ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কিডনি দিবসের আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা

সচেতন হলে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধযোগ্য

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৬ মার্চ ২০১৬

সচেতন হলে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধযোগ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে প্রায় দু’ কোটি লোক কোন না কোনভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এদেশের শতকরা ১০ জন রোগী এ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। অর্থাভাবে অকালে প্রাণ হারান সিংহভাগ রোগী। তবে একটু সচেতন হলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগের উপস্থিতি ও এর কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা। কিডনিসহ জটিল রোগের ওষুধের দাম কমাতে হবে এবং এসব রোগ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির আমদানিতে কর মওকুফ করতে হবে। কিডনি বিকল রোগীদের জন্য প্রতি ডায়ালাইসিস এর মূল্য ১৫শ’ টাকায় নামিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আসন্ন বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (কাম্পস) আয়োজিত ‘শিশুদের কিডনি রোগঃ শুরুতেই প্রতিরোধ’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে অংশ নেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ হারুন অর রশিদ, বাংলাদেশ রেনাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ ফিরোজ খান, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ হানিফ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস এ্যান্ড ইউরোলজি এর পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ নুরুল হুদা লেনিন, সাবেক বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এর অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সফিকুর রহমান, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী প্রমুখ । গোলটেবিলে বক্তারা বলেন, শুধু জীবনযাত্রার পদ্ধতি পরিবর্তন করে ৬৮ শতাংশ মৃত্যু ঝুঁকি কমানো সম্ভব। প্রতিদিন কম পক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, পর্যাপ্ত ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ও ধূমপানমুক্ত থাকা। এসব অভ্যাস শিশুকাল থেকেই রপ্ত করতে পারলে যে কোন মানুষ সারাজীবন এর সুফল ভোগ করতে পারেন অর্থাৎ সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ওষুধের অনৈতিক মূল্য বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়ম সরকারের নাকের ডগায় ঘটে থাকে, তবুও এদেশের সরকার ঘুমিয়ে আছে। তাইওয়ান, ইরান, কিউবাসহ বেশকিছু দেশে কিডনি বিকল রোগীদের ডায়ালাইসিস বিনামূল্যে করা হয়। এদেশের সরকারের পক্ষে বিনামূল্যে করা সম্ভব নয়, তবে একটি সহনীয় পর্যায়ে এর সেবা মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব। অধ্যাপক ডাঃ হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রাম পর্যায়ের প্রাইমারি হেলথকেয়ার সেন্টারগুলোতে কিডনি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগসহ জটিল রোগের স্ক্রিনিং ও পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করতে পারলে, প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই জটিল রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ও ক্যাম্পস-এর সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ এ গোলটেবিল বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব কিডনি দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কিডনি রোগের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী মানুষকে সচেতন করা ও কিডনি বিকল প্রতিরোধে প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা করা ও সুস্থ জীবন ধারায় সবাইকে অভ্যস্ত করা। শিশুরা অতি সাধারণ চিকিৎসাযোগ্য কিডনি রোগ থেকে শুরু করে মারাত্মক জীবন সংহারী কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
×