মারিয়ে পূর্ব আকাশে সূয্যি মামা উঁকি দেয়ার আগেই ক্যাম্পাসের প্রাণকেন্দ্র ট্রান্সপোর্ট চত্বরে হাজির প্রায় সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। মজার বিষয় হলো আমদের গাড়ি নেই! সে তো নতুন অভিজ্ঞতা। তবে অবশ্য গাড়ি মেলে একটু পড়েই। কারণ যে বাসে যাওয়ার কথা, সে বাস ভুল করে ছেড়ে গেছে সদরঘাটের উদ্দেশে। বাসে উঠেই শুরু হয় প্রিয়জনকে নিয়ে পাশাপাশি সিটে বসার ধুম। যাদের আবার প্রিয়জন নেই তারাও কিন্তু বসে নেই। চলছে মহাসমারোহে গান আড্ডা আর সেলফি তোলার হিড়িক। অবশেষে বাস পৌঁছাল সদরঘাটে। একে একে তিন শতাধিক সদস্য উঠে পড়ল বন্ধন-৫ নামের বড় এক লঞ্চে। সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হলো স্মৃতির পাতা ভারি করার চেষ্টা। ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক আওয়াজ। অনেককে আবার একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও কোলাকুলিতে ব্যস্ত দেখা গেল। জুুনিয়ররা ব্যস্ত বড়দের সঙ্গে পরিচিত হতে। কেউ আবার হাজির হয়েছে পরিবারের ছোট্ট মেহমানটিকে নিয়ে। যাই হোক, অল্প সময়ের মধ্যেই যাত্রা শুরু করে লঞ্চটি। একটু পরেই দেয়া হয় সকালের নাস্তা। নাস্তা শেষে সবাই গিয়ে হাজির লঞ্চের ছাদে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে। অন্যদিকে ক্যামেরা হাতে সবাইকে স্মৃতির ফ্রেমে বাঁধতে ব্যস্ত দেখা গেল আসিফ ফারুক, বর্ষণ, তন্ময়, শাওন, শাহরিক ভাইকে। শুধু আড্ডা গল্প নয়। কথা হয় ক্যারিয়ার নিয়ে বড়দের সঙ্গে ছোটদের। কথা হয় ২৮ ব্যাচের ইয়াসির ভাই, ৩০ ব্যাচের গালিব, ফজলু ভাইসহ অনেকের সঙ্গে। যারা কাজ করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। কথায় কথায় উঠে আসে ক্যারিয়ার গঠনের কথা। আরও উঠে আসে জীবনযুদ্ধের অনেক কাহিনীই। অন্যদিকে ৪৩ ব্যাচের ইসতিয়াক আহমেদকে দেখা গেল ৫ম ব্যাচের মঞ্জুর ভাইয়ের সঙ্গে বেশ মশগুল হয়ে কথা বলতে। পরে জানা যায়, ক্যারিয়ার নিয়ে নাকি নানা কথাই হয় তাদের মাঝে। অন্যদিকে লঞ্চের তিন তলায় চলে স্মৃতিচারণের মহাধুম। আমিন মাসুদ আলী, ফরিদ আহমেদ বাবু, শিপনভাইসহ নামকরা সব শিল্পীদের নস্টালজিক হওয়ার গান -কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আর নেই- আর নেই-লা লা’ গান শুনে অনেকেই হারিয়ে যায় স্মৃতির অতল তলে। পরবর্তী বছরও তারই এমন আয়োজন করতে হবে বলে দাবি পেশ করেন সবাই। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললেন আসফাক মুস্তফা, শিপন ও মনিরুজ্জামান ভাইয়েরা। আবু হায়দার আল মাসুম, কল্লোল ভাই, মেহের, তারেক আনাম সুমন ভাইসহ যারা এমন অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি তাদের দেখা গেল ফেসবুক ওয়ালে নতুন পরিকল্পনা। সামনে কোন দিকে নৌভ্রমণে যাবে? বরিশাল না সেন্টমার্টিন এমন বিতর্ক চলছে বেশ জোরেশোরেই। মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান
×