ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোন সমস্যাই ছোট করে দেখা যাবে না ॥ বিজেপি মুখপাত্র

তিস্তা চুক্তির বল এখন ভারতের কোর্টে ॥ গওহর রিজভী

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৬ মার্চ ২০১৬

তিস্তা চুক্তির বল এখন ভারতের কোর্টে ॥ গওহর রিজভী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন, তিস্তা চুক্তির বল এখন ভারতের কোর্টে। এই চুক্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এছাড়া বিএনপি আমলের চেয়ে এখন সীমান্ত হত্যা অনেক কমে এসেছে বলে তিনি জানান। এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোন সমস্যাকে ছোট করে না দেখতে দু’দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র এম জে আকবর। শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্কের নতুন দিগন্ত’ শীর্ষক এক সংলাপে তারা এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দুই দিনব্যাপী এই সংলাপের শেষ দিনে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ভারতীয় জনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব, ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্র এম জে আকবর, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীনা সিক্রি প্রমুখ। সংলাপে এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, তিস্তা চুক্তির বল এখন ভারতের কোর্টে। ২০১১ সালের চুক্তি অনুযায়ীই তিস্তা চুক্তি হবে। নতুন করে এ বিষয়ে আর কোন দর কষাকষি হবে না। এই চুক্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সংলাপের বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে অনেক গভীর ও বিস্তৃত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। সে কারণে এই সম্পর্কের দিনে দিনে অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি আমলের চেয়ে এখন সীমান্ত হত্যা অনেক কমেছে। বিগত বিএনপি আমলের শেষ বছরে সাড়ে তিন শ’ মানুষকে সীমান্তে হত্যা করা হয়েছিল। এখন আর সে করম নেই। তবে এখন সীমান্ত হত্যা কমলেও আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। সীমান্তে একটি মানুষের মৃত্যুও আমাদের প্রত্যাশিত নয়। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংযোগ বাড়ছে। বিভিন্ন খাতের মধ্যে বিদ্যুত ও জ্বালানি অন্যতম। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে আমরা ভারতের সহযোগিতা নিচ্ছি। ভারতের পাশাপাশি এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। সংলাপে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র এম জে আকবর বলেন, দুই দেশের মধ্যে অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে এই সমস্যার বহরকে ছোট করে দেখা কোনভাবেই উচিত হবে না। কেননা, ইঁদুরের তৈরি মাটির ঢিবি থেকে পাহাড় তৈরি হতে পারে। যে কোন কিছুরই একটি বড় ইস্যু হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা রয়েছে। বিশ্বাস থাকলেই কেবল নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে। দুদেশের মধ্যে স্থল সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা সমস্যা নরেন্দ্র মোদির সরকার আসার পর সমাধান হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে এই বিজেপি নেতা বলেন, তবে নতুন সুযোগ আসছে। যা এক সময় অচিন্ত্যনীয় ছিল তা এখন সম্ভব হচ্ছে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীনা সিক্রি বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে এখন আন্তঃসংযোগ চলছে। কোন দেশই বিচ্ছিন্ন হয়ে বসে থাকতে পারছে না। ভারত ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। আন্তঃসংযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশের এখন আর পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। সে কারণে দুই দেশই আন্তঃসংযোগের ওপর জোর দিচ্ছে। তবে রেল, রোড, বিমান, নৌপথের পাশাপাশি অর্থবাণিজ্যের আন্তঃসংযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল আন্তঃসংযোগও বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সংযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে। সংলাপের নিরাপত্তা পর্বে বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই পক্ষকেই ‘কাঠামোর বাইরে’ এসে চিন্তা করতে হবে। সম্পর্কের গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে উদ্ভাবনীমূলক ও পথনির্দেশক উদ্যোগ যোগ করতে হবে বলে মত দেন তিনি। সম্পর্কের উন্নয়নে উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে এমন কয়েকটি সহযোগিতার ক্ষেত্র তুলে ধরেন সচিব। যার মধ্যে রয়েছে- ব্লু ইকোনমি ও বঙ্গোপসাগরে সহযোগিতা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও আণবিক শক্তি এবং মহাকাশ ও স্যাটেলাইট ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা। শহীদুল হক বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) রূপরেখার আওতায় বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, চরমপন্থা এখন কোন আঞ্চলিক ইস্যু নয়। এটা একটি বৈশ্বিক ইস্যু। সে কারণে বৈশ্বিকভাবেই চরমপন্থার মোকাবেলা করতে হবে। চরমপন্থার সঙ্গে মানুষের বিশ্বাসের বিষয়টিও ভূমিকা রাখছে। মানুষের বিশ্বাসকে পরিবর্তন করা কঠিন। সে কারণে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ দিয়েই চরমপন্থার মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, চরমপন্থা বিকাশে এখন সামাজিক গণমাধ্যমও ব্যবহৃত হচ্ছে। সামাজিক গণমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। সে কারণে চরমপন্থা মোকাবেলায় এ বিষয়েও নজর দিতে হবে বলে তিনি জানান। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক অলোক বনশাল বলেন, চরমপন্থা ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। কেননা, আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে আলকায়েদার অন্যতম শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি ইতোমধ্যেই বলেছেন, আলকায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশে শক্তি বাড়াতে চায়। তারা এই অঞ্চলে সংগঠন বিস্তৃত করতে চায়। এসব মনে রেখেই চরমপন্থা মোকাবেলা করতে হবে।
×